রংপুর থেকে: ‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’ স্লোগানে তিস্তার পানির নায্য হিস্যা আদায় ও মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে টানা ৪৮ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচিতে উত্তাল তিস্তাপাড়। কর্মসূচির প্রথম দিন তিস্তা সড়কসেতু ও রেলসেতুর মধ্যে বালুচরে জনস্রোত নেমেছে।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুর থেকে শুরু হওয়া এই অবস্থান কর্মসূচি চলবে টানা ৪৮ ঘণ্টা। এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিস্তাপাড়ের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর দাবি বাস্তবায়নে চাপ প্রয়োগ করাই এই আন্দোলনের মূল লক্ষ্য। একই সাথে বিশ্ব পরিমণ্ডলে তিস্তার দুঃখ তুলে ধরা হবে এই কর্মসূচির মাধ্যমে। দুপুরের আগেই তিস্তার বুকে তৈরি করা হয় মঞ্চ, সম্পন্ন হয় যাবতীয় প্রস্তুতি। কর্মসূচি বাস্তবায়নে তিস্তার বুকে মঞ্চ তৈরির পাশাপাশি খাবারের ব্যবস্থা, তাঁবু টানিয়ে রাত্রিযাপনের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
এদিকে সমাবেশে অংশগ্রহণকারীদের চোখে-মুখে ছিল ক্ষোভ আর আশার এক অদ্ভুত মিশ্রণ। ফলে একদিকে তিস্তা নদী যেমন মৃত্যুর প্রহর গুনছে, অন্যদিকে এই নদীর তীরেই জেগে উঠেছে জনতার অদম্য সংহতি।
নদী না থাকলে তাদের ঘরও নেই, এমন আক্ষেপ ঝরে পড়ল অনেকের কণ্ঠে। তিস্তার চরে সমাবেশে আসা কুলাঘাট ইউনিয়নের বাসিন্দা কৃষক মো. আফসার আলী (৬০) বলেন, একসময় এই নদীই ছিল আমাদের অন্নদাতা। এখন দেখুন, বালু আর পাথর। দুই ফসলি জমি এখন মরুভূমি।
আনুষ্ঠানিকভাবে অবস্থান কর্মসূচি শুরু হবার আগে সরেজমিনে তিস্তার তীর ঘেঁষে চলা সড়ক দিয়ে এগোতেই চোখে পড়ল ভুতুড়ে দৃশ্য। জলশূন্য খাল, ফাটল ধরা কৃষি জমি, নদীর বুকে জমে থাকা শেওলা। যেখানে নদীর পানি বয়ে যাওয়ার কথা, সেখানে পানির অভাবে নদীর মাঝে হচ্ছে কৃষি কাজ। ফসলি জমিতে পর্যাপ্ত পানির অভাবে ধান, আলু, বাদামসহ কয়েক পদের সবজি চাষ হচ্ছে এই নদীর তীরে।
সমাবেশে আসা লালমনিরহাটের স্থানীয় বাসিন্দা কৃষক মজনু মিয়া বলেন, নদী ফিরে পেলে তারা আবারও স্বপ্ন দেখবেন। আজকের এই জমায়েতই প্রমাণ, তিস্তা মরেনি, মরতে দেওয়া হবে না।
তিস্তা চুক্তি ও মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে তিস্তা পাড়ের ৫ জেলার ২৩০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ‘জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই’ শীর্ষক ৪৮ ঘণ্টার কর্মসূচি আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় বেলা ৩টার দিকে। জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে এই কর্মসূচি উদ্বোধন করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের ব্যানারে এই কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আন্দোলন কর্মসূচির অংশ হিসেবে তিস্তা নদী বেষ্টিত লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, রংপুর ও গাইবান্ধা জেলার ১১টি পয়েন্টে সমাবেশ, পদযাত্রা, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা করবে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন।
এর মধ্যে রংপুরের কাউনিয়া রেলসেতু ও গঙ্গাচড়া মহিপুর বাজার সংলগ্ন তিস্তা নদীর বুকে রংপুরের কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।
এই টানা অবস্থান কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ১৮ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় ৫ জেলার ১১টি পয়েন্টে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হবেন। এ ছাড়া বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা সংহতি জানাতে তিস্তাপাড়ে এসেছেন।
অবস্থান কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন স্পটের সমাবেশে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি স্থায়ী কমিটি সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, শামসুজ্জামান দুদু, জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক এবং গণসংহতি আন্দোলন প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি প্রমুখ।
কর্মসূচির উদ্বোধন করতে গিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগ ১৫ বছরে বাংলাদেশকে বেঁচে দিয়েছে। কিন্তু তিস্তার একফোঁটা পানি আনতে পারে নাই। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ৫৪টা নদী আছে, প্রত্যেকটা নদীতেই তারা বাঁধ বসিয়ে রেখেছে। একদিকে ভারত আমাদের পানি দেয় না, অন্যদিকে বাংলাদেশের শত্রু হাসিনাকে তারা বসিয়ে রেখেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৫
ইএসএস/এমজেএফ