বরগুনা: বরগুনার বেতাগী উপজেলার বিষখালী নদীর মোহনায় সর্বশেষ জেগে ওঠা ‘ঝোপখালী পাখির চর’। ছোট-বড় বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী, উদ্ভিদের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে এখানকার জীববৈচিত্র্য।
সরেজমিনে দেখা গেছে, জোয়ারের সময় চরটি পানিতে প্রায় পূর্ণ হয়ে যায়। এ সময় নৌকায় করে উপভোগ করা যায় এখানকার পাখির কলতান ও বিস্তৃত বনাঞ্চলের সবুজের সমারোহ।
বিষখালী নদীর অব্যাহত ভাঙনে দিন দিন বিলীন হয়ে যাচ্ছে দক্ষিণের এ জনপদ। ফলে জেগে ওঠা নতুন চর দেখে জনমনেও জেগে ওঠে সীমাহীন আশা। তারা নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখে এসব চরকে ঘিরে। ঝোপখালীর চরকে ঘিরেও এখানের জনজীবনে জেগে উঠেছে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন। বিষখালী নদীর বুক চিরে আগামী দশকে এখানে আরো ভূমি জেগে ওঠার সম্ভাবনা দেখছেন স্থানীয় অধিবাসীরা। তাদের সামনে এখন নতুন ভূখণ্ডের হাতছানি।
রোববার দুপুরে ‘ঝোপখালী পাখির চর’ পরিদর্শন করেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম সচিব খোন্দকার নাজমুল হুদা শামিম। নতুন বাংলাদেশের’ স্বপ্ন দেখাতে নান্দনিক সৌন্দর্য ও পর্যটকদের আকর্ষণে ‘ঝোপখালী পাখির চর’ পরিদর্শন করেন।
পরিদর্শনকালে তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বেতাগী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. বশির গাজী, উপজেলা প্রকৌশলী শেখ তৌফিক আজিজ, সাপ্তাহিক বিষখালী সম্পাদক আব্দুস সালাম সিদ্দিকী, বেতাগী প্রেসক্লাবের সভাপতি সাইদুল ইসলাম মন্টু।
পরিদর্শন শেষে যুগ্ম সচিব নাজমুল হুদা শামীম তার প্রতিক্রিয়ায় ‘ঝোপখালী পাখির চর’কে আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুলতে সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন।
স্থানীয়রা বলছেন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা দক্ষিণের এ চরের প্রকৃতি দেখে মুগ্ধ হবেন যে কোনো ভ্রমণপিয়াসী। হয়তো তারা অনেকেই জানেন না ঘুরে বেড়ানোর জন্য তার এলাকায় এমন একটি সুন্দর জায়গা রয়েছে। পাখির কলতান ও সবুজের সমারোহে আর ছৈলা গাছের ডালে ডালে পাখির বাসা যেন ভ্রমণপিয়াসী পর্যটকদের মনকে আলোড়িত করে।
প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের বরগুনা জেলা সন্বয়কারী হাসানুর রহমান ঝন্টু বলেন, আমার গ্রামের বাড়ি ঘেঁষেই প্রচুর সম্ভবনাময় এ স্পটটি এখনো উন্মোচিত হয়নি। দেশ তো দূরের কথা এমনকি এলাকার মানুষের কাছেই অজানা। এ জন্য উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় প্রশাসন সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
স্থানীয়রা মনে করেন, সরকারি নজরদারি আর পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এখানে গড়ে উঠতে পারে একটি পর্যটন স্পট।
বেতাগী প্রেসক্লাবের সভাপতি সাইদুল ইসলাম মন্টু বলেন, মানুষকে সচেতন এবং সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে উদ্যোগী করে তুলতে পারলে এখানে পর্যটন অবকাঠামো গড়ে উঠবে। এ থেকে সরকারের বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় হতে পারে।
বেতাগী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. বশির গাজী বলেন,পাখিদের আশ্রয়স্থল ঝোপখালীর চরকে আকর্ষণীয় ও দৃষ্টিনন্দন করে গড়ে তুলতে উপজেলা প্রশাসন থেকে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। এমনিতেই বড় সম্ভাবনার দ্বার হিসেবে ভ্রমণপিয়াসীদের জন্য ‘ঝোপখালী পাখির চর’। অবশ্য এর সঙ্গে যোগ হয়েছে চর লাগোয়া বেতাগী পৌরশহর থেকে ঝোপখালী, ছোট ছোপখালী পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার বিষখালী নদীর ভাঙনরোধে নদীশাসনের কাজ চলায় ওই এলাকা এখন দৃষ্টিনন্দন বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। খুব কাছ থেকে নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য সেখানে প্রতিদিন মানুষ ভিড় জমাতে শুরু করেছেন।
এর আগে গত ১৬ জানুয়ারি বেতাগী উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ চরের নামকরণের ফলক ও জাতীয় পতাকা উড়িয়ে চরটির শুভ সূচনা করা হয় এবং ২০২১ সালে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা ট্রলার যোগে বিষখালী নদীর ঝোপখালী মোহনায় জেগে ওঠা ওই চরটি আবিষ্কার করেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৭১৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৫
জেএইচ/এএটি