ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

পানি সংকটে দুর্ভোগে সালথার পাটচাষিরা 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০২৩
পানি সংকটে দুর্ভোগে সালথার পাটচাষিরা 

ফরিদপুর: পানি সংকটের কারণে ফরিদপুরের সালথা উপজেলায় চরম বিপাকে পড়েছে পাটচাষিরা। খাল-বিল, পুকুর, নিচু জমি ও জলাশয়গুলোতে তীব্র পানির সংকট।

যে কারণে সময় মতো পাট জাগ দিতে পারছে না চাষিরা।  

এমন অবস্থায় বিকল্প হিসেবে বসত-বাড়ির আঙিনায়, পতিত জমি ও বাগানের ভেতর গর্ত করে পাট জাগ দিচ্ছে কৃষক। এতে কাঁদা-মাটি আর নোংরা পানির কবলে পড়ে নষ্ট হচ্ছে পাটের আসল রূপ। কৃষকের সোনালি স্বপ্নের পাট যেন এখন তাদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কোনো দিক-দিশা না পেয়ে পাট কাটা বন্ধ রেখেছেন। ফলে ক্ষেতেই শুকিয়ে মরে যাচ্ছে পাট।  

কৃষকরা বলছেন, মাটি খুঁড়ে গর্ত করে তার মধ্যে সেলো মেশিন দিয়ে পানি ভরে পাট জাগ দিতে দ্বিগুণ টাকা খরচ হচ্ছে। আবার দ্বিগুণ টাকা দিয়েও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে শ্রমিক এনে পাট কাটতে হচ্ছে। কিন্তু জাগ দেওয়ার মতো প্রয়োজনীয় জায়গা ও পানি না থাকায় পাট কেটে রাস্তা-ঘাটে ফেলে রাখতে হয়েছে।

সরেজমিনে তেলি সালথা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, একটি মেহগুনি গাছের বাগানের ভেতর মাটি খুঁড়ে কবরের মতো ছোট ছোট গর্ত করে অভিনব কায়দায় পাট জাগ দিচ্ছেন সুজন লস্কর নামে এক পাটচাষি। দূর থেকে যে কেউ দেখলে প্রথমে মনে করবে এটি কোনো কবরস্থান। পাট চাষি সুজন লস্কর বলেন, পানি সংকটের কারণে বাধ্য হয়ে নিজের বাগানে গর্ত খুঁড়ে পাট জাগ দিচ্ছি। আমি একা নই, আমার মতো অনেকে এভাবে পাট জাগ দিচ্ছে। এতে অন্তত নিজেদের শরীরটা ভাল থাকবে। কারণ যেসব পুকুর বা জলাশয়ে সেলো মেশিনে পানি ভরে কৃষকরা পাট জাগ দিচ্ছেন, তার বেশির পুকুর ও জলাশয়ের পানি নোংরা হয়ে গেছে। পানি এতোটাই অপরিষ্কার যে, সেখানে কেউ নামলেই তার গা চুলকাবে। বিভিন্ন রোগেও আক্রান্ত হবে।  

ইয়াদ আলী লস্কর নামে আরেক পাটচাষি বলেন, এবার মাঝে মাঝে বৃষ্টি হলেও জলাশয়গুলোতে একফোঁটা পানিও জমেনি। আমাদের পুকুরেও নেই পর্যাপ্ত পানি। এমন অবস্থায় কিছু কৃষক কুমার নদের পানিতে পাট জাগ দিচ্ছে। তবে বেশিরভাগ পাটচাষির পানির জন্য হাহাকার করছে। কেউ মাটি খুঁড়ে গর্ত করে আবার কেউ নিচু জমির চারপাশে বাঁধ দিয়ে তার ভেতরে সেলো মেশিন দিয়ে পানি ভরে পাট জাগ দিচ্ছে। আবার কেউ কেউ রাগ করে ক্ষেতেই পাট রেখে দিয়েছে। সেগুলো বর্তমানে শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় পাট এখন আমাদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।  

উপজেলার তেলি সালথা গ্রামের পাটচাষি নুর ইসলাম বলেন, এতো কষ্ট করে পাট চাষ করেছি। কিন্তু ঠিকমতো দাম পাচ্ছি না। একমণ পাট এখন বিক্রি করছি ১৫০০ থেকে ১৮০০ টাকা করে। প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত একজন শ্রমিকের মূল্য ৮০০ টাকা। এতে আমাদের পোষাবে না।  

এদিকে পাটচাষিরা অভিযোগ করে বলেছেন, কৃষক অফিস ও পাট অধিদপ্তর থেকে মাঝে মাঝে মেশিনের (রেবন রেটিং মেশিন) মাধ্যমে কাঁচা পাটের আঁশ ছাড়িয়ে তা পঁচানোর যে পদ্ধতি আমাদের শেখানো হয়েছে, তাতে আমাদের কাজে আসবে না। খামখা সরকার এর পিছনে টাকা খরচ করছে।  

তবে সালথা উপজেলা উপ-সহকারী পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. আব্দুল বারী বলেন,  রেবন রেটিং মেশিন মাধ্যমে ছাড়াও সালথায় অন্তত ৮টি জায়গায় মাটি খুঁড়ে গর্ত করে অল্প পানিতে পাটের আটি পলিথিনের দিয়ে পেঁচিয়ে পাট পঁচানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে এই মুহূর্তে কৃষকদের অনেক উপকার হচ্ছে।   

সালথা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুদর্শন শিকদার বলেন, সালথায় ১২ হাজার ৩৩০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হচ্ছে। তবে পানির অভাবে বেশিরভাগ চাষিরা দুশ্চিন্তায় থাকলেও আমাদের কিছু করার নেই। কারণ পানি সংকটের বিষয়টি ডিসি ও ইউএনও স্যার পদক্ষেপ নিবেন।

সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আক্তার হোসেন শাহিন বলেন, পানি সংকটের বিষয়টি সালথা ও ফরিদপুরের জন্য একটি জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পানি সংকটের কারণে ইতিমধ্যে আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলে ফরিদপুর সিঅ্যান্ডবি ঘাটের স্লুইচ গেটটি খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি।  

বাংলাদেশ সময় ১৬১৯ ঘণ্টা,আগস্ট ১০, ২০২৩
এসএইচডি/এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।