ঢাকা, শুক্রবার, ৮ ফাল্গুন ১৪৩১, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২১ শাবান ১৪৪৬

রাজনীতি

কুয়েটে শিবির-বৈষম্যবিরোধীরা হামলা করেছে: ছাত্রদল

ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৫
কুয়েটে শিবির-বৈষম্যবিরোধীরা হামলা করেছে: ছাত্রদল

ঢাকা: খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) হামলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের (বৈবিছা) কথিত শিক্ষার্থী ও ছাত্রশিবিরের ‘সন্ত্রাসীরা’ হামলা করেছে বলে অভিযোগ করেছে ছাত্রদল। এ ছাড়া কেন্দ্র থেকে সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ হামলা মনিটরিং করেছেন বলে অভিযোগ করেছে সংগঠনটি।

 

বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের গেমস রুমে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের নেতারা এসব অভিযোগ করেন। এ সময় কুয়েটের ঘটনাকে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ উল্লেখ করে দুঃখ প্রকাশ করেন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির।  

তিনি বলেন, বাংলাদেশে যত বড় বড় অগ্নিকাণ্ড হয়েছে, তার উৎস ছিল ছোট ছোট শর্ট সার্কিট। গতকাল সেই কাজ শুরু করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মব। নেতৃত্ব দেন আহ্বায়ক ওমর ফারুক। কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটরিং করেন সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ।  

তিনি আরও বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পরে বাংলাদেশে যারা আত্মপ্রকাশ করতে ভয় পেয়েছে, সেই শিবিরের সন্ত্রাসীরা কাল ছাত্রদলের ওপর হামলা চালায়। আহত শিক্ষার্থীরা দোকানে আশ্রয় নিলে দোকানির ওপরও বৈষম্যবিরোধী কথিত শিক্ষার্থী ও শিবিরের সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। পরে গ্রামবাসীর সঙ্গে অনাকাঙ্ক্ষিত সংঘাতের ঘটনা ঘটে। এরপর ছাত্রদলের নামে এক ধরনের মব তৈরি করা হয়েছে।  

তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কথিত শিক্ষার্থী ও শিবিরের সন্ত্রাসীরা প্রথমে হামলা চালায়। বৈষম্যবিরোধী কথিত শিক্ষার্থীরা যদি অংশ না নিত, তাহলে এরকম সংঘাত কখনোই হতো না।

নাছির বলেন, বাংলাদেশের যেকোনো সংগঠনের রাজনীতি করার সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কীভাবে ছাত্রদলের তিনজন নেতার ওপর হামলা করে, সেই প্রশ্ন আমরা রাখতে চাই। শিবিরের কাছে আমরা প্রশ্ন রাখতে চাই, কুয়েটে তাদের কমিটি আছে কি না। গতকাল যে হামলা হয়েছে, তার ব্যাখ্যা দিতে হবে। আর কোনো ক্যাম্পাসে যদি বিনা কারণে হামলার ঘটনা ঘটে, তাহলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে দায় নিতে হবে।

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম বলেন, কুয়েটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ৭ জানুয়ারি কমিটি দেয়। শিবিরের কমিটি রয়েছে বলে আমরা জানি। তারা যদি রাজনীতি করতে পারে, তাহলে কেন ছাত্রদলের ওপর হামলা করা হয়েছে? বৈবিছার আহ্বায়ক ওমর ফারুককে আমরা শিবিরের নেতা হিসেবে জানি।

‘একটা একটা শিবির ধর…’ খুলনায় এ ধরনের স্লোগানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের বিশাল সংগঠন সারা দেশে ছড়িয়ে আছে। তাও আমরা দায় নিচ্ছি। কোনো ঘটনা অস্বীকার করছি না। আমরা কিন্তু ব্যবস্থা নিচ্ছি। কেউ যদি এ ধরনের কোনো স্লোগান দিয়ে থাকে, আমরা তাদের নিবৃত করব।

হামলার ঘটনায় যা বলছে ছাত্রদল

ছাত্রদল জানায়, এরইমধ্যে ছাত্রদলের তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি সরেজমিনে তদন্তের জন্য ঘটনাস্থলে গিয়েছে। তাদের প্রতিবেদন ও পুলিশি বা প্রশাসনিক তদন্ত প্রতিবেদন আসার আগে পর্যন্ত কোনো পক্ষ থেকেই কোনো উপসংহার টানা সম্ভব বা সমীচীন নয়।

তবে লিখিত বক্তব্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ওমর ফারুক হামলার সূত্রপাত ঘটান বলে অভিযোগ করেন ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব।  

তিনি বলেন, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের বয়ান, সংবাদমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন, ছবি ও ভিডিও প্রমাণের ভিত্তিতে আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি, গতকালের এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সূত্রপাত হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে একটি মিছিল থেকে কতিপয় ছাত্রদল সমর্থকের ওপর অতর্কিত হামলার মধ্যদিয়ে।  

তিনি আরও বলেন, সেই মিছিল থেকেই ধারণকৃত একটি ভিডিওতে দেখা যায় যে, যখন ভুক্তভোগী সেই শিক্ষার্থীরা ক্লাস শেষে মিছিলটির পাশ দিয়ে যাচ্ছিল, তখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুয়েট কমিটির আহ্বায়ক মো. ওমর ফারুকের প্রত্যক্ষ উসকানিতে কতিপয় মিছিলকারী তাদের ওপর অতর্কিত হামলার সূচনা করে।

ছাত্রদল সভাপতি বলেন, ভুক্তভোগীদের বয়ান অনুযায়ী তাদেরকে ধাওয়া দিয়ে ও মারধর করে কুয়েট গেটের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয় এবং গেটের কাছে একটি দোকানে আশ্রয় নিলে সেই দোকানিকেও হেনস্তা করা হয়। এর জবাবে সেই দোকান মালিকের পরিচিত কিছু স্থানীয় লোকজন সশস্ত্র হামলা চালায় সেই মিছিলকারীদের ওপর।  

দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা-ধাওয়া চলে, কুয়েটের গেট হয়ে উঠে এক রণক্ষেত্র। প্রায় ঘণ্টাখানেক ধরে সেই এলাকায় চলে ন্যক্কারজনক সহিংসতা। সেই সহিংসতায় জড়িত কতিপয় স্থানীয় দলীয় কর্মীকে এরইমধ্যেই বহিষ্কার করা হয়েছে বলে আমরা দেখেছি। তবে তাদের কেউই ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে জড়িত নন এবং ছাত্রদলের ইন্ধনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানোর কোনো কারণও তাদের নেই।

তিনি বলেন, সহিংসতায় ছাত্রদলের সমর্থকেরা কেবল ভুক্তভোগী হিসেবে জড়িত বলেই এখন পর্যন্ত জানা গেছে। তাদের তিনজনই কুয়েটের সম্মান কোর্সের নিয়মিত শিক্ষার্থী। যেহেতু কুয়েটে ছাত্রদলের কোন কমিটি গঠিত হয়নি এবং এখনো কুয়েট ক্যাম্পাসে সদস্য ফরম পূরণ কার্যক্রমও শুরু হয়নি, সেহেতু তারা তিনজন ছাত্রদলের নিবন্ধিত কর্মীও নয়। তাই তাদের কেন্দ্র করে ঘটা কোনো ঘটনাকে ‘ছাত্রদলের হামলা’ শীর্ষক ঘটনা হিসেবে প্রচার করা সর্বৈবভাবে মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত একটি কাজ।

রাকিব বলেন, এসব উসকানিমূলক বেআইনি কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত প্রায় সবাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটির নেতা এবং কমিটির আহ্বায়ক মো. ওমর ফারুক ছাত্রদলের সেই তিনজন সমর্থককে ‘ধর! ধর’ বলে প্রথম তেড়ে যান। কুয়েটে ১১ আগস্ট থেকে প্রশাসনিকভাবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ থাকলেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটি ঘোষণার পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে কুয়েট প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি, সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে কোন মবও তৈরি হয়নি।

এ ঘটনার পর ছাত্রদলের নামে অপপ্রচার চালানো হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এই সব ঘটনার ধারাবাহিকতার পরিপ্রেক্ষিতেই গতকাল কুয়েটে যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে, সেটি নিয়ে অনলাইনে ও অফলাইনে সত্য ঘটনাকে আড়াল করে অপপ্রচারের মাধ্যমে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নামে যে মিথ্যা অপবাদ চারদিকে ছড়ানো হচ্ছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের সংগঠনের নৈতিক ও রাজনৈতিক অবস্থান ব্যাখ্যা করার বিষয়টি অতি জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৫
এফএইচ/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।