ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

আড়িয়াল খাঁর ভাঙনরোধে নির্মিত হচ্ছে স্থায়ী বাঁধ

ইমতিয়াজ আহমেদ,ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০২৪
আড়িয়াল খাঁর ভাঙনরোধে নির্মিত হচ্ছে স্থায়ী বাঁধ

মাদারীপুর: আড়িয়াল খাঁ নদের ভাঙন ঠেকাতে মাদারীপুর জেলার শিবচরে নির্মাণ করা হচ্ছে স্থায়ী বেরিবাঁধ। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে আড়িয়াল খাঁ নদের তীর সংরক্ষণ ও ড্রেজিং প্রকল্পের অধীনে ২২২ কোটি টাকা ব্যয়ে করা হচ্ছে স্থায়ী এই বেরিবাঁধ।

 

সাড়ে ছয় কিলোমিটার বাঁধের এরই মধ্যে কাজের অগ্রগতি ৮০ শতাংশের বেশি। বেরিবাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ হলে উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ নদীভাঙন থেকে রক্ষা পাবে। ভাঙন রোধে এই বাঁধ নির্মাণে খুশি এবং স্বস্তিতে নদের পাড়ের বাসিন্দারা!।

জানা গেছে, মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার আড়িয়াল খাঁ নদের তীরবর্তী শিরুয়াইল ইউনিয়নের পশ্চিম কাকৈরসহ নদের তীরবর্তী এলাকা, নিলখী ইউনিয়নের চরকামারকান্দি, বহেরাতলা, সন্যাসীরচর, দত্তপাড়া ইউনিয়নের নদের তীরবর্তী এলাকায় প্রতি বছরই নদের ভাঙনের শিকার হন গ্রামবাসী। নদের ভাঙনে ফসলি জমি, বাজার-ঘাট, রাস্তা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং ঘরবাড়ি বিলীন হচ্ছে প্রতি বছরই। কোনো কোনো এলাকাতে গত ১০ বছর ধরেই ভাঙনের শিকার হচ্ছেন এলাকাবাসী। নদের ভাঙনে নিঃস্ব অনেক পরিবারই। এই এলাকাতে ভাঙনরোধে স্থায়ী বেরিবাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ায় স্বস্তিতে রয়েছেন নদের পাড়ের সাধারণ মানুষ। বাঁধের নির্মাণ কাজ শেষ হলে ভাঙন থেকে পুরোপুরি রেহাই পাবেন, এমন আশা সাধারণ মানুষের মনে।

শিরুয়াইল ইউনিয়নের পশ্চিম কাকৈর এলাকার একাধিক বাসিন্দা জানান, আড়িয়াল খাঁ নদের ভাঙনে ৪/৫ বার বসতভিটা, ফসলি জমি হারিয়েছেন তারা। এবার স্থায়ী বেরিবাঁধ নির্মাণ হচ্ছে। হয়ত আর ভাঙনের মুখে পড়তে হবে না। নদের পাড়ের যে গ্রামগুলো এখনও টিকে আছে তাদের দুঃখ দূর হবে।

এই এলাকার ইদ্রিস হাওলাদার নামের এক বাসিন্দা বলেন, গত বিশ বছরে চার বার আমাদের বাড়ি আড়িয়াল খাঁ নদের ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। প্রতি পাঁচ বছর পরপরই নতুন করে বাড়িঘর তৈরি করে স্ত্রী সন্তান নিয়ে বসবাস করছি। সবশেষ এখন একেবারে নদীর পাড়ে বছর তিনেক ধরে ঘরবাড়ি আবার তুলছি। সব সময় আতঙ্কের মধ্যেই থাকতাম। বর্তমান সরকার আমাদের এলাকায় নদীতে বাঁধ দিতেছে। এখন এই বাঁধ দেখে এলাকাবাসী নতুন করে স্বপ্ন দেখতেছে। বেঁচে থাকার অনেক ভরসা পাচ্ছি।

শিরুয়াইল ইউনিয়নের পশ্চিম কাকৈরসহ নদের তীরবর্তী অন্য এলাকার মানুষের মধ্যেও ভাঙন থেকে বাঁচার স্বপ্ন তৈরি হয়েছে স্থায়ী এই বেরিবাঁধ নির্মাণ দেখে। নদী ভাঙনের শিকার হয়ে ভূমিহীন হওয়ার দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পাচ্ছে পাঁচ ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ।  

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে নৌ-বাহিনীর তত্ত্বাবধানে কাজটি বাস্তবায়ন করছে খুলনা শিপইয়ার্ড লিমিটেড নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প ব্যবস্থাপক শেখ হুমায়ুন কবির বলেন, কাজের গুণগতমান ঠিক করে প্রকল্পটি দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। ৮০ শতাংশ কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। আমরা আশা করছি আগামী বছরের জুনের মধ্যেই প্রকল্পটির সব কাজ শেষ করে কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করতে পারব। প্রকল্পটির কাজ শেষ হলে সুবিধা পাবেন বহেরাতলা, শিরুয়াইল, নিখলী, দত্তপাড়া ও সন্ন্যাসীরচর ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ।

মাদারীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সানাউল কাদের খান বলেন, মাদারীপুরের শিবচরে প্রতি বছরেই আড়িয়াল খা নদের ভাঙনে শত শত বাড়ি ঘর ভেঙ্গে যেত। এখন সাড়ে ছয় কিলোমিটারের টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে করে এই অঞ্চলের মানুষের নদী ভাঙন থেকে রক্ষায় একটি দীর্ঘস্থায়ী সমাধান হচ্ছে। এখানকার মানুষ এখন নিরাপদে বাড়ি ঘর নির্মাণ করে বসবাস করতে পারবে।

তিনি আরও বলেন, ২২২ কোটি টাকা ব্যয়ে নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের কাজ ২০২৫ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। আশা করছি আগামী বছরের জুনের মধ্যেই আমরা প্রকল্পটির কাজ শেষ করে উদ্বোধন করতে পারব।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০২৪
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।