সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে: বিজয়ের আনন্দে মেতে ওঠা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ছবির হাটে নিভৃতচারী চিত্রশিল্পী এম এ সাগর খান অরুণ মুক্তিযুদ্ধ এবং মানুষের জীবন যুদ্ধের ছবি এঁকে চলেছেন। মুক্তিযুদ্ধে আনন্দ-বেদনার নানা স্মৃতি পেন্সিলের আঁচড়ে তুলে ধরছেন তিনি।
রাজবাড়ী সুইপার কলোনির ফেকুরাম চৌদ্দপুরুষের পেশায় জীবন কাটিয়েছেন। মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত বার বারই চেয়েছেন নিজেকে বদলাতে। মেথর পরিচয় বদলে সমাজের আর পাঁচজন মানুষের মতো সমাজে চলার প্রত্যাশা বুকে নিয়ে ঘুরেছেন আটষট্রি বছর। সংগ্রাম করেছেন সুইপারদের মানুষ ভাবার সমাজ তৈরির প্রত্যয়ে। কিন্তু পারেননি ফেকুরাম।
রাজবাড়ী সদরের এম এ সাগর খান অরুণ ফেকুরামের জীবনের এ চিত্র তুলে ধরে বাংলানিউজকে বলেন, ফেকুরাম আজীবন সংগ্রাম করছেন সমাজের কল্যাণে। আমি ফেকুদের জীবনের গল্পটা বদলাতে কিছু কাজ করি। যারা সমাজের জঞ্জাল পরিষ্কার করে মানুষের জীবনকে সুন্দর করে দেয় তাদের জন্য এই বিজয়ের দিনে আর সব ছবির সঙ্গে ফেকুর ছবিটি নিজে হাতে এঁকেছি (পেন্সিল স্কেস)। ফেকুরাও যেন বিজয়ের দিনে আর সবার মতোই আনন্দে বিজয় উল্লাস করতে পারে।

চিত্রশিল্পী অরুণ বলেন, দেশ ভাগের সময় ফেকুরা এসেছিল পশ্চিমবঙ্গ থেকে পূর্ববাংলার রাজবাড়ীতে। স্বদেশি আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন চৌদ্দ বছরের তরুণ ফেকু। ফেকুর বৃদ্ধ বয়সে বাঙালির স্বাধীনতার লড়াইয়ের কথা শুনেছি তার মুখে। স্বদেশী আন্দোলন গেছে, তারপর স্বাধীনতা আন্দোলনে বাঙালি তার আত্মপরিচয় তৈরি করে নিয়েছে। ফেকু মারা গেছে কিন্তু ফেকুদের (সুইপারদের) মূল্যায়ন হয়নি।
স্বাধীনতা আন্দোলনে ফেকুরামদের মতো অনেক মানুষের অবদান রয়েছে। আজ তারাও চায় বিজয়ের আনন্দের দিনে আর পাঁচজনের মতো আনন্দ করুক। তারা আজও তা পারছে না। হয়তো কিছু উন্নতি হয়েছে। সমাজে এখনও তারা প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি। তাই বিজয়ের পেন্সিলে ফেকুর ছবি এঁকে অন্য ফেকুদের জীবন যুদ্ধের কথা তুলে ধরতে চাই, যোগ করেন চিত্রশিল্পী অরুণ।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৬
আরএটি/এমজেএফ/