ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

একদিকে মজুরি বোর্ডের সভা, অন্যদিকে শ্রমিক আন্দোলন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ৭, ২০২৩
একদিকে মজুরি বোর্ডের সভা, অন্যদিকে শ্রমিক আন্দোলন

ঢাকা: মজুরি বাড়ানোর দাবিতে বিভিন্ন পোশাকশ্রমিক সংগঠন ও কর্মচারীদের আন্দোলনের মধ্যেই মজুরি বোর্ডের সভা শুরু হয়েছে। এ সভায় চূড়ান্ত হতে পারে পোশাকশ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি।

তবে শ্রমিকদের প্রস্তাবিত মজুরি বাস্তবায়ন না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে শ্রমিক সংগঠনগুলো।

মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর তোপখানা রোডে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের নিম্নতম মজুরি বোর্ড চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে বোর্ডের সভায়  ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা হবে।

এদিকে নিম্নতম মজুরি বোর্ড চেয়ারম্যানের কার্যালয়ের নিচে গিয়ে দেখা যায়, সভা চলাকালেই ওই কার্যালয়ের নিচে বিক্ষোভ করছে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন। ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণে শ্রমিকপক্ষের প্রস্তাব মেনে নেওয়ার পক্ষে নানা স্লোগান দিচ্ছেন সংগঠনের নেতাকর্মীরা।  

দাবির বিষয়ে শ্রমিক নেতারা বলেন, এক বছর আগে ২৫ হাজার টাকা নিম্নতম মজুরি করার কথা বলেছিল শ্রমিক সংগঠনগুলো। কিন্তু সে হিসাবে আজকের বাজার পরিস্থিতিতে চারজনের পরিবারে সেটাও কম। আমরা এমন এক সময় মজুরি বাড়ানোর কথা বলছি যখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ বাংলাদেশ। কিন্তু বাস্তবতা হলো বিশ্ববাজারে এখাতে সুনাম কুড়ালেও আমাদের দেশের শ্রমিকরা দুনিয়ার সবথেকে কম মজুরিতে কাজ করেন। চরম সংকট ও অনিশ্চয়তার মধ্য চলছে তাদের জীবন-জীবিকা।  

শ্রমিক নেতারা আরও বলেন, আন্দোলনের মুখে গত ৯ এপ্রিল সরকার মজুরি বোর্ড গঠন করেছে। আন্দোলনরত সব সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা না করে অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এই বোর্ড গঠন করা হয়েছে। বোর্ডে মালিক-শ্রমিক-সরকার কিংবা নিরপেক্ষ সদস্য কারোরই আলাদা অবস্থান থাকবে কি না, অতীতের অভিজ্ঞতা সেই আশঙ্কাই সামনে আনে। অন্যদিকে রাজনীতিতে ভয়, গণতন্ত্রহীনতা ও ভোটাধিকারহীনতা জেঁকে আছে। এমন বাস্তবতায় বর্তমানে ২৫ হাজার টাকা মজুরি নির্ধারণের জন্য ঐক্যবদ্ধ মরিয়া আন্দোলন ছাড়া কোনো পথ নেই।  

শ্রমিক নেতারা বলেন, মজুরি বৃদ্ধির দাবি এলেই বরাবর মালিকপক্ষ অভাব-অনটনের দোহাই দেন। অথচ ‘মালিকের সামর্থ্য নাই’, ‘অর্ডার কম’, ‘ব্যবসা থাকবে না’ -এসব খোঁড়া যুক্তির পাল্টা তথ্য সরকারি সূত্রই দিচ্ছে। সরকারি তথ্য (ইপিবি) মতে, বর্তমানে রপ্তানির হার চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ৩৫.২৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা গত বছরে একই সময়ে ছিল ৩১.৪ বিলিয়ন ডলার। অপ্রচলিত বাজারে রপ্তানি ৩৪.৭৪ শতাংশ বেড়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে কোনো কারণে এক বাজারে কাপড় সামান্য কম বিক্রি হলেও অন্য বাজারে বেশি বিক্রি করে সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিচ্ছে মালিকরা। অথচ এই সাফল্যের ভাগ পাচ্ছেন না শ্রমিকরা, বাড়ছে না প্রয়োজন অনুযায়ী মজুরি ও জীবনমান।

একটি পরিবারে বর্তমান সময়ে কী পরিমাণ খরচ হয় সেই ধারণা দিয়ে শ্রমিক নেতারা বলেন, গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডি দেখিয়েছে ১টি পরিবারের সার্বিক খরচ ৪৭ হাজার ৭৮১ টাকা। বিলসের গবেষণা মতে, ৩৩ হাজার ৩৬৮ টাকা এবং আমাদের গবেষণায়ও দেখেছি, শ্রমিক পরিবারের সার্বিক খরচ প্রায় ৪৪ হাজারেরও বেশি। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতি, শ্রমিকের মৌলিক চাহিদা, ক্যালোরি, পরিবারের সদস্য সংখ্যা, মালিকদের সামর্থ্য বিবেচনায় শ্রমিকের জীবন-মানের সম্মানজনক উন্নয়ন ও বেঁচে থাকার জন্যই আমারা ২৫ হাজার টাকা দাবি করেছি।

এসময় সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে মজুরির বিষয়ে কিছু দাবি তুলে ধরা হয়।  

১. অবিলম্বে পোশাক শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা ঘোষণা করতে হবে। ৬০ শতাংশ মহার্ঘভাতা দিতে হবে।

২. গ্রেড চুরি বন্ধে অপারেটরদের দুটি গ্রেড নির্ধারণ করতে হবে। সব গ্রেডে একই হারে মজুরি বৃদ্ধি করতে হবে।

৩. সোয়েটার ও পিস রেটে কর্মরত শ্রমিকদরে কাজের আগে মজুরি নির্ধারণ ও ডাল সিজনে পূর্ণ বেসিক দিতে হবে। সোয়েটারে ৩ শিফট ও ওভারটাইম নিশ্চিত করতে হবে।  

৪. ইপিজেড-ইপিজেডের বাইরে সবখানে সমানহারে মজুরি বৃদ্ধি ও মূল মজুরির ১০ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট দিতে হবে। বাধ্যতামূলক অংশীদারত্বমূলক প্রভিডেন্ট ফান্ড চালু করতে হবে।  

৫. দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধে চাল, ডাল, তেল, শিশুখাদ্যসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য রেশন কার্ডের মাধ্যমে বিতরণের লক্ষ্যে স্থায়ীভাবে রেশনিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে। শ্রমিকদের জন্য জীবন বিমা, চিকিৎসা, শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিতে সরকার ও মালিককে উদ্যোগ নিতে হবে।

৬. শ্রমিক ছাঁটাই, মিথ্যা মামলা-হামলা ও নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। ধর্মঘট নিষিদ্ধকরণের অত্যাবশ্যক পরিষেবা বিল, ২০২৩ বাতিল করতে হবে।

৭. শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে মালিক ও সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।

নিম্নতম মজুরি বোর্ডের কার্যালয়ের নিচে বিক্ষোভরত শ্রমিক সংগঠনগুলো হলো—গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট, বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও শিল্প শ্রমিক ঐক্য পরিষদ, জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন, পাঁচটি জোটভুক্ত ৬৫টি সংগঠনের সমন্বয় গঠিত গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স অ্যালায়েন্স, বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশন, গার্মেন্টস শ্রমিক ও শিল্পরক্ষা জাতীয় মঞ্চ, গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য মঞ্চ, বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, মজুরি বৃদ্ধিতে গার্মেন্টস শ্রমিক আন্দোলন, সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ৭, ২০২৩
ইএসএস/এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।