ঢাকা, বুধবার, ৫ চৈত্র ১৪৩১, ১৯ মার্চ ২০২৫, ১৮ রমজান ১৪৪৬

জাতীয়

পুলিশকে বাঁচাতে হলে,মব বন্ধ করতে হবে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩৯ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০২৫
পুলিশকে বাঁচাতে হলে,মব বন্ধ করতে হবে

ঢাকা: আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে গত সোমবার (১৭ মার্চ) পুলিশের মাঠ পর্যায়ের ১২৭ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সঙ্গে বিশেষ বৈঠকে দেশ গড়ার ক্ষেত্রে পুলিশের অপরিসীম গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, পুলিশকে অবহেলা করে দেশ গড়া যাবে না। আইনশৃঙ্খলা পুলিশের হাতেই বাস্তবায়ন করতে হবে।

আমরা পুলিশকে অবহেলা করে দেশ গড়তে পারব না। তারাই সম্মুখসারির মানুষ। প্রধান উপদেষ্টার এ কথার এক দিন পরেই মব জাস্টিস শিকার হলেন খিলক্ষেত থানা পুলিশ। পুলিশের গাড়িতে থাকা এক ধর্ষককে গণধোলার পাশাপাশি উত্তেজিত জনতার হামলায় আহত হলে সাতজন পুলিশ সদস্য।

মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) রাতে খিলক্ষেত বাজার এলাকায় পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর ও পুলিশের উপর হামলার ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, পুলিশ খবর পেয়ে জান মিয়াকে ধর্ষণের অভিযোগে তাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসছিল। পরে খিলক্ষেত বাজার এলাকায় এলে বিক্ষুব্ধ জনতা পুলিশের গাড়িতে হামলা চালায়। এতে পুলিশের সাত সদস্য আহত হন। খিলক্ষেত মধ্যপাড়া এলাকায় এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে এক তরুণকে মারধর করা হচ্ছে- এমন সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়।

তিনি জানান, অভিযুক্ত তরুণকে আটক করে থানায় নিয়ে আসার পথে বিক্ষুব্ধ জনতা পুলিশের গাড়িতে হামলা চালায়। একপর্যায়ে তাকে পুলিশের গাড়ি থেকে নামিয়ে নেয় এবং মারধর করে। পরে উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের ওপরও হামলা চালায় বিক্ষুব্ধ জনতা।

খিলক্ষেত থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল হোসেন জানান, হামলায় থানার পরিদর্শক আশিকুর রহমান আশিকসহ সাতজন আহত হয়েছেন। পুলিশ সদস্য আশিক গুরুতর আহত।

এদিকে গুলশান বিভাগের এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, দেশের মানুষকে শান্তিতে রাখার জন্য পুলিশ ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য অক্লান্ত চেষ্টা করে যাচ্ছে অথচ বারবার মব জাস্টিসের শিকার হচ্ছে পুলিশ। মব জাস্টিস' বন্ধ না হলে পুলিশের ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব নয়।

বেশ কয়েকদিন যাবত ব্যাপক পুলিশের তৎপরতার কারণে রাজধানীতে ছিনতাই ডাকাতিসহ অনেক অপরাধ কমে গিয়েছে। আজকে খিলক্ষেতের ঘটনাটি পুলিশের মনোবলে আঘাত করেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ কয়েকটি ভিডিও দেখা যায় যে পুলিশের গাড়িতে উঠে জনতা লাফালাফি করছে এবং ধর্ষণের অভিযোগ এক যুবককে গণধোলাই দেওয়া হচ্ছে। বারবার পুলিশের উপর হামলা হচ্ছে। জুলাই আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের  পরে থানায় থানায় হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশের মনোবল একেবারেই ভেঙে পড়ে। সেই পুলিশের মনোবল গত ছয় মাসে ধীরে ধীরে ফিরে আসছে। গত ছয় মাসে পুলিশ বাহিনীর মোটামুটি একটা প্লাটফর্মে এসে দাঁড়িয়েছে। অথচ এই পুলিশের উপরেই বারবার হামলা হচ্ছে।

গত সোমবার (১৭ মার্চ) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সেই বৈঠকে  প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর চাপ ও মব বৃদ্ধির কারণে পুলিশের স্বাভাবিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

জুলাই অভ্যুত্থানে কেবল দোষী পুলিশ সদস্যদের বিচারেরর মুখোমুখি করে বাকি পুলিশ সদস্যদের নির্বিঘ্নে কাজ করা সুযোগ দিতে হবে। তবেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। ’

বৈঠকে থাকা এক পুলিশ কর্মকর্তা, নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, 'প্রধান উপদেষ্টা নিবার্চনের জন্য পুলিশকে প্রস্তুত হতে বলেছেন। কিন্তু আমরা বলেছি, মাঠপর্যায়ে পুলিশ যেভাবে মার খাচ্ছে, তাতে খুব দ্রুত পুলিশের ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব নয়। এছাড়া রাজনৈতিক দলগুলোর নানামুখী চাপে পুলিশের স্বাভাবিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে মবের উপদ্রব। পুলিশকে বাঁচাতে হলে, মব বন্ধ করতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২২১৭ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০২৫
এজেডএস/এমএম 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।