ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

দুই কক্ষের বাসায় শিক্ষা বোর্ডের কার্যক্রম চালাতেন দম্পতি!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৯ ঘণ্টা, মে ৫, ২০২৩
দুই কক্ষের বাসায় শিক্ষা বোর্ডের কার্যক্রম চালাতেন দম্পতি!

ঢাকা: রাজধানীর লালবাগে দুই কক্ষের একটি বাসা ভাড়া নিয়ে জাল সার্টিফিকেট তৈরি ও বিক্রি করতেন এক দম্পতি। শিক্ষা বোর্ডে কর্মরত ছিলেন তারা দুজনেই।

দুই কক্ষের ওই বাসায় ল্যাপটপ, ডেক্সটপ, প্রিন্টার, স্ক্যানার ও এমব্রস মেশিন স্থাপন করে রীতিমত শিক্ষা বোর্ডের কার্যক্রম চালাতেন দম্পতি।

ছোট-খাটো, স্বল্প পরিসরের জীর্ণ এই বাসায় থেকে তারা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের গ্রাজুয়েশন ও পোস্ট গ্রাজুয়েশনের সার্টিফিকেট/মার্কশিট দিয়ে আসছিলেন বলেই জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগ।

সম্প্রতি রাজধানীর রামপুরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে জাল সার্টিফিকেট তৈরি ও বিক্রি চক্রের দুই সদস্য প্রকৌশলী জিয়াউর রহমান ও তার স্ত্রী নুরুন্নাহার মিতুকে গ্রেপ্তার করা হয়।

শুক্রবার (৫ মে) ডিএমপির গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. মশিউর রহমান বাংলানিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

তিনি জানান, বৃহস্পতিবার (৪ মে) সন্ধ্যায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার (৫ মে) রাজধানীর লালবাগে একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার ইয়াসিন আলী এবং দারুল ইহসান ইউনিভার্সিটির ডিরেক্টর বুলবুল আহমেদ বিপুকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ডিসি মশিউর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার (৪ মে) সন্ধ্যায় রামপুরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় প্রকৌশলী জিয়াউর রহমান এবং নুরুন্নাহার মিতুকে। অভিযানে তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন পর্যায়ের একাডেমিক অনেক সার্টিফিকেট, মার্কশিট, ইনভেলপ ও নগদ টাকা জব্দ করা হয়।

ডিবি পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, তারা বেশ কিছুদিন ধরে নীরবে বিপুল টাকার বিনিময়ে দেশের বিভিন্ন চলমান এবং বন্ধ হয়ে যাওয়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েশন এবং পোস্ট গ্রাজুয়েশন, বিভিন্ন বোর্ডের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার মার্কশিট ও সার্টিফিকেট বিক্রি করে আসছিলেন।  

তিনি বলেন, এই সার্টিফিকেট ও মার্কশিটগুলো বোর্ড অথবা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরবরাহ করা মূল কাগজ দিয়েই তৈরি করা হতো। সেগুলোকে কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে অনলাইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যাতে অনলাইন ভেরিফিকেশনে সত্যতা মেলে।

ডিসি মশিউর রহমান জানান, লালবাগের দুই কক্ষবিশিষ্ট বাসাটিতে দামি ল্যাপটপ, ডেক্সটপ, প্রিন্টার, স্ক্যানার ও এমব্রস মেশিন স্থাপন করে বিভিন্ন ইউনিভার্সিটি থেকে সংগ্রহ করা ব্ল্যাংক মার্কশিট ও সার্টিফিকেট এখানে ভুঁইফোড় ব্যক্তিদের নামে (সার্টিফিকেট, মার্কশিট, টেস্টিমনিয়াল ইত্যাদি) ছাপানো হতো।  

এছাড়া ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার ইয়াসিন আলী বিভিন্ন ছাপাখানা থেকে সব রকমের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য সম্বলিত অতি সুক্ষ্ম জাল-সনদের কাগজ ছাপিয়ে এনে নিজেও বিভিন্ন গ্রাহকদের (জাল সার্টিফিকেট, মার্কশিট, টেস্টিমনিয়াল ও ট্রান্সক্রিপ্ট ইত্যাদি) সরবরাহ করতো।

গ্রেপ্তার আসামিরা দুই ধরনের জালিয়াতি করতো। কোনো রকমের ভেরিফিকেশন হবে না- এরকম সার্টিফিকেট, মার্কশিট, টেস্টিমনিয়াল সরবরাহ করা। এছাড়া দেশে বিদেশে অনলাইনে ভেরিফিকেশন হবে এরকম মার্কশিট, সার্টিফিকেট ইত্যাদি সরবরাহ করা।  

ডিবি পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, কতিপয় বিশ্ববিদ্যালয় ও বোর্ডের বেশ কিছু দায়িত্বশীল ব্যক্তির নাম পরিচয় পাওয়া গেছে, যারা অনলাইন ভেরিফিকেশন করে সার্টিফিকেট বিক্রির সঙ্গে সরাসরি জড়িত। কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া এসব প্রতারকদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গ্রেপ্তার নুরুন্নাহার মিতু ছাড়া অন্যদের নামে একাধিক থানায় মামলা রয়েছে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০১ ঘণ্টা, মে ৫, ২০২৩
এসজেএ/এনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।