ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

চেতনানাশক ছিটিয়ে একের পর এক চুরি, পুলিশ বলছে গুজব

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৩
চেতনানাশক ছিটিয়ে একের পর এক চুরি, পুলিশ বলছে গুজব

হবিগঞ্জ: জেলার শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলায় চেতনানাশক ছিটিয়ে লোকদের অজ্ঞান করে অনেক পরিবারের মালামাল হাতিয়ে নেওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এমনকি পুলিশ সদস্যের বাড়িতেও হানা দিয়েছে অজ্ঞানপার্টির দুর্বৃত্তরা।

এমন একের পর এক ঘটনার খবরে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে। যদিও পুলিশ বলছে, এসব গুজব। যে কারণে বিষয়টি নিয়ে পুলিশ ও জনতার মধ্যে মতবিরোধের সৃষ্টি হয়েছে।

স্থানীয়রা বলছেন, মাত্র ২০ হাজার মানুষের উপজেলায় কয়েকদিনের মধ্যে একই কায়দায় ১৩টি চুরির ঘটনা ঘটে। দুর্বৃত্তরা চেষ্টা করেছে আরও অন্তত ১৫টি বাড়িতে চুরি করার। কিন্তু এই অপরাধগুলো দমনে থানা পুলিশ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।

অন্যদিকে শায়েস্তাগঞ্জ থানা পুলিশের দাবি, একটি চক্র বাড়িগুলোতে চেতনানাশক ছিটানোর নামে গুজব ছড়াচ্ছে। চক্রটিকে শনাক্তের চেষ্টা চলছে।

তবে চেতনানাশক ছিটিয়ে চুরির প্রথম ঘটনা মাসখানেক আগে ঘটে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার সাবাশপুর গ্রামে আবদাল মিয়ার বাড়িতে। ভোরবেলা গ্রামবাসী দেখতে পান বাড়ির সবাই অজ্ঞান এবং ঘরে রক্ষিত মূল্যবান জিনিসপত্র সেখানে নেই।

স্থানীয়রা জানান, সেদিনের ঘটনার পর গত বুধবার পর্যন্ত দুজন পুলিশ সদস্যসহ আরও অন্তত ৯টি বাড়িতে একইভাবে চুরি হয়। এছাড়া ১৫টি পরিবারকে অজ্ঞান করতে পারলেও আশপাশের লোকজন সতর্ক থাকায় পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় অপরাধীরা। এসব ঘটনায় কয়েকজন শিশুসহ ১৫ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে।

সম্প্রতি শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার উদয়ন আবাসিক এলাকার বাসিন্দা ও আদালতে কর্মরত পুলিশ কনস্টেবল আব্দুল মতিন এবং গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) জুয়েল মিয়ার বাড়িতে চোরেরা হানা দেয়।

কনস্টেবল আব্দুল মতিন জানান, গত ৪ সেপ্টেম্বর তিনি কর্মস্থল থেকে ফেরার পর দেখতে পান তার স্ত্রী ও শালিকা অসুস্থবোধ করছে। রাতের খাবার গ্রহণের পর তারা অজ্ঞান হয়ে যায়। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখেন সবাই শারীরিকভাবে দুর্বল এবং স্বর্ণালঙ্কারসহ ঘরের মূল্যবান মালামাল নেই। পরে হাসপাতালে চিকিৎসা নেন তারা।

এদিকে এএসআই জুয়েল মিয়ার বাসায় চেতনানাশক ছিটিয়ে চুরির ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন হবিগঞ্জ ডিবির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নূর হোসেন।

এছাড়া চেতনানাশক ছিটিয়ে ঘরের মালামাল লুটের শিকার লোকজনের মধ্যে রয়েছেন - দক্ষিণ লেঞ্জাপাড়ার বাসিন্দা রেলওয়ের শায়েস্তাগঞ্জ জংশনে কর্মরত গেটম্যান আরিফ মিয়া, একই এলাকার আব্দুর রউফ, সাবেক সেনা সদস্য আব্দুল হেলিম, সাবাশপুর গ্রামের কামরুল হক, লিটন মিয়া, উবাহাটা গ্রামের কাসফি আক্তারের বাসা এবং তালুকদার কটেজ।

এ ধরনের চুরির ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় সম্প্রতি রাতে পাহারার ব্যবস্থা করেছে এলাকাবাসী।

যে কারণে কয়েকটি বাড়িতে চেতনানাশক ছিটালেও এলাকাবাসী পাহারারত থাকায় পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। অল্পের জন্য চুরি থেকে রক্ষা পান - শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার কাউন্সিলর আব্বাস উদ্দিন তালুকদার, দক্ষিণ লেঞ্জাপাড়ার সৈয়দ মিয়া, তাহির মিয়া, সাংবাদিক আব্দুর রকিব, জালাল উদ্দিন রুমী, ব্যবসায়ী আব্দুল মান্নান, বড়চর গ্রামের মরণ দত্ত, তালুগড়াই গ্রামের ফয়সল আহমেদসহ আরও কয়েকজন।

পুলিশ এসব ঘটনাকে গুজব দাবি করলেও— অপরাধ দমনে পুলিশ ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

অভিযোগকারী এক ব্যক্তির সঙ্গে শায়েস্তাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হক কামালের কথোপকথনের একটি ভিডিও বাংলানিউজের সংগ্রহে এসেছে।

এতে দেখা যায়, দুর্বৃত্তরা জানালার ফাঁক দিয়ে সিরিঞ্জের মাধ্যমে চেতনানাশক ঘরে ছিটিয়ে দেয় বলে ওসিকে জানাচ্ছেন ভুক্তভোগী। কিন্তু ওসি প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন, এদিক দিয়ে চেতনানাশক ছিটিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। তারা অন্য কোনো কারণে অসুস্থ হয়ে থাকতে পারেন।

শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সর্বশেষ মাসিক সভায় চেতনানাশক ছিটিয়ে লোকদের অজ্ঞান করে একের পর এক চুরির ঘটনা আলোচনা হয়। এ সময় কমিটির অন্যান্য সদস্য বিশেষ করে স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিরা ওসির সমালোচনা করেন বলেও সভার একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে।

এ বিষয়ে হবিগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আউয়াল তালুকদার বলেন, অনেক বাড়িতে চেতনানাশক ছিটিয়ে চুরির ঘটনায় শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলাবাসী এখন আতঙ্কে রয়েছে। এ বিষয়ে প্রশাসনকে আরও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যবসায়ী বাংলানিউজকে বলেন, এতগুলো ঘটনার পরও শায়েস্তাগঞ্জ থানা পুলিশ অপরাধ দমনে তেমন কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখাতে পারেনি। একজন আসামিকে র‌্যাব ও আরেকজনকে স্থানীয় জনতা আটক করে পুলিশে দিয়েছে। পুলিশের এমন নীরব ভূমিকা এলাকায় নানা প্রশ্নের সৃষ্টি করছে।

তবে চুরির ঘটনাগুলো আমলে নিতে নারাজ শায়েস্তাগঞ্জ থানার ওসি মো. নাজমুল হক কামাল।  

তিনি বলেন, একজন স্প্রে চোর ছিলেন, তিনি ধরা পড়েছেন। এরপর থেকে যেসব ঘটনা ছড়ানো হচ্ছে সব গুজব। একটি চক্র উপজেলাকে অস্থিতিশীল করতে এমন গুজব ছড়াচ্ছে। পুলিশ চক্রটিকে শনাক্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৮, ২০২৩
এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।