ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ফিরে দেখা ২০১৫

বিদেশি হত্যায় আইএসের দায় স্বীকার নিয়ে প্রশ্ন

নুরুল আমিন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯১২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৫
বিদেশি হত্যায় আইএসের দায় স্বীকার নিয়ে প্রশ্ন

ঢাকা: দেশে বিদেশি নাগরিকর হত্যার ঘটনা ছিলো ২০১৫ সালের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা। এসব হত্যাকাণ্ডের পরপরই কূটনীতিক চাপে পড়ে ঢাকা।

আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটস (আইএস) হত্যার দায় স্বীকার করেছে বলে খবর প্রকাশ করে ‘সাইট ইন্টিলিজেন্স’ নামের একটি ওয়েবসাইট।

তবে আইএসের নিজস্ব ওয়েবসাইটে এ স্বীকারের বিষয়টি আসেনি।

বিদেশি নাগরিক হত্যাকাণ্ড সুপরিকল্পিত উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবরই বলেছেন, আইএসের কোনো অপৎপরতা বাংলাদেশে নেই। বরং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র চলছে। এসব হত্যাকাণ্ডে বিএনপি-জামায়াতের মদদ রয়েছে।
 
বাংলাদেশে আইএসের কোনো অস্তিত্ব নেই বলে দাবি করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালও।
 
বিদেশি নাগরিক হত্যার ঘটনা ষড়যন্ত্রের অংশ বলে মন্তব্য করেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহিদুল হক।

ঢাকায় ইতালির নাগরিক তাবেলা সিজার হত্যা
২৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা। গুলশান-২ এর গভর্নর হাউজের পাশের সড়কে দুবৃর্ত্তদের গুলিতে নিহত হন ইতালির নাগরিক তাবেলা সিজার। সিজার ঢাকায় নেদারল্যান্ডস ভিত্তিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আসিসিও-বিডি এর প্রকল্প ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।   এ ঘটনার দু’দিনের মাথায় এ হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে আইএস।
 
ঘটনার প্রায় ১ মাস পর ২৬ অক্টোবর সিজার হত্যাকাণ্ডের রহস্যের জট খোলার দাবি জানায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। সন্দেহভাজন চার হত্যাকারীকে গ্রেফতারের পর সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি’র কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, সরকারকে চাপে ফেলতে কথিত বড় ভাইয়ের নির্দেশে তাবেলা সিজারকে হত্যা করেন গ্রেফতারকৃতরা। ওই বড় ভাই একটি রাজনৈতিক দলের নেতা। বড় ভাই তাদের হত্যার জন্য ভাড়াটে খুনি হিসেবে ব্যবহার করেন।

কথিত সেই ‘বড় ভাইয়ের’ নাম না বললেও পরবর্তীতে  বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, বিএনপি নেতা আবদুল কাইয়ুমের নির্দেশেই হত্যাকাণ্ডটি ঘটানো হয়েছে। তিনি দেশের বাইরে রয়েছেন। তবে বেনাপোল সীমান্ত থেকে তার ছোট ভাইকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

রংপুরে জাপানি নাগরিককে হত্যা
৩ অক্টোবর রংপুরের আলুটারি গ্রামে জাপানি নাগরিক হোশি কুনিওকে হত্যা করে মুখোশধারী দুর্বৃত্তরা। একইভাবে ঘটনার পরপরই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে আইএস। বরাবরের মতো এবারো ‘সাইট ইন্টিলিজেন্স’ আইএসের সংশ্লিষ্টতা স্বীকার করলেও বিষয়টি অস্বীকার করে সরকার।

হত্যাকাণ্ডের দিন বিকেলে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয় হোশি কুনিওর ব্যবসায়িক সহযোগী হুমায়ুন কবির হীরা ও রংপুর মহানগর বিএনপি নেতা রাশেদুন্নবী খান বিপ্লবকে। পরে তাদের গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ডে নেয় পুলিশ।

অবশেষে এ ঘটনায় জেএমবির মাসুদ রানাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকেই এ হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এছাড়াও রংপুরে সহিংসতা ও হামলার  প্রত্যেকটি ঘটনায় সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততার কথাও স্বীকার করেন রানা।

উত্তরায় তাইওয়ানের দম্পতিকে হামলা
৫ নভেম্বর রাতে ঢাকার উত্তরায় তাইওয়ানের দুই নাগরিকের বাসায় ঢুকে হামলা করে দুবৃর্ত্তরা। এতে আহত হন লিচি ক্লাই ও তার স্ত্রী লিলি হু। পুলিশ জানায়, ওই দুই নাগরিক ১০ বছর ধরে বাংলাদেশে বসবাস করছিলেন। তাদের একটি ছোট কারখানাও রয়েছে।

পুলিশের ভাষ্য মতে, কারখানার শ্রমিকদের বেতন বাবদ ঘটনার দিন বৃহস্পতিবার ব্যাংক থেকে ছয় লাখ টাকা উত্তোলন করেন তারা। ওই টাকার জন্যই হামলাকারীরা হয়তো এ বাসায় প্রবেশ করেছিলেন। এ ঘটনায় জাহাঙ্গীর নামে এক কর্মচারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

দিনাজপুরের পাদ্রি পিয়েরোকে হত্যা চেষ্টা
১৮ নভেম্বর সকালে দিনাজপুরের মির্জাপুরে পিয়েরো পারোলারি সামিওকে গুলি করে দুর্বৃত্তরা। পিয়ারো ইতালির নাগরিক। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে প্রথমে দিনাজপুরে এবং পরবর্তীতে ঢাকার সিএমএইচে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তিনি আশঙ্কামুক্ত রয়েছেন।
 
এ হামলার দায়ও স্বীকার করে আইএস।   ঘটনা তদন্ত করে শরিফুল ইসলাম নামের এক জেএমবি সদস্যকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরবর্তীতে শরিফুল এ হামলার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

 জানা গেছে, পিয়ারো ১৯৮৫ সালে দিনাজপুর হাসপাতালে যোগ দেন। সেখানে তিনি একটানা কাজ করেন ২৩ বছর। ২০০৮ সালে দিনাজপুর সেন্টভিসেন্ট হাসপাতালে যক্ষ্মা রোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে যোগ দেন তিনি। এটিই ছিল তার সর্বশেষ কর্মস্থল।

চিকিৎসাসেবার পাশাপাশি ডা. পিয়েরো পাদ্রি সেবায় জড়িত ছিলেন। তিনি দিনাজপুর শহরের সুইহারি ক্যাথলিক মিশন চার্চের ফাদার। দুই দফায় ১৫ বছর ধরে তিনি এ মিশনে কর্মরত আছেন।

উত্তরায় জাপানি নারীর অস্বাভাবিক মৃত্যু ও দাফন
আগস্ট মাসে জাপানি নাগরিক হিরোয়ি মিয়াতোকে অপহরণ করেন জাকির পাটোয়ারী রতন নামে তার ব্যবসায়িক পার্টনার। ১৯ নভেম্বর তাকে খুন করা হয়।

হিরোয়ি মিয়োতা উত্তরার ৬ নম্বর সেক্টরে ১৩বি নম্বর সড়কের ৮ নম্বর হোল্ডিংয়ে সিটি হোমস নামে এক ডরমেটরিতে থাকতেন। পুলিশ জানায়, আগস্ট মাসে তাকে সেখান থেকে অপহরণ করে ভাটারা থানা এলাকার এক বাসায় রাখেন রতন। জাপানি দূতাবাস থেকে মৌখিকভাবে জানানোর পর ১৯ নভেম্বর উত্তরা পূর্ব থানায় হিরোয়ি নিখোঁজ থাকার বিষয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। অনুসন্ধানের চারদিন পর প্রযুক্তির মাধ্যমে পুলিশ নিশ্চিত হয় ওই জাপানি নারী খুন হয়েছেন। পরে জাকিরকে ভারত থেকে আটক করে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনে সিআইডি।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৯১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৫
এনএ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।