ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস সম্পর্কে কতটুকু জানে নতুন প্রজন্ম

জাফর আহমদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০২৩
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস সম্পর্কে কতটুকু জানে নতুন প্রজন্ম বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানায় সর্বস্তরের জনতা। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের শেষ লগ্নে বাংলাদেশের বিজয় যখন সন্নিকটে, তখন পরাজয় বুঝতে পেরে পাকিস্তানি হানাদাররা এ দেশে চালিয়েছিল পরিকল্পিত নারকীয় হত্যাযজ্ঞ। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর তারা রাজাকার-আলবদরদের সহায়তায় শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, চিকিৎসকসহ বুদ্ধিজীবীদের ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে।

সেই নৃশংসতার স্মৃতিচিহ্ন হয়ে আছে রায়ের বাজার বধ্যভূমি ও মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ।

স্বাধীন বাংলাদেশে ১৪ ডিসেম্বর দিনটি শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন হয়ে আসছে। এদিন সকালে মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ ও রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে ফুলেল শ্রদ্ধা জানিয়ে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণ করে সর্বস্তরের মানুষ। স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবসের পাশাপাশি শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস সম্পর্কেও পাঠ্যক্রমে পাঠ আছে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের ত্যাগ ও অবদানের কথা জানাতেই এ সমস্ত আয়োজন।

কিন্তু স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসের পাশাপাশি শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস সম্পর্কে নতুন প্রজন্ম কতটুকু জানছে, সে নিয়ে প্রশ্ন থেকেই গেছে। গত বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের দিনও এ প্রশ্ন থেকে গেছে উত্তরহীন। মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে দিবসটি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে অনেকেই অস্পষ্ট ধারণার কথা বলেন। কেউ কেউ স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসকে গুলিয়ে ফেলেন।

কথা হচ্ছিল একটি সরকারি স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী ফারিয়ার (ছদ্মনাম) সঙ্গে। তিন বান্ধবীর সঙ্গে ফারিয়া বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে এসেছে। কী উপলক্ষে এখানে এসেছে জানতে চাইলে ফারিয়া বলে, ‘আজকে স্বাধীনতা দিবস। সবাই ফুল দিতে এসেছে, আমিও এসেছি। ’

কথা হয় একটি মাদরাসার ছাত্র আতিকুল ইসলামের (ছদ্মনাম) সঙ্গে। সে এক বন্ধু ও বড় ভাইয়ের সঙ্গে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে এসেছে। সকালে স্মৃতিসৌধে বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তির দেওয়া ফুল থেকে তিনজন তিনটি লাল গোলাপ নিয়ে হাতে করে বিভিন্ন সংগঠনের শ্রদ্ধা নিবেদন দেখেছে।  

কী উপলক্ষে এখানে এসেছে জানতে চাইলে আতিকুল বলে, ‘আজকে শহীদ দিবস। যারা স্বাধীনতা দিবসে মারা গেছেন তাদের স্মরণে আজকের দিন। ’ তখন অবশ্য তার সঙ্গে থাকা স্নাতকোত্তর করা বড় ভাই আজ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস বলে শুধরে দেন আতিকুলকে।

১৪ ডিসেম্বর সম্পর্কে ধারণা নেই স্কুলছাত্রী সুরভী আক্তারেরও। সে বলে, ‘আজ স্বাধীনতা দিবস। যুদ্ধে মানুষ মারা যাওয়ায় তাদের স্মরণে আজকের শহীদ দিবস। ’

মা-বাবার সঙ্গে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে আসা স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র জারিফও জানে না বুদ্ধিজীবী দিবস সম্পর্কে। তখন তার মা পাশে থেকে দিবসটি সম্পর্কে ধারণা দেন জারিফকে।

যা বললেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব
ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতাযুদ্ধের ইতিহাস স্কুল-কলেজ সব পর্যায়ের পাঠ্যপুস্তকেই আছে। তারপরও শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস সম্পর্কে কিশোর-তরুণদের ধারণা না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খান বলেন, এমনটা হওয়ার কথা নয়।  

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘প্রথমত, তারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে জানতে পারছে, নিঃসন্দেহে তাদের পাঠ্যবইয়ে তা রয়েছে। ওরা কেন এমন বলেছে? আর কাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে আমি বলতে পারছি না। তবে আমি যেটা বলতে চাই সেটা হলো, আমাদের ত্যাগ ও তীতিক্ষার মাধ্যমে আমরা যে স্বাধীনতা অর্জন করেছি, সেই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সবাইকে জানানোর জন্য সমস্ত ব্যবস্থা করা হয়েছে। ’

পাঠদানে কোনো ঘাটতি থাকছে কি না, আর থাকলে তা সে বিষয়ে কোনো করণীয় আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রথমত হলো, ক্লাসরুমভিত্তিক যে পাঠদান হয় তা টেক্সটবুকের ভিত্তিতেই হয়, আমি মনে করি না ও রকম কিছু হয়েছে। এটা হতে পারে যে, তাদের বয়স তো একেবারেই অল্প, ১২-১৪ বছর বয়স। বিজয় দিবস আসন্ন। দুটি আলাদা করতে পারছে না, কোনটা কী; দিবসটা কেন পালন করি বা ১৪ ডিসেম্বরটা কেন পালন করি। আমার মনে হয় না পাঠদানে কোনো সমস্যা রয়েছে। আপনি যেটা তুলে ধরলেন অবশ্যই আমরা দেখবো। নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নের জন্য যখন ট্রেনিং দেওয়া হবে তখন আলোচনার বিষয় হতে পারে- কেন আমাদের ইয়ং ছেলে-মেয়েরা এখনো সঠিকভাবে ইতিহাস তুলে ধরতে পারছে না। ’

রাজনৈতিক কর্মীদের ধারণাও অস্পষ্ট
এদিন শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ‍ফুল দিতে আসেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা-কর্মীরা। কথা হয় লাইনের পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা সাধারণ কর্মী মাহাবুবের সঙ্গে। দিবসটি সম্পর্কে জানতে চাইলে মাহাবুব বলেন, ‘আমি অত কিছু জানি না। নেতারে জিজ্ঞেস করেন। ’ 

স্মৃতিসৌধে কী উপলক্ষে এসেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জেলে চারজনকে হত্যা করেছিল, তাদের স্মরণে আজ শহীদ দিবস। এজন্য ফুল দিতে এসেছি। ’

অবশ্য এর মধ্যেই দলটির দুই যুব নেতা এসে দিনটি সম্পর্কে বলতে চান। একজন স্পষ্ট করে বলেনও ১৪ ডিসেম্বর সম্পর্কে।

বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে আসা এমন আরও অন্তত দুটি রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীর কাছে দিবসটি সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা স্পষ্ট কিছু বলতে পারেননি।

নতুন প্রজন্ম থেকে শুরু করে রাজনৈতিককর্মী, কারও মধ্যেই শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস সম্পর্কে কোনো ধারণা না থাকা দুঃখজনক বলে মনে করেন প্রবীণ ইদ্রিস আলী। তিনি বলেন, যারা রাজনৈতিক দলের ব্যানারে এখানে এসেছেন, তাদের রাজনীতির অংশ হিসেবেই দিবসটি সম্পর্কে শিক্ষাদান করা দরকার।

বাংলাদেশ সময়: ২১২২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০২৩
জেডএ/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।