ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

শেখ হাসিনাকে কোন আইনে, কবে ফেরত চাইবে বাংলাদেশ?

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০২৪
শেখ হাসিনাকে কোন আইনে, কবে ফেরত চাইবে বাংলাদেশ?

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ার পর ভারত তাকে ‘ট্রাভেল ডকুমেন্ট’ দিয়েছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যম জানিয়েছে। ট্রাভেল ডকুমেন্ট প্রদান করায় শেখ হাসিনাকে বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তির মাধ্যমে তাকে দেশে ফিরিয়ে কঠিন হবে কি না সেই প্রশ্নও উঠেছে বিভিন্ন মহলে।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন দুই দিন আগে এ বিষয়ে বলেছেন, ভারত শেখ হাসিনাকে ট্রাভেল ডকুমেন্ট দিলে তা ঠেকানোর কোনো উপায় নেই।

দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে হত্যা-গণহত্যাসহ নানা অভিযোগে দুই শতাধিক মামলাও হয়েছে। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটার তাজুল ইসলাম বলেছেন, বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুযায়ী ভারত শেখ হাসিনাকে ফেরত দিতে বাধ্য।

বাংলাদেশ কবে শেখ হাসিনাকে ফেরত চাইবে এ বিষয়ে তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর আদালত যদি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে তখনই শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেবে বাংলাদেশ।

সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির সংশয়ের কথা জানিয়ে বলেন, বর্তমান ভারত সরকারের সঙ্গে শেখ হাসিনার যে সম্পর্ক রয়েছে সেদিক বিবেচনা করলে বাংলাদেশের ফেরত চাওয়া খুব বেশি কাজে নাও আসতে পারে। কারণটা শুধুমাত্র রাজনৈতিক।

ভারতের সঙ্গে বন্দি বিনিময় চুক্তি:


ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ‘প্রত্যর্পণযোগ্য অপরাধের মামলায় অভিযুক্ত বা ফেরারি আসামি ও বন্দিদের একে অপরের কাছে হস্তান্তরের জন্য ২০১৩ সালে একটি চুক্তি হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তির নামে মামলা বা অভিযোগ দায়ের হয় বা তিনি দোষী সাব্যস্ত হন অথবা দেশের আদালত কর্তৃক প্রত্যর্পণযোগ্য অপরাধ করার জন্য ফেরত চাওয়া হয়, তাহলে তাকে ফেরত দেবে বাংলাদেশ ও ভারত। প্রত্যর্পণযোগ্য অপরাধ বলতে চুক্তিতে সর্বনিম্ন এক বছরের কারাদণ্ড হয় এমন অপরাধকে বলা হয়েছে। এর মধ্যে আর্থিক অপরাধও রয়েছে। তবে কোনো অপরাধ প্রত্যর্পণযোগ্য হওয়ার জন্য দ্বৈত অপরাধের নীতি অবশ্যই প্রযোজ্য হবে। তার অর্থ হলো অপরাধটি অবশ্যই দুই দেশে শাস্তিযোগ্য হতে হবে।

সাবেক কূটনীতিক এম হুমায়ুন কবির এ বিষয়ে বলেন, ভারতের যে প্রত্যর্পণ চুক্তি আছে সে অনুযায়ী কেউ যদি কোনো অন্যায় করে আইনিভাবে দোষী সাব্যস্ত হন, ওইরকম ব্যক্তিবর্গ যদি বাংলাদেশ বা ভারতে আশ্রয় নেয় তাহলে উভয় দেশ চুক্তি অনুযায়ী তাকে দেশে ফেরত পাঠাতে পারে।

এই চুক্তিতে আরও বলা হয়েছে, অপরাধটি ‘রাজনৈতিক প্রকৃতির’ হলে যে কোনো দেশ প্রত্যর্পণের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করতে পারবে। তবে হত্যা, নরহত্যা বা অপরাধমূলক হত্যা, আক্রমণ, বিস্ফোরণের কারণ, জীবন বিপন্ন করার উদ্দেশ্যে বিস্ফোরক পদার্থ বা অস্ত্র তৈরি বা নিজের কাছে রাখাসহ বেশ কিছু অপরাধকে রাজনৈতিক বলার সুযোগ নেই।

চুক্তি অনুযায়ী শেখ হাসিনাকে কি ফেরত পাওয়া যাবে:


২০১৩ সালের ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তিতে ২০১৬ সালে সংশোধন করা হয়। এতে হস্তান্তরের প্রক্রিয়াকে বেশ সহজ করা হয়।

সংশোধিত চুক্তির ১০ এর (৩) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো অভিযুক্তের হস্তান্তর চাওয়ার সময় অনুরোধকারী দেশকে সেই সব অভিযোগের পক্ষে কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ পেশ না করলেও চলবে, শুধু সংশ্লিষ্ট আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পেশ করলেই সেটিকে বৈধ অনুরোধ হিসেবে ধরা হবে।

গত দুই মাসে যে ধরনের অপরাধে মামলা দেওয়া হয়েছে, তার প্রেক্ষিতে শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠাতে পারে ভারত।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক সাহাব এনাম খান এ বিষয়ে বলেন, চুক্তি থাকলেও শেখ হাসিনার লাইফ থ্রেট, রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ার কোনো শঙ্কা থাকলে তাকে ফেরত দেওয়ার আগে ভারত অবশ্যই সেটা ভাববে।

সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বলেন, আদালত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলেও তাকে ফেরত দেওয়ার ক্ষেত্রে ভারতের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের দরকার হতে পারে। অর্থাৎ আইন ও রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের মধ্যে সমন্বায়ক হলেই কেবল শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠাতে পারে ভারত।

শেখ হাসিনাকে কবে ফেরত চাইতে পারে সরকার:


শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধে মামলা হলেও তাকে ফেরত আনার ক্ষেত্রে এখনও কোনো মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়নি।

এখনও কেন কোনো মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হলো না কিংবা তাকে ফেরত আনার উদ্যোগ নেওয়া হলো না, সেই প্রশ্নের জবাবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, এর প্রধান কারণ হচ্ছে আমাদের ট্রাইব্যুনাল গঠন না হওয়া। ট্রাইব্যুনালের বিচারক নিয়োগের পর আদালতের কার্যক্রম শুরু হলেই পরবর্তী প্রক্রিয়া শুরু হবে। সেটি শিগগিরই হচ্ছে।

তিনি বলেন, কোর্ট বসলে প্রথম দিনই আমরা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আদেশ চাইবো। কোর্ট যদি তাকে গ্রেপ্তারের ইনিশিয়াল অর্ডার দেন তখন তাকে ফেরত আনতে আমরা কুটনৈতিক তৎপরতার পাশাপাশি প্রয়োজনে ইন্টারপোলের সহযোগিতা চাইবো।

সরকার চাইলেই শেখ হাসিনাকে ফেরত পাবে কি-না, এ বিষয়ে সাবেক হুমাযুন কবির বলেন, চুক্তি অনুযায়ী আইনগতভাবে ভারতের কাছে বাংলাদেশ অনুরোধ করতেই পারে। কিন্তু এখানে ভারতেরও রাজনৈতিক বোঝাপড়ার অনেক বিষয় আছে।

ট্রাভেল ডকুমেন্ট কি বাধা হতে পারে:


বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে শেখ হাসিনাকে ট্রাভেল ডকুমেন্ট দিয়েছে ভারত সরকার। ট্রাভেল ডকুমেন্ট মূলত ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা আইডেন্টিটি সার্টিফিকেট বা আইসি। বিশেষ ধরনের এই পরিচয়পত্রধারীরা বিদেশ সফর করতে পারেন।

অধ্যাপক সাহাব এনাম খান এ বিষয়ে বলেছেন, শেখ হাসিনার পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে তাকে ট্রাভেল ডকুমেন্ট ভারত সরকার দিতেই পারে।

ট্রাভেল ডকুমেন্ট নিয়ে শেখ হাসিনা অন্য দেশে গেলে সেখান থেকে ফেরত আনা যাবে কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যখন পরোয়ানা জারি হবে তখন তিনি যে দেশে থাকবেন, সেই রাষ্ট্রের সঙ্গে যদি প্রত্যর্পণ চুক্তি বা অপরাধীর বহিঃসমর্পণ চুক্তি থাকে তাহলে তারা এই চুক্তি অনুযায়ী তাকে ফেরত দিতে বাধ্য।

সম্প্রতি নরসিংদীতে এক অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছেন, কোনো মামলায় যদি শেখ হাসিনাকে আদালত হাজির করতে নির্দেশ দেয়, তাহলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেব।

সূত্র: বিবিসি নিউজ বাংলা

বাংলাদেশ সময়: ০১০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০২৪
ইইউডি/এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।