ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সন্তানের জন্য ৮ বছর অপেক্ষা ছিল রুমার

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৮, ২০২৪
সন্তানের জন্য ৮ বছর অপেক্ষা ছিল রুমার

ঢাকা: ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) পাঁচটি সন্তান জন্ম দিয়েছেন চাঁদপুরের বাসিন্দা রুমা আক্তার (২৬)। দীর্ঘ আট বছর তিনি সন্তানের মুখ দেখার অপেক্ষা করছিলেন।

রুমার সদ্যজাত পাঁচ সন্তানের মধ্যে একজন মৃত জন্ম নিয়েছে। বাকিদের সুস্থ অবস্থায় সঙ্গে নিয়ে বাড়ি ফিরতে চান তিনি।

সোমবার (৮ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২১২ নম্বর গাইনি ওয়ার্ডে সাধারণ ডেলিভারির মাধ্যমে ৫ সন্তানের জন্ম দেন রুমা। নবজাতকদের মধ্যে তিন ছেলে, দুই মেয়ে। জানা গেছে, রুমার দুই কন্যার মধ্যে একজন মৃত জন্ম নিয়েছিল। বাকিরা ‘ইমম্যাচিওর’ থাকায় তাদের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে।

হাসপাতালের গাইনি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. নাজমা হক এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, সোমবার ভোরে রুমাকে চাঁদপুর থেকে ঢামেকে এনে আমাদের বিভাগে ভর্তি করা হয়। প্রসব যন্ত্রণা বেশি হওয়ায় সকাল ৯টার দিকে তাকে প্রসব কক্ষে (লেবার রুম) নিয়ে যাওয়া হয়। সকাল ৯টা ৪০ মিনিট থেকে ধারাবাহিকভাবে বেলা ১১টা পর্যন্ত পাঁচ সন্তানের জন্ম দেন রুমা। তার তিন ছেলে, দুই মেয়ের মধ্যে একজন মৃত জন্ম নেয়। সে মেয়ে। রুমার প্রসবের সাহায্যে আমার সঙ্গে ছিলেন সহকারী অধ্যাপক ডা. রুমানা, সহকারী রেজিস্ট্রার ডা.তাহমিনা, রেজিস্ট্রার ডা. সেতুসহ পাঁচ চিকিৎসক।

ডা. নাজমা বলেন, প্রথমে কন্যা সন্তানের জন্ম দেন রুমা; তার ওজন ছিল প্রায় ১৩০০ গ্রাম; দ্বিতীয় সন্তান একটি ছেলে, ওজন ১ কেজি। রুমার তৃতীয় সন্তান একটি ছেলে, তার ওজন হয় ১২০০ গ্রাম; চতুর্থ মেয়ে সন্তান; ওজন ছিল ১২০০ গ্রাম। তাকে আমরা মৃত অবস্থায় পেয়েছি। সবশেষ ছেলে সন্তানের জন্ম দেন রুমা। তার ওজন হয়েছে ১৩০০ গ্রাম। বাচ্চারা অপরিপক্ব ও কম ওজনের হওয়ায় তাদের নবজাতক আইসিইউতে পাঠানো হয়। সবারই স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে। সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় আমরা তাদের সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করছি। বাচ্চাদের মাও ঝুঁকিতে, তাকে অবজারভেশনে রাখা হয়েছে।

রুমার পরিবার একসাথে এত সন্তান হওয়ায় খুশি। তাদের সবাইকে সুস্থ অবস্থায় বাড়ি নিয়ে যেতে যান তারা। রুমার কোন আয়েশা আক্তার মুক্তা বলেন, আমার বোনের স্বামী মো. শহিদুল্লাহ সৌদিআরব প্রবাসী। তারা চাঁদপুর সদর উপজেলার দাসাদি গ্রামের বাসিন্দা। আট বছর বিয়ের বয়স হলেও তাদের সন্তান হচ্ছিল না। অনেক অপেক্ষা, অনেক জায়গায় চিকিৎসা নেওয়ার পর ঢাকা সেন্ট্রাল হাসপাতাল থেকে পরামর্শ গ্রহণ করে রুমা। এরপর সে গর্ভবতী হয়। তিন মাসের মাথায় পরীক্ষা করে জানা যায় রুমার পেটে চার সন্তান রয়েছে। ভোরে সে ব্যথা অনুভব করলে দ্রুত ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসি। সকালে সে নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে পাঁচ সন্তানের জন্ম দেয়। আমার এক ভাগ্নি জন্মের সময় মারা গেছে। আমরা আশা করছি, যাতে সবাইকে সুস্থ অবস্থায় বাড়ি নিয়ে যেতে পারি।

ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আসাদুজ্জামান বলেন, নবজাতকদের মধ্যে যারা বেঁচে আছে আমরা তাদের সুস্থ করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের দায়িত্বরত চিকিৎসকরা মা ও শিশুদের সেবার ২৪ ঘণ্টা নিয়োজিত আছে।

বাংলাদেশ সময়: ২১২৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৮, ২০২৪
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।