হবিগঞ্জ: টাকার প্রয়োজনে জমি বিক্রি করতে চেয়েও করতে পারছেন না হবিগঞ্জ সদর উপজেলার পাঁচপাড়িয়া গ্রামের নূর মিয়া। ভূমি অফিসে সার্ভার জটিলতায় খাজনা (ভূমি উন্নয়ন কর) নেওয়া হচ্ছে না বিধায় তিনি ক্রেতাকে জমি রেজিস্ট্রি করে দিতে পারছেন না।
একইভাবে আরও দুইজন ভুক্তভোগী হবিগঞ্জ শহরের উত্তর শ্যামলী এলাকার সাংবাদিক নজরুল ইসলাম ও বানিয়াচং গ্যানিংগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী মো. ইয়ামিন মিয়া।
এই তিনজন জানান, তাদের নিজ নিজ ইউনিয়ন ভূমি অফিসে কয়েকবার গিয়েও খাজনা পরিশোধ করতে পারেননি। ফলে জমির দাম নির্ধারণ হয়েছে, কিন্তু অল্প টাকা খাজনা বাকি থাকায় ক্রেতাকে রেজিস্ট্রি করে দিতে পারছেন না।
জেলার উপজেলা ও ইউনিয়নে পর্যায়ে থাকা ৪৬টি ভূমি অফিসে একই অবস্থা। দায়িত্বরতরা ভূমি ব্যবস্থাপনা ও অটোমেশন প্রকল্পের সার্ভারে ধীরগতির অজুহাত দেখিয়ে খাজনা গ্রহণ করছেন না। ফলে ভূমির ক্রেতা ও বিক্রেতারা বিপাকে পড়েছেন।
স্বাভাবিক সময়ে একেকটি উপজেলা ভূমি অফিসে দৈনিক দেড় থেকে দুইশ’ দলিল রেজিস্ট্রি হত, কিন্তু সেখানে এখন ১০ থেকে ১৫টি হচ্ছে মাত্র।
হবিগঞ্জ পৌর ভূমি অফিস থেকে জানা যায়, স্বাভাবিক সময়ে এখানে দিনে অন্তত ৪০ জন সেবাগ্রহীতার খাজনা নেওয়া হত। আর এখন দিনে ৩ থেকে ৪ জনের বেশি লোককে এই সেবা দেওয়া যাচ্ছে না। বাকিরা হতাশ হয়ে ফিরছেন।
নজরুল ইসলাম এক মাস ধরে ভূমি অফিসে আসা-যাওয়া করেও খাজনা পরিশোধ করতে পারেননি।
তিনি বলেন, ‘সরকার এত টাকা ব্যয় করে সবকিছু আধুনিকায়ন করেছে কিন্তু দুর্ভোগ কমেনি। ভূমি অফিসে দায়িত্বরতদের অবহেলা লোকজনকে সুফলবঞ্চিত করছে। ’
জেলা রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের দলিল লেখক মোহাম্মদ আলী চিশতি জানান, তার ২০ জন গ্রাহক জমি কেনাবেচার বায়না করেছেন। কিন্তু খাজনা রশিদের অভাবে রেজিস্ট্রি হচ্ছে না, তাই পুরো লেনদেনও করা যাচ্ছে না।
তিনি আরও জানান, জেলা রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে রোজ দেড় থেকে দুইশ’ দলিল রেজিস্ট্রি হয়। আর এখন মাত্র ১০ থেকে ১৫টি হচ্ছে। লোকজন আসছেন না।
একই তথ্য দিলেন বানিয়াচং উপজেলা সাবরেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক তৌহিদুর রহমান পলাশ। তিনি বলেন, আগে দৈনিক দেড় শতাধিক দলিল হত। এখন ৮/১০টির বেশি হচ্ছে না। আমরা গ্রাহকদের নিয়ে বিপাকে পড়েছি।
যোগাযোগ করা হলে সদর উপজেলা ভূমি অফিসের তহসিলদার মো. বদরুল আলম বলেন, জেনারেশন-১ থেকে সার্ভারকে জেনারেশন-২তে উন্নীত করা হয়েছে। ফলে ধীরগতিতে কাজ হচ্ছে। আশা করি শিগগির সমস্যা সমাধান হবে।
জানা যায়, ভূমি ব্যবস্থাপনা ও অটোমেশন প্রকল্পের আওতায় গত ২৬ নভেম্বর থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে সার্ভারে সিস্টেম উন্নীতকরণের কাজ শুরু হয়। পরে চালু হলেও কিছু জটিলতায় ভূমি অফিসগুলোতে ভূমি উন্নয়ন কর আদায় ও নামজারী কার্যক্রম বন্ধ থাকে।
এ ব্যাপারে বানিয়াচং উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. সাইফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘সফটওয়্যার হালনাগাদের কারণে কিছু জটিলতা দেখা দিয়েছে বিধায় ভূমি উন্নয়ন কর আদান-প্রদান ও নামজারীর কাজে গতি কমেছে। দ্রুতই এর সমাধান হবে।
এদিকে, ভূমি ব্যবস্থাপনা ও অটোমেশন প্রকল্পের পরিচালক ইফতেখার হোসেন সম্প্রতি মাঠ পর্যায়ে দায়িত্বরতদের এ সমস্যার জন্য দোষারোপ করেন।
তিনি গণমাধ্যমকে বলেছেন, সার্ভারের আপগ্রেডেশন কাজ শেষে কিছু জটিলতা থাকলেও তা ডিসেম্বরের প্রথম দিন চালু করে দেওয়া হয়। এখন স্থানীয় তহসিলদার ও দায়িত্বরতরা তাদের অজ্ঞতা ও অনাগ্রহের কারণে সেবাগ্রহীতাদের ফেরত দিচ্ছেন। সার্ভারে প্রবেশ করতে হয়তো একটু সময় লাগছে, এজন্য তারা সেবাগ্রহীতাদের বলে দিচ্ছেন সার্ভার বন্ধ।
ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধে এত দুর্ভোগে তহসিলদার এবং কার্যালয়ে কর্মরতদের গাফিলতির রয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে হবিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) প্রিয়াংকা পাল বাংলানিউজকে বলেন, ‘দায়িত্বরতরা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে থাকেন, আমার মনে হয় সার্ভারে ধীরগতির কারণেই দুর্ভোগ বেড়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৫, ২০২৫
আরএ