ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলা গঠনে জোটবদ্ধ হওয়া জরুরি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০২৩
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলা গঠনে জোটবদ্ধ হওয়া জরুরি

ঢাকা: সাম্প্রদায়িকতা আছে বলেই সম্প্রীতির প্রয়োজন। সময়ের আবর্তে ক্ষয়ে গেছে বিশুদ্ধ সংস্কৃতি।

বদল হয়েছে পাঠ্যবই। রাজাকারও মন্ত্রী হয়েছে এদেশে। সুতরাং অল্প দিনে অনেক পরিবর্তনের কারণে র‍্যাডিক্যালিজম চাড়া দিয়েছে।  

সব মিলে একটা অস্থির সময় পার করছে এদেশের জনগণ। মনের মধ্যে রাগ-ক্ষোভ পুষে না রেখে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলা গঠনে সবার জোটবদ্ধ হওয়া জরুরি। রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সম্প্রীতি বাংলাদেশের গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব বলেন।  

মঙ্গলবার এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটি। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বরেণ্য শিক্ষাবিদ ও লেখক মুহাম্মদ জাফর ইকবাল।  

অনুযোগের সুরে তিনি বলেন, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদদের তালিকা নিয়ে এখনও প্রশ্ন করে কেউ কেউ। কারণ এদেশে রাজাকারদের মতো আত্মস্বীকৃত খুনিরা মন্ত্রী হয়েছে। তাদের দোসরেরা সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে উচ্চপদে আসীন হয়েছেন। অথচ মুক্তিযুদ্ধের মূল্যায়ন যদি হয় রক্তের দামে, তাহলে বাংলাদেশের চেয়ে বেশি দামে পৃথিবীর অন্য কোনো জাতি স্বাধীনতা কেনেনি।

বক্তব্যের বিভিন্ন পর্যায়ে মুহম্মদ জাফর ইকবাল তার কর্মময় জীবনের বিভিন্ন স্তরে কীভাবে সাম্প্রদায়িকতা দেখেছেন তার বর্ণনা করেন। একইভাবে শিশু-কিশোরদের মধ্যে মুক্তবুদ্ধি তথা অসাম্প্রদায়িক চেতনার বীজ কীভাবে প্রোথিত হতে পারে, তারও সরল সমাধান দেন।  

নাট্যজন, আবৃত্তিকার ও অভিনেতা পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভাপতিত্বে গোলটেবিল বৈঠকে অন্যদের মধ্যে অংশ নেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও কথাসাহিত্যিক পূজা উদযাপন কমিটি সাধারণ সম্পাদক ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার, ডিবিসি নিউজের সম্পাদক প্রণব সাহা, একাত্তর টেলিভিশনের নূর সাফা জুলহাস, চিকিৎসক নেতা ও সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক পরিচালক ডা. উত্তম বড়ুয়া, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের ব্যারিস্টার ফারজানা মাহমুদ, সময় টেলিভিশনের সম্পাদক মোস্তফা হোসেইন, সম্প্রীতি বংলাদেশের কেন্দ্রীয় নেত্রী জয়ম্রী ব্যানার্জী, বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক তৌফিক হাসান ময়না, একুশে টেলিভিশনের ভারপ্রাপ্ত অনুষ্ঠান প্রধান সাইফ আহমেদসহ অন্যরা।

সম্প্রীতি বাংলাদেশের সদস্য সচিব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারভেনশনাল হেফাটোলজি বিভাগের পরিচালক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল গোলটেবিল অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। তিনি উদ্বেগের সঙ্গে বলেন, খুব কৌশলে হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির মাঝে কুঠারাঘাত করা হচ্ছে। স্কুল থেকে শুরু করে উপর মহলে পৌঁছে গেছে সাম্প্রদায়িকতার বিষের বাষ্প। এখন প্রশ্ন-আমাদের সেই চিরায়ত সাংস্কৃতিক আন্দোলন তাহলে কোথায় গেল? 

তিনি বলেন, কিছুদিন আগেও স্কুলগুলোতে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের সঙ্গে গীতা ও ত্রিপিটক পাঠ ছিল। এখন আর ত্রিপিটক কিংবা গীতার বাণী শোনানো হয় না। তাহলে দেশ থেকে কি হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান লুপ্ত হয়ে গেছে? নাকি মন থেকে আমরাই তাদের উপস্থিতিকে অমান্য করতে শিখেছি? 

ডিবিসি সম্পাদক প্রণব সাহা বলেন, ১৪২ কোটি মানুষের দেশ ভারতে ভোট দেয় ৯০ কোটি মানুষ। সেখানকার নির্বাচন কমিশনের কাছে প্রতিটি ভোটারের গুরুত্ব অসীম শ্রদ্ধা ও সমমানের। অথচ বাংলাদেশে অন্য ধর্মের মানুষের প্রতি সেই সমভাব এখনও অনুপস্থিত। সংখ্যালঘু আখ্যা দিয়ে ভোট এলেই তাদেরকে আঘাত করা হয়।  

সময় টিভির সম্পাদক মোস্তফা হোসেইন বাল্যকালের স্মৃতি রোমন্থন করে বলেন, বাংলাদেশ মানেই হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতি। সেই সোনার বাংলা কোথায় গেল? ক্রমশ হিন্দুদের সংখ্যা কমছে। প্রাণের ভয়ে দেশান্তরী হচ্ছে তারা। আমরা মনে করি এটাও এক ধরনের গণহত্যা। কেন না তারা জীবন বাঁচানোর জন্য এদেশে থেকে লুপ্ত হয়েছে।  

৭২ এর সংবিধান ফেরানোর দাবি জানিয়ে একাত্তর টিভির অনুষ্ঠান প্রধান নূর সাফা জুলহাস বলেন, এদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য থেকে অসাম্প্রদায়িকতার ইতিহাস বদলে গেছে বিস্ময়কভাবে। সবখানে অতি দ্রুত ভাইরাসের মতো ছড়িয়ে গেছে সাম্প্রদায়িকতা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কর্মস্থল, চাকরি-বাকরি সবখানে। এভাবে কোনো দেশ উন্নতি করতে পারে না।  

অনুষ্ঠানে চন্দ্রনাথ পোদ্দার বলেন, আমরা আশাবাদী। কোনো একদিন আবার ফেলে আসা দিনের সেই সম্প্রীতির বাংলা ফেরত পাব। এজন্য মন খারাপ বসে না থেকে কাজ শুরু করতে হবে সম্মিলিতভাবে।  

সংগঠনটির আহ্বায়ক পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, সম্প্রীতির অভাবেই সংখ্যালঘুরা বারংবার আঘাতপ্রাপ্ত হচ্ছে। হয় ভোট, নয়তো জায়গাজমি সংক্রান্ত ঝামেলায়। দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন হয়েছে। পিরোজপুর থেকে পঞ্চগড়, সিলেট থেকে সাতক্ষীরা পর্যন্ত ছাড়িয়ে গেছে উন্নয়নের শিখা। কিন্তু মানুষের চেতনার উন্নয়ন না ঘটলে এসব একদিন তুচ্ছ বলেই মনে হবে।  

সম্প্রীতির বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতার ঠাঁই নাই- প্রতিপাদ্য নিয়ে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিশিষ্টজনেরা বৈঠকে বক্তব্য দেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০২৩
আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।