ঢাকা, রবিবার, ২৮ পৌষ ১৪৩১, ১২ জানুয়ারি ২০২৫, ১১ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

পাউবো-ঠিকাদারের অবহেলায় হুমকির মুখে তিস্তা ব্যারাজ ও সরকারি বাংলো

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০২৫
পাউবো-ঠিকাদারের অবহেলায় হুমকির মুখে তিস্তা ব্যারাজ ও সরকারি বাংলো

নীলফামারী: নীলফামারীর ডিমলায় তিস্তা নদী সেচ প্রকল্পের প্রধান সেচ নালার পলিমাটি অপসারণের নামে কয়েক সপ্তাহ ধরে পাঁচটি অবৈধ বোমা মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ঠিকাদার।  

ফলে ব্যারাজ নিয়ন্ত্রণকক্ষ, তিস্তা ব্যারাজ, সেচ প্রকল্প, সরকারি পরিদর্শন বাংলোসহ নদী তীরবর্তী স্থাপনা ও পরিবেশের ভারসাম্য মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

পাউবো সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের নদী-খাল-পুকুর খনন প্রকল্পের আওতায় তিস্তার সেচ প্রকল্পের প্রধান খালে (সিল্টা ট্রপ) সেচ নালায় জমে থাকা পলিমাটি অপসারণে খননকাজ শুরু করেছে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড। ২৯ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে মেসার্স সাইকি বিল্ডার্স নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।  

সরেজমিনে দেখা গেছে, তিস্তা সেচ প্রকল্পের প্রধান খালে (সিল্ট ট্রাপ) ৫টি নিষিদ্ধ বোমা মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। বালু উত্তোলনের স্থান থেকে প্রায় ২০০ মিটার পশ্চিমে পরিদর্শন বাংলো, উত্তর-পূর্বে তিস্তা ব্যারাজ নিয়ন্ত্রণকক্ষ ও তিস্তা ব্যারাজ অবস্থিত। ইতোমধ্যেই বালু উত্তোলনের জায়গাগুলোতে তৈরি হয়েছে ২৫ থেকে ৩০ ফুট গভীরতা। অন্যদিকে উত্তোলিত বালু তিস্তা ব্যারাজের ভাটিতে ফেলা হচ্ছে, যা নদীর স্বাভাবিক গতিপথ পরিবর্তনের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব কারণে সেচ নালার পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং প্রকল্পের কার্যকারিতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।



স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রায় চার সপ্তাহ ধরে তিস্তা ব্যারাজ ২০০ মিটার দূরত্বে চলছে নালা খননের নামে বালু উত্তোলন। ভূগর্ভস্থ বালু উত্তোলনের ফলে খালের তলদেশে প্রায় ২৫-৩০ ফুট গভীরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আশপাশের স্থাপনাগুলোর স্থিতিশীলতাকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে। এতে নালার দুই পাড় দেবে বাঁধ ও সিসি ব্লক ধসে যেতে পারে। নদীর পানি বাড়লেই সেচ প্রকল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে। প্রকল্পের পরিবেশ ও কার্যক্রমের ওপর দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঠিকাদারের যোগসাজশে এই অবৈধ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

মো. জহুরুল ইসলাম (৩০) নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘বালু তোলার উদ্দেশ্যে দায়সারাভাবে নালা খননের কাজ চলছে। এর আগেও বোমা মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করায় ভেঙে পড়েছে সেচ প্রকল্পের প্রধান খালসহ বিস্তীর্ণ এলাকা। ’



তিস্তা ব্যারেজের কাছে ঘুরতে আসা সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থী নাঈম আহমেদ (২২) বলেন, ‘তিস্তা ব্যারেজ ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা লাগোয়া জায়গায় এভাবে পরিবেশ বিধ্বংসী বোমা মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন চলতে থাকলে স্থাপনাগুলো চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। এছাড়া সেচ প্রকল্পের দুই পাড় দেবে বাঁধ ও সিসি ব্লক ধসে যেতে পারে। ’

ওই প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সাইকি বিল্ডার্সের প্রোপাইটর এএইচএম সাইফুল্লাহ বলেন, ‘বোমা মেশিন ব্যবহারের কোনো বৈধতা নেই। তবে অনেক সময় জরুরি প্রকল্পের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে বিশেষ পরিস্থিতিতে এটি ব্যবহার করতে হয়। তারপরও, আইন অনুযায়ী বোমা মেশিন সম্পূর্ণ অবৈধ। ’

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী বলেন, ‘নিজস্ব ড্রেজার না থাকায় পলিমাটি অপসারণের জন্য আপাতত বোমা মেশিন ব্যবহার করা হচ্ছে। আমাদের ড্রেজার ক্রয়ের প্রক্রিয়া চলমান। বাইশপুকুর এলাকায় ভাঙন রোধে ড্রেজিং করা মাটি তিস্তা নদীর ভাটিতে ভরাট করা হচ্ছে। ড্রেজার না আসা পর্যন্ত এই পদ্ধতি চালু রাখতে হচ্ছে। ’

এ প্রসঙ্গে ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রাসেল মিয়া বলেন, ‘বিষয়টি দ্রুত খতিয়ে দেখে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরিবেশ ও স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৩৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০২৫
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।