ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

শান্তির প্রত্যাশায়-দেবীদের আরাধনায় পানিতে ফুল ভাসানো হয়

মঈন উদ্দীন বাপ্পী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট   | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০২৪
শান্তির প্রত্যাশায়-দেবীদের আরাধনায় পানিতে ফুল ভাসানো হয়

রাঙামাটি: ‘ফুল বিজু’র মধ্য দিয়ে আজ থেকে পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের তিন দিনব্যাপী বৃহত্তর সামাজিক বৈসাবি উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে।  

শান্তির প্রত্যাশায় এদিন পানিতে ফুল ভাসিয়ে দেবী গঙ্গা এবং ধন, সম্পত্তি বৃদ্ধির আশায় চালের পাত্রের পাশে মোমবাতি জ্বালিয়ে দেবী লক্ষ্মীর আরাধনা করা হয়।

ফুল ভাসানোর দিনটিকে একেক সম্প্রদায় একেক নাম দিলেও ‘ফুল বিজু’ নামটি বেশি পরিচিতি পেয়েছে।

রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি এবং বান্দরবান জেলায় বসবাসরত ক্ষুদ্র জাতিসত্তা চাকমাদের বিজু, মারমাদের সাংগ্রাই, ত্রিপুরাদের বৈসু, তঞ্চঙ্গ্যাদের বিষু, ম্রোদের চানক্রান, খিয়াংদের সাংগ্রান, খুমীদের সাংক্রাই, অহমিয়াদের বিহুর আদ্যাক্ষর নিয়ে ‘বৈসাবি’ নামকরণ করা হয়েছে।  

তিন দিনব্যাপী এই উৎসবের প্রথম দিনকে চাকমা ভাষায় ফুল বিঝু, দ্বিতীয় দিনকে ‘মূল বিঝু’ এবং তৃতীয় দিন তথা পহেলা বৈশাখকে ‘নুয়াবঝর’ বা ‘গোজ্যা পোজ্যা দিন’ বলা হয়।

এভাবেই ত্রিপুরা সম্প্রদায় প্রথম দিনকে ‘হারিকুইসুক’ দ্বিতীয় দিনকে ‘বুইসুকমা’ এবং তৃতীয় দিনকে ‘বিসিকাতাল’ নামে অভিহিত করে থাকে।

ফুল বিজুর দিনে ভোরে ঐতিহ্যবাহী পোশাক পড়ে পাহাড়ি তরুণ-তরুণীরা ঝুড়ি হাতে বাগান থেকে ফুল সংগ্রহ করে নদীতে ঝাঁক বেঁধে চলে যায়। পুরাতন বছরের সব গ্লানি মুছে ফেলতে এবং নতুন বছরে সুখ, শান্তি ও আনন্দের প্রত্যাশায় দেবী গঙ্গাকে আরাধনা হিসেবে নদীতে ফুল ভাসানো হয়। রাঙামাটিতে এইদিন ফুল ভাসানো হয়েছে কাপ্তাই হ্রদে।  

তবে যেখানে নদী নেই সেখানে এসব সম্প্রদায়ের তরুণ-তরুণীরা কূয়া, ঝিরিতেও ফুল ভাসান। ভাসিয়ে দিয়ে বেঁচে যাওয়া ফুল দিয়ে ঘরের আঙিনা সাজানো হয়। পুরো নতুন বছরে ধন-সম্পদ বৃদ্ধির কামনায় ওইদিন সন্ধ্যায় দেবী লক্ষ্মীর আরাধনা হিসেবে চালের পাত্রে মোমবাতি জ্বালানো হয়।

ঝিনুক ত্রিপুরা বলেন, পুরোনো দিনের সব দুঃখ, দুর্দশা দূর এবং নতুন বছরে শান্তি পেতে আমরা দেবী গঙ্গার উদ্দেশ্যে পানিতে ফুল ভাসিয়ে সামাজিক উৎসবের সূচনা করেছি। এইদিন পরিবারের মুরব্বিদের গোসল করানো এবং নতুন পোশাক উপহার দেওয়া হয়।

শ্রেয়া ত্রিপুরা বলেন, সকালে উঠে আমরা দেবী গঙ্গার পূজা করি। এরপর গড়াইয়া নৃত্য পরিবেশনের মাধ্যমে দেবতা শিবের পূজা করি। সারাদিন নানা প্রার্থনার মধ্যে সময় পার করি এবং নানা রকমের ফুল দিয়ে ঘর সাজাই।

জয়তী চাকমা বলেন, আমরা চাকমা সম্প্রদায়ের লোকজন প্রথম দিন ফুল বিজু পালন করি। আমরা মূল বিজু অর্থাৎ ওইদিন খাওয়া-দাওয়া করি, ঘুরে বেড়াই। এরপর ‘নুয়াবঝর’ বা ‘গোজ্যা পোজ্যা অর্থাৎ পহেলা বৈশাখের দিনে আমরা বিশ্রাম করি এবং বিহারে গিয়ে পূজা করি।

রাঙামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরী বলেন, অন্যান্য বছরের চাইতে এ বছরটা ব্যতিক্রমধর্মী। এ বছর ঈদ, বিজু, সাংগ্রাই একসঙ্গে পড়েছে। উৎসবগুলো ঘিরে তিন পার্বত্য জেলা উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়েছে। এইদিনে আমরা চাই সব সম্প্রদায়ের মাঝে সম্প্রতি গড়ে উঠুক।

পরিবেশ, বন, জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার এমপি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে তিন দিনব্যাপী বৃহত্তর সামাজিক বৈসাবি উৎসব শুরু হয়েছে। এ উৎসবে একটি প্রার্থনা, আগামীতে যাতে ভালো থাকি, শান্তিতে থাকি এবং সারাবিশ্বের মানুষ যাতে ভালো থাকে এ প্রত্যাশা করছি।

বলে রাখা দরকার- পাহাড়ের ক্ষুদ্র জাতিসত্তাদের বেশিরভাগ বৌদ্ধ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী হলেও এইদিন তারা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দেবী গঙ্গা এবং দেবী লক্ষ্মীর আরাধনা করে থাকে। ফুল ভাসানো ছাড়াও আগামী আরও দুদিন পাহাড়ি পল্লিগুলোতে বলি খেলা, জলখেলি, ঘিলা, বাঁশ, রশি টানাটানি খেলা অনুষ্ঠিত হবে।  

উৎসবে ঐতিহ্যবাহী পাঁজন রান্না, নানান রকম পাহাড়ি চালের বাহারি পিঠাপুলি, ফলমূলসহ চলবে রসনাভোজন আয়োজন। পরিবেশিত হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০২৪
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।