ঢাকা, শনিবার, ৮ চৈত্র ১৪৩১, ২২ মার্চ ২০২৫, ২১ রমজান ১৪৪৬

জাতীয়

প্রতিশ্রুতিতেই কেটেছে ৫৩ বছর...

মেহেদী নূর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩০ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০২৫
প্রতিশ্রুতিতেই কেটেছে ৫৩ বছর... বাঁশের সাঁকো

ব্রাহ্মণবাড়িয়া: স্বাধীনতা লাভের ৫৩ বছরেও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার ছেত্রা নদীর ওপর গড়ে ওঠেনি একটি পাকা সেতু। তাই নদীর দুই পাড়ের দুটি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষের চলাচলের ভরসা ৭শ ফুট দৈর্ঘ্যের বাঁশের সাঁকো।

 

শুষ্ক মৌসুমে বাঁশের সাঁকো আর বর্ষা মৌসুমে নৌকা নিয়ে দুর্ভোগের সঙ্গে চলাচল করতে হচ্ছে গ্রামবাসীকে। অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে ক্রমেই পিছিয়ে পড়ছে অরুয়াইল ও পাকশিমুল ইউনিয়নের অন্তত ২০টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষের শিক্ষা, কৃষিসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন।

সরেজমিন দেখা যায়, ছেত্রা নদীর ওপর নড়বড়ে অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে প্রায় ৭শ ফুট লম্বা ও ৫ ফুট প্রস্থের অরুয়াইল-পাকশিমুল সংযোগ সাঁকো। এ সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ হাজার মানুষের চলাচল। স্থায়ী সেতুর অভাবে শুষ্ক মৌসুমে নিজস্ব অর্থায়নে গড়া বাঁশের সাঁকোই ভরসা ২০টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষের। হেঁটে চলাচলের পাশাপাশি মোটরসাইকেল ও বাইসাইকেল ছাড়া আর কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারে না নড়বড়ে এই সাঁকো দিয়ে। তাই বছরের কার্তিক মাস থেকে জৈষ্ঠ্য মাস পর্যন্ত ৮ মাস গ্রামবাসীকে সাঁকো দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই পারাপার হতে হচ্ছে। বাকি চার মাস বর্ষা মৌসুমে চলাচল করতে হয় নৌকায় করে। এতে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি গ্রামবাসীদের ভোগান্তির যেন শেষ থাকে না।  

স্থানীয়দের আক্ষেপ বিভিন্ন সময় জনপ্রতিনিধিরা প্রতিশ্রুতি দিলেও তার প্রতিফলন ঘটেনি। এছাড়াও বিগত সময়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নিলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। স্থায়ী পাকা সেতু না থাকায় শিক্ষা, কৃষিসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন থেকে অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে এই অঞ্চলের মানুষ। এ অবস্থায় দ্রুত সেতু নির্মাণের দাবি তাদের।  

স্থানীয় বাসিন্দা মনসুর আহমেদ বলেন, ছেত্রা নদীর ওপর একটি সেতুর দাবি দীর্ঘদিনের। বিগত সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কিন্তু বাস্তবায়িত হয়নি। পাকা সেতু না থাকার কারণে গ্রামবাসী ও শিক্ষার্থীদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বিশেষ করে অসুস্থ ও গর্ভবতী নারীদের দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া যায় না। একটি সেতুর অভাবে লাখো মানুষের দুর্ভোগ থাকলেও তা থেকে পরিত্রাণে নেই তেমন কোনো দৃশ্যমান কার্যক্রম। আমরা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে অনুরোধ করব জনগণের দুর্ভোগ লাঘবে দ্রুত যেন সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।  

জিল্লু মিয়া নামে এক ব্যক্তি বলেন, ব্রিজের জন্য বহুবার আবেদন-নিবেদন করা হয়েছে কিন্তু কোনো ফলাফল আসছে না। হতভাগা ২০টি গ্রামের মানুষের ভাগ্য কবে ফিরবে তা কেউ বলতে পারে না।  

শিক্ষার্থী নাঈম আহমেদ বলেন, শুষ্ক মৌসুমে আমরা বাঁশের সাঁকো দিয়ে চলাচল করি আবার বর্ষা মৌসুমে পানি বেড়ে গেলে সাঁকো খুলে ফেলা হয়। তখন নৌকা দিয়েই আমাদের চলাচল করতে হয়। অথচ সেতুটি নির্মাণ হলে আমাদের সকলের যাতায়াতে গতি আসতো।  

এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ এমদাদুল হক বলেন, জনদুর্ভোগ লাঘবে এবং হাওরবেষ্ঠিত এই এলাকার জীবনমান উন্নয়নে জনগুরুত্ব বিবেচনা করে ছেত্রা নদীর ওপর সেতু নির্মাণে একটি প্রকল্পের প্রস্তাবনা জমা দেওয়া হয়েছে। যা অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। অনুমোদন পেলে স্থায়ী সেতু নির্মাণে উদ্যোগ নেওয়া হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ০৮২০ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০২৬
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।