ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

মার্কেট নির্মাণের জন্য পুকুর ইজারা!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩৯ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০২৩
মার্কেট নির্মাণের জন্য পুকুর ইজারা! রায়েন্দা বাজারে মিষ্টি পানির এই পুকুরটি দোকান নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দিয়েছে বাগেরহাট জেলা পরিষদ

বাগেরহাট: বাগেরহাটের উপকূলীয় উপজেলা শরণখোলায় সুপেয় পানির সংকট তীব্র। প্রতি বছর অন্তত চার থেকে পাঁচ মাস পানির জন্য সীমাহীন কষ্ট করতে হয় বাসিন্দাদের।

কোনো কোনো এলাকায় কয়েক কিলোমিটার হেঁটেও পানি সংগ্রহ করতে হয় স্থানীয়দের। উপজেলার চারটি ইউনিয়নে যে অল্প কয়েকটি পুকুর মানুষের পানির চাহিদা মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে রায়েন্দা বাজারে অবস্থিত পুকুরটি তার মধ্যে অন্যতম। তবে সাম্প্রতিক সময়ে মিষ্টি পানির জন্য সংরক্ষিত এ পুকুরের স্থলে দোকান ঘর নির্মাণের জন্য ইজারা বন্দোবস্ত দিয়েছে বাগেরহাট জেলা পরিষদ। ফলে একদিকে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে, অন্যদিকে পানির কষ্ট বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এদিকে পুকুরটি রক্ষার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার (২২ জুন) দুপুরেোনুষ্ঠিত এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীরা বলেন, জেলা পরিষদ ইতোপূর্বে অনৈতিকভাবে শতবর্ষী এ পুকুরটির পূর্ব পাশে মার্কেট নির্মাণ করে সংকুচিত করে ফেলেছে। দক্ষিণ পাশে আবার মার্কেট নির্মাণ করলে পুকুরটি অস্তিত্ব হারাবে।

রাসেল আহমেদ নামে একজন বলেন, রায়েন্দা বাজার সংলগ্ন এলাকার বেশিরভাগ ভাগ মানুষ পনীয় জরের জন্য এই পুকুরটির ওপর নির্ভরশীল। ফলে জরুরি ভিত্তিতে এখন পুকুরটি খনন করা প্রয়োজন। অথচ তা না করে মার্কেট নির্মাণে বরাদ্দ দেওয়ার মত আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর আগে পূর্ব পাশে ৮ থেকে ১০টি দোকান ঘর নির্মাণ করায় পুকুরটি বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এবার যদি দক্ষিণ পাশে আরও দোকান নির্মিত হয় তাহলে পুকুরের অস্তিত্বই থাকবে না। এই অঞ্চলে পানির কষ্ট কতটা তীব্র, উপরওয়ালারা যদি তা বুঝত!

রায়েন্দা সরকারি পাইলট হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অমলেন্দু হালদার বলেন, স্থানীয় একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হাজারো শিক্ষার্থী এই পুকুরের পানি ব্যবহার করে। পুকুরের ওপর মার্কেট বা ঘর নির্মাণ হলে এর অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে। ফলে পানির কষ্টে ভুগবে শিক্ষার্থীরা।

একই রকম কথা বলেন, রায়েন্দা সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সাইদুর রহমান, শরণখোলা আইডিয়াল ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ মো. উসমান গনিসহ সাধারণ শিক্ষকরাও।

পুকুর রক্ষায় বৃষ্টিতে ভিজে মানববন্ধন করেছে শিক্ষার্থীরা

রায়েন্দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজমল হোসেন মুক্তা বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে পুকুরটি সাধারণ মানুষের জন্য সংস্কার করা প্রয়োজন। অথচ তা না করে জেলা পরিষদ ঘর নির্মাণের জন্য ইজারা দিয়েছে।

শরণখোলা উপজেলা জনস্বাস্থ্য উপ-সহকারি প্রকৌশলী এস এম মেহেদী হাসান বলেন, জেলা পরিষদের ওই পুকুরটি স্থানীয়দের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় উত্তর পাশে ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে গত অর্থবছরে একটি পিএসএফ নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া তাদের দপ্তর থেকে পুকুরটি খননের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পূর্ব পাশে জেলা পরিষদের মার্কেট থাকায় তা সম্ভব হয়নি। যদি আরও একটি মার্কেট নির্মাণ হয় তাহলে পুকুরে পানিও থাকবে না, পিএসএফও বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে পানীয় জলের সংকট আরও বাড়বে উপকূলীয় এই এলাকায়।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, জেলা পরিষদের মালিকানাধীন শরণখোলার রায়েন্দা পুকুরের দক্ষিণ পাশে আধা-পাকা ঘর নির্মাণের জন্য ৭ জনের নামে ২০২২ সালের ১৭ জুলাই জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান স্বাক্ষরিত ইজারা বন্দোবস্ত দেওয়া পত্রের একটি অনুলিপি নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে এসেছে। ওই পত্রে উল্লেখিত ইজারা বন্দোবস্ত নেওয়া ৭ ব্যক্তি হচ্ছেন- অম্বরিশ রায়, শিরিন সুলতানা রুমি, মো. আসাদুজ্জামান খান, উজ্জল সাহা, মৌসুফা নুর মুমু, মো. ইমরান উদ্দিন শুভ ও শিশির কুমার সাহা।

জানতে চাইলে বাগেরহাট জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ঝুমুর বালা বলেন, বিষয়টি বুধবার (২১ জুন) জেনেছি। যেহেতু পানির সঙ্গে বৃহত্তর জনস্বার্থ জড়িত। আমি শিগগিরই পুকুরটি পরিদর্শনে যাব এবং জনস্বার্থে ইজারা বাতিলসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩৮ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০২৩
এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।