ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

‘নৌকাওয়ালারা পালানোর জন্য জায়গা পাবে না’ বলা আ.লীগ নেতাকে স্বপদে বহাল 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০২৩
‘নৌকাওয়ালারা পালানোর জন্য জায়গা পাবে না’ বলা আ.লীগ নেতাকে স্বপদে বহাল 

নরসিংদী: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নরসিংদী-১ (সদর) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থীর মতবিনিময় সভায় ‘নৌকাওয়ালারা পালানোর জন্য জায়গা পাবে না’ বলা মাধবদী থানা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলামকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অব্যাহতি দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা মধ্যেই স্বপদে বহাল করেছেন সাধারণ সম্পাদক।  

মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জি এম তালেব হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক পীরজাদা কাজী মোহাম্মদ আলী স্বাক্ষরিত পৃথক চিঠির মাধ্যমে সিরাজুল ইসলামকে অব্যাহতি ও বহাল করা হয়।

এবারের নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নৌকার প্রার্থী মো. নজরুল ইসলাম হীরুর পক্ষে কাজ করলেও সাধারণ সম্পাদক স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান কামরুলের পক্ষে কাজ করছেন।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জি এম তালেবের স্বাক্ষরিত চিঠিতে জানানো হয়, আসন্ন সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী মো. নজরুল ইসলাম হিরুর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী কামরুজ্জামানের সভায় সিরাজুল ইসলাম হুমকি প্রদান করেন যে, ’নৌকাওয়ালারা পালানোর জন্য জায়গা পাবে না’ যা মিডিয়ায় ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারিত হয়। যা দলের ভাবমূর্তি বিনষ্ট, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ, দলীয় নেতাকর্মী ও জনসাধারণের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। এমন অবস্থায় তাকে সাংগঠনিক বিরোধী কার্যক্রমের কারণে মাধবদী থানা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হলো। আর স্থায়ী বহিষ্কার কেন করা হবে না আগামী ৭ দিনের মধ্যে জবাব দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।

এর কয়েক ঘণ্টা পর সাধারণ সম্পাদক পীরজাদা কাজী মোহাম্মদ আলী স্বাক্ষরিত আরেক চিঠিতে জানানো হয়, আসন্ন সংসদ নির্বাচনে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও প্রতিযোগিতামূলক করার লক্ষ্যে দলীয় প্রার্থীর পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা ও সমর্থনের বিষয়ে দলীয়ভাবে কোনো বিধিনিষেধ নেই। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ কোনো সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়নি বিধায় সব নেতাকর্মীরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও সমর্থন তাদের নিজস্ব অধিকার। এবিষয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না বিধায় সিরাজুল ইসলামকে অব্যাহতি প্রদানের সিদ্ধান্ত সভাপতির একক ও ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত যা গ্রহণযোগ্য বা কার্যকর নয়। আপনি স্ব-পদে বহাল রয়েছেন।

এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তালেব হোসেন বলেন, সাধারণ সম্পাদক স্বতন্ত্র প্রার্থীর হয়ে কাজ করছেন। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রার্থীর পক্ষ হয়ে কথা বলছেন। সিরাজুল ইসলামের বক্তব্য নৌকার হুমকি, নেত্রীর হুমকি ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের জন্য হুমকি এজন্য তাকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পীরজাদা কাজী মোহাম্মদ আলী বলেন, এককভাবে কোনো মিটিং না ডেকে কাউকে অব্যাহতি দেওয়া সভাপতির অধিকারে নেই। তিনি আমার সঙ্গে কোনো পরামর্শ করেনি আর কোনো মিটিং ও ডাকে নাই। এককভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে তিনি অব্যাহতি দিয়েছেন। নেত্রীর সিদ্ধান্ত ছাড়া আমরা কাউকে অব্যাহতি দিতে পারি না।

উল্লেখ্য, গত বুধবার (৬ ডিসেম্বর) দুপুরে মাধবদী পৌরসভা মিলনায়তনে স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুজ্জামান কামরুলের মতবিনিময় সভা হয়। সেখানে সদর আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম হিরুর (বীর প্রতীক) লোকজনকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনারা যখন জানবেন মাধবদীর মেয়র মোশারফ হোসেন স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল ভাইয়ের জন্য নামছেন, তখন কেউ বাঁধা দিয়ে রাখতে পারবেন না। কাল থেকে নৌকাওয়ালারা পলাইবার জন্য জায়গা পাবে না। এই বক্তব্য শুনে উপস্থিত লোকজন হাসাহাসি শুরু করলে তিনি নিজের বক্তব্য সংশোধন করে বলেন, নৌকা বলি না আমরা হীরুর নৌকা বলি, হীরু.. হীরু..। হীরুর লোকেরা পলাইবার জায়গা ইনশাল্লাহ পাবেনা। ৭ তারিখে যে জাগরণ সৃষ্টি হবে এই নরসিংদীতে এই জাগরণের পরিণতিতে কামরুল ভাই (স্বতন্ত্র প্রার্থী) বিপুল ভোটে জয়ী হবে।

মাধবদী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলামের এমন হুমকিমূলক বক্তব্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীর মধ্যে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে শুরু হয় পক্ষে বিপক্ষে আলোচনা-সমালোচনা।  এর ভিডিও চিত্র জাতীয় গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।  

যার পরিপ্রেক্ষিতে জনৈক মালিক মোহাম্মদ রাজিব নামে এক ব্যক্তি রিটার্নিং অফিসার বরাবর একটি অভিযোগ দাখিল করেন।  

এরই প্রেক্ষিতে নরসিংদী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সংসদীয় আসনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা আসমা সুলতানা নাসরীন গতকাল বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) রাতে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেন। নোটিশে এই বক্তব্যের মাধ্যমে নির্বাচনী আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, জানতে চাওয়া হয়েছে।  

নোটিশ পাওয়ার দুই দিনের মধ্যে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে তাকে হাজির হয়ে লিখিতভাবে কারণ দর্শানোর জন্য বলা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১১০৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০২৩
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।