ঢাকা, সোমবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বকেয়া পরিশোধের আশ্বাস, কাজে ফিরছেন ন্যাশনাল চা বাগানের শ্রমিকরা

ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২, ২০২৪
বকেয়া পরিশোধের আশ্বাস, কাজে ফিরছেন ন্যাশনাল চা বাগানের শ্রমিকরা

মৌলভীবাজার: ন্যাশনাল চা কোম্পানির (এনটিসি) ১২টি বাগানে (ফাঁড়ি বাগানসহ ১৯টি) চা শ্রমিকরা আগামী বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) থেকে কাজে ফিরবেন। চা শ্রমিকরা মজুরি না পেয়ে টানা ৩৭ দিন ধরে কর্মবিরতি পালন করে আসছিলেন।

এর ফলে এ বাগানগুলো অচল হয়ে পড়ে।

এ কর্মবিরতির মধ্যে তাদের দাবি ছিল- বকেয়া মজুরি দেওয়া ও শ্রমিকদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রত্যাশা বাস্তবায়ন। এগুলোর আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে ন্যাশনাল চা কোম্পানির সবকটি বাগানের চা শ্রমিকরা কাজে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

সোমবার (২ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল বাংলানিউজকে এ তথ্য জানান।

সূত্র জানায়, চা শ্রমিকরা নিজ নিজ বাগানে কাজে যোগদানের সিদ্ধান্ত এসেছে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক থেকে। সম্প্রতি মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল শ্রম অধিদপ্তর কার্যালয়ে চা শ্রমিকদের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা ও ন্যাশনাল চা কোম্পানির যৌথ বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। রোববার (১ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিত এ  বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ন্যাশনাল চা কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহমুদ হাসান, এনটিসির মহাব্যবস্থাপক এমদাদুল হক, ডিডিএল নাহিদুল ইসলাম এবং বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের (বাচাশ্রই) ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল, চা শ্রমিক নেতা রামভজন কৈরিসহ অনেকে।  

নিপেন পাল বলেন, চা শ্রমিক প্রতিনিধি, চা বাগান পরিচালনা প্রতিনিধি এবং সরকারি অধিদপ্তরের প্রতিনিধি এ তিনপক্ষের যৌথ বৈঠকে চা বাগানগুলো দ্রুত রান করানোর (চালু) প্রস্তাবটিকে সবাই সম্মতি দেন। শ্রমিকদেরও লস হচ্ছে আর বাগান কর্তৃপক্ষের তো হচ্ছেই। সর্বোপরি দেশের ক্ষতি হচ্ছে। এ দিকগুলো সার্বিকভাবে বিবেচনা করে সীমিত পরিমাণে শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি দেওয়ার পরের দিনই বাগান চালুর প্রতিশ্রুতি আসে।

এক্ষেত্রে দুই সপ্তাহের বকেয়া মজুরি প্রায় ২ হাজার ২০০ টাকা করে শ্রমিকদের দেওয়া হবে।

বৈঠকের সিদ্ধান্ত উল্লেখ করে এ চা শ্রমিক নেতা বলেন, আগামী বৃহস্পতিবার কাজে যোগ দেওয়ার প্রথম দিন শ্রমিকদের ২ সপ্তাহের বকেয়া মজুরি দেওয়া হবে। মাসিক বেতনধারী শ্রমিকদের ১ মাসের বেতন দেওয়া হবে। এখন থেকে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন নিয়মিত পরিশোধ করা হবে। বাগানের কর্মচারীদের ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে ১ মাসের বেতন দেওয়া হবে। এছাড়া বাগান বন্ধের দিনগুলোতে চা শ্রমিকদের রেশন কাটা হবে না।

বোনাস ও বার্ষিক ছুটির দিন গণনার ক্ষেত্রে বাগান বন্ধের দিনগুলো অনুপস্থিত দেখানো হবে না। এদিকে অবশিষ্ট বকেয়া মজুরি আগামী ২০২৫ সালের মার্চ এর মধ্যে পরিশোধ করা হবে। একইসঙ্গে ২০২৫ সালের ৭ এপ্রিলের মধ্যে প্রভিডেন্ট ফান্ডের বকেয়া চাঁদা পরিশোধ করা হবে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের চা শ্রমিক ইউনিয়েনের পক্ষ থেকে শ্রমিকদের আরও বেশি মজুরি দেওয়ার দাবি ছিল। কিন্তু বাগান কর্তৃপক্ষ তো দিতে পারছে না। শ্রমিকরা প্রায় ৩ মাস আন্দোলন করছেন। কেউ কেউ না খেয়ে ছিলেন। আবার খালি হাতে কাজে ফিরবে এটা তো অমানবিক। তাই আমাদের জোর দাবি ছিল কাজে ফেরার আগেই তাদের বকেয়া যতটুকু সম্ভব দিতে হবে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত এসেছে। অন্তত খাওয়া-দাওয়া করে শ্রমিকরা কাজে ফিরতে পারবেন।

এনটিসির ফাঁড়ি চা বাগানসহ ১৯টি চা বাগানে নারী-পুরুষ মিলিয়ে প্রায় ১২ হাজার শ্রমিক কর্মরত আছেন। সে হিসেবে শ্রমিক প্রতি দুই সপ্তাহের মজুরি ২ হাজার ২০০ টাকা করে প্রায় ২ কোটি ৬৪ লাখ টাকার প্রয়োজন হবে বলে জানান নিপেন পাল।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০২, ২০২৪
বিবিবি/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।