ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

দোতলা পদ্মাসেতুর ওপরে চলবে গাড়ি, নিচে ট্রেন

সজিব তৌহিদ, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২, ২০১৭
দোতলা পদ্মাসেতুর ওপরে চলবে গাড়ি, নিচে ট্রেন পদ্মাসেতুর এই স্প্যানের ওপর দিয়ে চলবে গাড়ি, নিচ দিয়ে ট্রেন, ছবি: দীপু মালাকার

মাওয়া-জাজিরা ঘুরে এসে: সবকিছু ঠিক থাকলে ২০১৮ সালের শেষ দিকে যানবাহনের জন্য পদ্মাসেতু খুলে দেওয়ার কথা রয়েছে। সেতু চালু হলে ঐতিহাসিক ঘটনার পাশাপাশি দেশের মাটিতে প্রথমবারের মতো নতুন এক দৃশ্যেরও অবতারণা হবে।

আর সেটি হলো একই সেতুর ওপরতলা দিয়ে চলবে গাড়ি, নিচ দিয়ে ট্রেন। সে অর্থে পদ্মাসেতু হচ্ছে দেশের প্রথম দোতলা সেতু।

সেতুতে সাতটি মডিউলে ৪১টি স্প্যান সংযুক্ত থাকবে (স্প্যান বলতে বোঝায়- এক পিলার থেকে অন্য পিলারের মধ্যবর্তী অংশ)। যা স্থাপিত হবে ৪২টি পিলারের ওপর।

এক পিলার থেকে আরেক পিলারের দূরত্ব এবং প্রতিটি স্প্যানের দৈর্ঘ্য ১৫০ মিটার, আর স্প্যানের প্রস্থ ১২ মিটার। ছয়টি শক্তিশালী পাইলের সমন্বয়ে পদ্মাসেতুর এক-একটি পিলার তৈরি হচ্ছে। আর মূল সেতুর দৈর্ঘ্য হবে ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ।

মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় পদ্মার বুকে ভাসছে চীন থেকে আনা এই শক্তিশালী ক্রেন, ৩০ ডিসেম্বর ছবিটি তুলেছেন- দীপু মালাকারমাওয়া অংশে পদ্মার পাড়ে অ্যাসেম্বলি ওয়ার্কশপে ইতোমধ্যে ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের এবং ৩ হাজার টন ওজনের একটি স্প্যান প্রস্তুত রয়েছে। এমন আরও চারটি স্প্যান তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এসব স্প্যান নদীর পাড় থেকে সরিয়ে পিলার ওপর বসাবে ৩ হাজার ৬০০ টন ওজন বহনের ক্ষমতা সম্পন্ন শ্বেত দৈত্যকার ক্রেন। যা চীন থেকে সাগরে ভাসিয়ে শেষ পর্যন্ত আনা হয়েছে পদ্মায়।

পদ্মাসেতু নির্মাণে চলছে মহাকর্মযজ্ঞ, ছবি: দীপু মালাকারসেতু নির্মাণ বাস্তবায়নে মন্সীগঞ্জের মাওয়া ও শরীয়তপুরের জাজিরাসহ আশপাশ এলাকায় চলছে কর্মযজ্ঞ। রাত-দিন কাজ করে যাচ্ছেন শ্রমিক, প্রকৌশলী ও বিশেষজ্ঞরা। শুক্রবার (৩০ ডিসেম্বর) সরেজিমনে গিয়ে পদ্মাসেতু প্রকল্পের প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আবদুল কাদেরের সঙ্গে কথা হয় বাংলানিউজের।

তিনি জানান, পদ্মাসেতুর কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে। শীত মৌসুমে নদীতে পানি কম থাকায় মূল সেতু নির্মাণের কাজের সঙ্গে নদীশাসনের কাজটি জোর দিয়ে করা হচ্ছে। বিভিন্নস্থানের ড্রেজিংয়ের কাজটাও সেরে ফেলা হচ্ছে।

মাওয়া অংশে অ্যাসেম্বল ওয়ার্কশপ, ছবি: দীপু মালাকারবর্তমানে তারা পিলারের ওপরে স্প্যানগুলো বসাতে বেশি মনোযোগ দিয়েছেন। খুব শিগগিরই স্প্যানগুলো পিলারের বসানোর ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানান তিনি।

দেওয়ান আবদুল কাদের জানান, পদ্মাসেতুর ৬, ৭, ৩৪, ৩৫, ৩৬, ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০ ও ৪১ নম্বর পিলারের কাজ চলছে। এরমধ্যে ৩৭ এবং ৩৮ নম্বর পিলারে ছয়টি করে পাইল ও টিউব লাগানো সম্পন্ন হয়েছে।

অ্যাসেম্বলি ওয়ার্কশপে কম্পিউটারাইজড পদ্ধতিতে সব কাজ চলছে বলে বাংলানিউজকে জানান প্রকল্প সেতু নির্মাণ প্রকল্পের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ হুমায়ূন কবির।

এমন অত্যাধুনিক প্রযুক্তি এবং যন্ত্রপাতি দেশের আর কোনো সেতু নির্মাণে ব্যবহার হয়নি বলেও জানান তিনি।

সেতু নির্মাণ কাজে ব্যস্ত শ্রমিকরা, ছবি: দীপু মালাকারএদিকে, পদ্মার ওই পাড়ে জাজিরায় সার্ভিস এরিয়ার প্রস্তুত করা হচ্ছে। আর এপারে মাওয়ায় জাদুঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনা ও সৌন্দর্য বধর্নের কাজ চলছে। ২০২১ সাল নাগাদ পদ্মসেতু জাদুঘরটি সবার জন্য উন্মুক্ত করা হবে জানান জাদুঘরটির তত্ত্বাবধায়ক আনন্দ দাস।

সব মিলিয়ে এগিয়ে চলছে পদ্মাসেতুর নির্মাণ কর্মযজ্ঞ। এভাবে চলতে থাকলে স্বপ্নের সোনালি রংয়ের পদ্মাসেতু আর অধরা নয়..

আরও পড়ুন...

**পদ্মাসেতুর সঙ্গে চলছে মুন্সীগঞ্জ-মাওয়া ফোর লেন সড়কের কাজ

** পদ্মাসেতুর ১১ কিমি জাজিরা সংযোগ সড়ক প্রস্তুত

** সোনালী স্বপ্নের স্বর্ণরঙা সেতু আর নয় বেশি দূর

** পাথর ভাঙ্গার শব্দে স্বপ্ন বুনন পদ্মায়

** স্বপ্ন সেতুর আলিঙ্গনে!

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০২, ২০১৭
টিআই

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।