ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

কাজ ফেলে চলে গেছেন কর্মীরা, অনিশ্চিত আশুগঞ্জ-আখাউড়া চারলেন মহাসড়কের কাজ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৪
কাজ ফেলে চলে গেছেন কর্মীরা, অনিশ্চিত আশুগঞ্জ-আখাউড়া
চারলেন মহাসড়কের কাজ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া: প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে শেখ হাসিনা ভারতে চলে গেছেন গত ৫ আগস্ট। এরপর নিরাপত্তার অজুহাতে প্রকল্পের কাজ ফেলে চলে গেছেন ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী ও কর্মকর্তারা।

 

এতে প্রায় এক মাস ধরে বন্ধ রয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ নদীবন্দর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত চারলেন মহাসড়কের নির্মাণ কাজ।  

ফলে প্রকল্পের বাকি অর্ধেক কাজের ভবিষ্যৎ নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।  

এ অবস্থায় খানাখন্দে ভরা চট্টগ্রাম-সিলেট ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া অংশে যানবাহন চলাচলে বেড়েছে ভোগান্তি।  

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, এ প্রকল্পের কাজ আবার কবে নাগাদ শুরু হবে তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ভারত-বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণে ২০১৭ সালে একনেকে অনুমোদন পায় আশুগঞ্জ নদী বন্দর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত ৫০.৫৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের চারলেন জাতীয় মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প।  

২০২০ সালের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে ভূমি অধিগ্রহণে জটিলতাসহ নানা সংকটে প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। তিনটি প্যাকেজে প্রকল্পটির কাজ বাস্তবায়ন করছে ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। ভারতীয় ঋণ সহায়তা এবং বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে পাঁচ হাজার ৭৯১ কোটি টাকায় বাস্তবায়িত হচ্ছে সড়কটি।  

নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। তবে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের কারণে নির্মাণ সামগ্রীর দাম বাড়ায় ধীরগতিতে চলে প্রকল্পের কাজ। এতে প্রকল্পের মেয়াদ আরও এক দফা বাড়িয়ে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। সম্প্রতি প্রকল্পের কাজ পুরোদমে চলতে থাকলেও চলমান পরিস্থিতির কারণে নির্মাণ কাজ অর্ধেক ফেলে ভারতে ফিরে গেছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। এরপর থেকে প্রায় এক মাস ধরে প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে আছে।  

মহাসড়কের ঘাটুরা, বিরাসার, পুনিয়াউট, পৈরতলা, উজানিসা, ধরখারসহ বিভিন্ন পয়েন্টে ঘুরে দেখা যায়, বড় বড় গর্ত আর ঢেউ খেলানো সড়কে ঝুঁকি নিয়ে চলছে ছোট-বড় যানবাহন। এতে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা, ভোগান্তি বাড়ছে দীর্ঘ যানজটে। বেহাল সড়কে যানবাহনের যন্ত্রাংশ ভেঙে অথবা চাকা দেবে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া চট্টগ্রাম, সিলেট, ঢাকা এবং কুমিল্লার যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগ আর ঝুঁকি বাড়ছে। এছাড়া নিয়মিত পানি ব্যবহার না করায় নির্মাণ প্রকল্প এলাকায় প্রচুর ধুলা ওড়ে। যা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি।

এ পথে চলাচলকারী মো. ইসহাক মিয়া জানান, আখাউড়া-আশুগঞ্জ মহাসড়কটির ব্রাহ্মণবাড়িয়া অংশের কাজ বন্ধ থাকায় যানবাহনের চালক, যাত্রী এবং স্থানীয়রা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। খানাখন্দে ভরা সড়কের কারণে প্রতিদিনই ঘাটুরা, বিরাসার, পৈরতলা, পুনিয়াউট, রাধিকা এলাকায় যানজট লেগে থাকে। অন্যদিকে সড়কের তীব্র ধুলার কারণে আশপাশের বাসাবাড়ি আর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে টেকা দায়। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে দেখা দিয়েছে ক্রেতা সংকটও। তিনি দ্রুত এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে হবে।

বাসচালক মো. শাহীন বলেন, নির্মাণাধীন সড়কের ভাঙা অংশে গাড়ি চালাতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। গাড়ি উল্টেপাল্টে দুর্ঘটনা ঘটছে। এ প্রকল্পের কাজ আর শেষ হবে কিনা, তা নিয়েও দুশ্চিন্তায় আছি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে পড়ে থাকার পাশাপাশি যানবাহনের যন্ত্রাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

আখাউড়া-আশুগঞ্জ চারলেন প্রকল্পের ব্যবস্থাপক মো. শামীম আহমেদ জানান, আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া পর্যন্ত চারলেন প্রকল্পটি তিনটি প্যাকেজে বাস্তবায়ন হচ্ছিল। তিনটি প্যাকেজেই ঠিকাদার ভারতের এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। দেশের চলমান পরিস্থিতিতে ভারতীয়রা তাদের হাইকমিশনে নিরাপত্তার কথা বলে সবাই দেশে চলে গেছেন। কর্মীরা চলে যাওয়ার পর থেকে আমাদের প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি বন্ধ আছে। কবে চালু হবে তা এখন বলতে পারছি না। আমাদের প্যাকেজ-১ এর আশুগঞ্জ থেকে বিশ্বরোড পর্যন্ত মহাসড়কের ৬২ শতাংশ এবং বিশ্বরোড থেকে ধরখার বাজার পর্যন্ত ৫২ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ৫০.৫৮ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রকল্পটির আশুগঞ্জ থেকে ধরখার পর্যন্ত ৩৯ কিলোমিটার সড়কে নির্মাণ কাজ চলছিল। যার মধ্যে প্রায় ২৮ কিলোমিটার সড়ক এক পাশে দুইলেন কাজ শেষে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। পুরো কাজ যেহেতু ভারতীয় ঠিকাদারের অধীনে ছিল, তাই রাস্তার মেরামতের দায়িত্বও তাদের ছিল। আশা করছি, দ্রুতই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে ওপর থেকে।  

তিনি আরও বলেন, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা চলে যাওয়ার পর প্রকল্পের মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি হচ্ছে। আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা নিয়ে চুরি ঠেকানোর চেষ্টা করছি।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৪
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।