ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

অকথ্য ভাষা ব্যবহারের পর সাংবাদিকদের দেখে নেওয়ার হুমকি চিকিৎসকের

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১১ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০২৪
অকথ্য ভাষা ব্যবহারের পর সাংবাদিকদের দেখে নেওয়ার হুমকি চিকিৎসকের ডা. জয়ন্তী রানী ধর

নেত্রকোনা: নেত্রকোনার দুর্গাপুরে সাংবাদিকদের গালিগালাজ করেন জয়ন্তী রানী ধর নামের এক চিকিৎসক। একপর্যায়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের দেখে নেওয়ার হুমকিও দেন তিনি।

 

শুক্রবার ( ২২ মার্চ) বিকেলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সংলগ্ন ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে জয়ন্তী রানী ধরের ব্যক্তিগত চেম্বারে এ ঘটনা ঘটে।  

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ ঘটনার একটি ভিডিওক্লিপ ইতোমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে।  

ভিডিওক্লিপে দেখা গেছে, ডা. জয়ন্তী রানী ধর তার ব্যক্তিগত চেম্বারে বসে সাংবাদিকদের সঙ্গে চিৎকার-চেঁচামেচি করছেন। তিনি চেম্বারে বসেই সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলতে থাকেন, ‘যান .... ছিঁড়েন যাইয়া আমার, দেখি কি করতে পারেন। সব সাংবাদিককে আমার চেনা আছে। ডাক্তার জয়ন্তী রানীকে আপনারা চেনেননি। আমি তিন মাসের মধ্যেই ময়মনসিংহ থেকে চলে গেছি। যা আর কেউ পারেনি। আপনারা আমার চেম্বারে আসার সাহস পেয়েছেন কোথায় থেকে? এক্ষুনি বের হয়ে যান। নয়তো আমি এখনই ডিআইজিকে ফোন দিচ্ছি। ’

এমন ভিডিওর বিষয়ে জানা গেছে, শুক্রবার বিকেলে চেম্বারে রোগী ও স্বজনের সঙ্গে খারাপ আচরণের ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে সাংবাদিকদের ওপর ক্ষুব্ধ হন ডাক্তার জয়ন্তী রানী ধর। এ সময় সাংবাদিকদের সামনেই রোগীর ব্যবস্থাপত্র ছিড়ে ফেলেন ওই ডাক্তার।  

রোগীর স্বজন সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার বিকেলে সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নিয়ে ডাক্তার জয়ন্তী রানীর কাছে যান দুর্গাপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. জামাল তালুকদার। সে সময় ডাক্তার দূর থেকে রোগী দেখার সময় রোগীর স্বজনরা কাছ থেকে রোগী দেখার কথা বলতেই ক্ষিপ্ত হন ডাক্তার জয়ন্তী রানী। একপর্যায়ে চেম্বার থেকে বের হয়ে আসতে বাধ্য হন স্বজনরা। তাৎক্ষণিক স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিক তার চেম্বারে প্রবেশ করতেই রীতিমতো তিনি চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করেন।  

এ সময় তার স্বামী মন্ত্রীর কাছের লোক বলেও সাংবাদিকদের রীতিমতো ভয় দেখাতে শুরু করেন। তাছাড়াও তার স্বামীর ছোট ভাই ডিআইজি বলেও সাংবাদিকদের হুমকি দেন। শুধু তাই নই একপর্যায়ে সাংবাদিকদের পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন তিনি।  

ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে ডাক্তার জয়ন্তী রানী ধর রোগীর স্বজন ও সাংবাদিকদের সঙ্গে অশালীন আচরণের কথা স্বীকার করেন।  

তিনি বলেন, উত্তেজিত হয়ে এরকম আচরণ করেছি। এজন্য আমি দুঃখিত।  

জানা গেছে, এক সময় ডাক্তার জয়ন্তী রানী ধর দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিকেল অফিসার হিসেবে ছিলেন। বর্তমানে তিনি ঢাকার একটি সরকারি হাসপাতালে কর্মরত আছেন। প্রতি শুক্রবার দুর্গাপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামে এক প্রতিষ্ঠানে গাইনি চিকিৎসক হিসেবে রোগী দেখেন। হাজার টাকা ভিজিট নেন তিনি। দেশের যে প্রান্তেই থাকেন না কেন গেল ৯ বছর ধরেই ছুটির দিনগুলোতে শুধু দুর্গাপুরে তিনি রোগী দেখেন। পাশাপাশি আরেকটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়মিত সিজারও করেন তিনি।  

সিজারিয়ান অপারেশন করতে গিয়ে রোগী ও নবজাতক হত্যার অভিযোগ রয়েছে এ চিকিৎসকের বিরুদ্ধে।  

২০২২ সালের ১২ আগস্ট জয়ন্তী রানী ধরের তত্ত্বাবধানে সিজারিয়ান অপারেশনের পরপরই এক প্রসূতির মৃত্যু হয়। এর পর তিনি টাকার বিনিময়ে তা মীমাংসা করেন।  

ওই ঘটনায় নিহত প্রসূতির চম্পা আক্তার উপজেলার গাওকান্দিয়া ইউনিয়নের ফুরকান মিয়ার স্ত্রী।  

স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, ভালো কোনো গাইনি চিকিৎসক না থাকায় বাধ্য হয়ে অন্তঃসত্ত্বা নারীরা ডা. জয়ন্তী রানী ধরের কাছে যান। তবে তার ক্ষমতার ভয়ে রোগীরা কেউ তার বিরুদ্ধে কিছু বলার সাহস পান না।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০৮ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০২৪
এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।