ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মায়ের ডাকের সংবাদ সম্মেলন

আমার কলিজার টুকরাকে ফিরিয়ে দিন, নিখোঁজ রহমত উল্লাহর মায়ের আকুতি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৪
আমার কলিজার টুকরাকে ফিরিয়ে দিন, নিখোঁজ রহমত উল্লাহর মায়ের আকুতি

ঢাকা: ২০২৩ সালের ২৯ আগস্ট দিবাগত রাত আনুমানিক ১২টার সময় র‌্যাবের পোশাক এবং সাদা পোশাক পরিহিত লোকজন ঢাকা জেলার ধামরাই উপজেলার গাংগুটিয়া ইউনিয়নের বড় নালগ্রামের মৃত আব্দুর রবের ছোট ছেলে ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রি রহমত উল্লাহকে (২০) তুলে নিয়ে যায়।  

গত ৫ মাসে র‌্যাব কার্যালয়, ডিবি অফিস, থানা ও হাসপাতাল ঘুরে সন্তানের খোঁজ না পেয়ে সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করেন নিখোঁজ রহমত উল্লাহর মা মমতাজ বেগম।

‘আমার কলিজার টুকরা রহমত উল্লাহকে ফিরিয়ে দিন’ বলে আর্তনাদ করে তিনি বলেন, আমি কাকে নিয়ে বেঁচে থাকব। আমার শাস-প্রশ্বাস রহমত উল্লাহ। নিখোঁজ হওয়ার ৮ দিন আগে থেকেই প্রচণ্ড জ্বরে ভুগছিল। কিছু খেতে পারছিল না। আমার পাশেই ঘুমিয়ে ছিল, আমার পাশ থেকে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হলো, আজও ফিরে এলো না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি বলে দিন, আমি কোথায় কার কাছে  গেলে আমার সন্তানকে ফিরে পাব।

মায়ের ডাকের সমন্বয়কারী সানজিদা ইসলাম তুলির সভাপতিত্বে এবং মঞ্জুর হোসেন ঈসার পরিচালনায় সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নিখোঁজ রহমত উল্লাহর বড় বোন রাজিয়া আক্তার।

তিনি বলেন, আমার বাবা ২০১৩ সালের ১৮ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেছেন। সংসারে আমি বড় মেয়ে, আমার মেঝ ভাই ওবায়দুর বর্তমানে সৌদি আরবে রয়েছেন। তার স্ত্রী সাথী আক্তার, আমার মা মমতাজ বেগম ও আমাদের সবচেয়ে ছোট ভাই রহমত উল্লাহ একই বাড়িতে থাকে। গত ২৯ আগস্ট দিবাগত রাতে আমাদের বাড়ি থেকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা বাড়ির মূল ফটকে কড়া নাড়ে। আমার মা ঘরের দরজা ও মূল ফটক খুলে বাইরে বের হলে তাদের কয়েকজন ঘরের ভেতরে প্রবেশ করেন এবং আমার ভাই রহমত উল্লাহকে জোর করে তুলে নিয়ে যান। কী কারণে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে তারা বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

পরের দিন আমার মা মানিকগঞ্জ ও ধামরাই যাওয়ার পর পুলিশ কোনো তথ্য দেয়নি। পরবর্তীতে ৭ অক্টোবর ধামরাই থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়। গুম হওয়ার ৫ মাস পরেও আমার ভাইকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আমার মা প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আমার ভাই কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য না, তার বিরুদ্ধে কোথাও কোনো মামলা ছিল না। তার পরেও সে যদি কোনো অন্যায় করে থাকে দেশের প্রচলিত আইনে গ্রেপ্তার করে শাস্তি দিতে পারতো, আমরা জানতে পারতাম সে কী অপরাধ করেছে। কিন্তু এখন আমরা কিছুই জানি না, বলেন নিখোঁজ রহমত উল্লাহর বোন।  

তিনি আরও বলেন, সারা দেশে আমার ভাইয়ের মতো শত শত মানুষ গুমের শিকার হয়েছে। মায়ের ডাক তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে, আমার ভাইয়ের পাশেও দাঁড়িয়েছে। আমি সবাইকে ফেরত চাই।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন রহমত উল্লাহর বড় খালা সায়রা খাতুন। অন্যান্য ভিকটিম পরিবারের সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঝুমুর আক্তার, বেবি আক্তার, মিনু আক্তার, ইমন ওমর, হ্যাপি আক্তার সুমনি, লামিয়া আক্তার মিম।

সভাপতির বক্তব্যে সানজিদা ইসলাম তুলি বলেন, আমরা চাই না কেউ গুম হোক। আমার মা হাজেরা খাতুনের কান্না গত ১১ বছর শুনেছি। আজ আরেকজন মা মমতাজ বেগমের কান্না শুনতে পেলাম। আমাদের মায়ের ডাকের মিছিলে আরেকটি ছবি যোগ হলো। আমরা কখনও চাই না নতুন কোনো ছবি যোগ হোক। আমরা চাই সব সন্তানরা তাদের মায়ের কোলে ফিরে যাক। আমি অবিলম্বে রহমত উল্লাহসহ গুম হওয়া সকল সদস্যদের তাদের মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৪
টিএ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।