ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

সমুদ্রের তীরে ভেসে আসছে টন টন বর্জ্য

সুনীল বড়ুয়া, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২, ২০২৩
সমুদ্রের তীরে ভেসে আসছে টন টন বর্জ্য

কক্সবাজার: কিছুদিন পর পরই কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ভেসে আসছে জেলিফিস, ডলফিনসহ সামুদ্রিক প্রাণী। একই সঙ্গে আসে প্লাস্টিকসহ নানা রকম বর্জ্য।

রোজা শুরু হওয়ার পর গত তিন দিনে জোয়ারের সঙ্গে ভেসে এসেছে টন টন আবর্জনা। শহরের কলাতলী থেকে কবিতা চত্বর পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার সৈকতজুড়ে এসব বর্জ্য জমেছে।

সাগর তীরে এসব বর্জ্য ভেসে আসার অনুসন্ধানে কাজ করছেন সমুদ্র বিজ্ঞানীরা। বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বুরি) মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ও সমুদ্রবিজ্ঞানী সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, সাগরে নিম্নচাপ, বায়ুপ্রবাহ, পানির ঘূর্ণয়ন, সমুদ্রের পানির গতি প্রবাহসহ সমুদ্র পৃষ্ঠের ধরনের ওপর ভিত্তি করে উচ্চ জোয়ারের সময় সমুদ্র উপকূলের নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় এ ধরনের ভাসমান প্লাস্টিকসহ ও অন্যান্য বর্জ্য জমা হয়ে থাকে। গত কয়েকদিন ধরে বঙ্গোপসাগরে ছোট আকারের নিম্নচাপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এর প্রভাবে জোয়ারের সময় সমুদ্রের উপরি পৃষ্ঠের পানি অতি মাত্রায় বেড়ে গিয়ে ফুলে উঠে পানি উচ্চতা বেড়ে যায় এবং ঘুর্ণায়নের ফলে সমুদ্রের ভাসমান প্লাস্টিক বর্জ্য একসঙ্গে জমা হয়ে তীরে ভেসে আসে।

সমুদ্রবিজ্ঞানী সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর আরও বলেন, সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা তরিকুল ইসলামের নেতৃত্বে সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তারা সৈকতে ভেসে আসা বর্জ্যের নমুনা সংগ্রহ করেছেন। কারণ নির্ণয়ের জন্য কাজ করছেন তারা।

জানা গেছে, গত বুধবার দুই দফায় ভেসে আসে অসংখ্য মরা জেলিফিশ। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ভেসে আসে দুটি ইরাবতী প্রজাতির ডলফিন। শনিবার (১ এপ্রিল) বিকেলে লাবণী পয়েন্ট সৈকতের বালিয়াড়ি জুড়ে নানা প্রকার জৈব-অজৈব বর্জ্য আছড়ে পড়ে। বর্জ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে জেলেদের ব্যবহৃত ছেঁড়া জাল, প্লাস্টিকের দড়ি, কাঁচ ও প্লাস্টিকের বোতল, প্লাস্টিকের স্যান্ডেল, ব্যাগ ও মেডিকেল বর্জ্য। একইসঙ্গে ভেসে আসে বিভিন্ন ধরনের শুকনো লতা, গুল্ম ও কাঠের টুকরা এবং মৃত সামুদ্রিক প্রাণীর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ।

সৈকতে দায়িত্বরত জেলা প্রশাসনের বিচ কর্মী বেলাল হোসেন জানান, সামুদ্রিক জোয়ারের সঙ্গে কক্সবাজার সৈকতে মাঝে মধ্যেই ভেসে আসে নানা সামুদ্রিক প্রাণীর মৃতদেহ। ২০২০ সালের জুলাই মাসেও কক্সবাজার শহরের কলাতলী থেকে হিমছড়ি পর্যন্ত সৈকতজুড়ে দুই দফায় বর্জ্য-বন্যা দেখা দেয়। এ সময় নানা বর্জ্যের সঙ্গে মরা কচ্ছপ, সাপসহ বিভিন্ন সামুদ্রিক প্রাণীর মৃতদেহ ভেসে আসে।

তিনি বলেন, গত বছর অক্টোবরে সিত্রাংয়ের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসেও সোনাদিয়া সৈকতসহ কক্সবাজারের সাগর ও নদী তীরবর্তী এলাকায় উচ্চ জোয়ারে প্লাবিত হয়ে শত শত টন প্লাস্টিক বর্জ্য আঁচড়ে পড়ে। গত কয়েকদিনে আবারও ভেসে আসে ডলফিন, জেলিফিস ও প্লাস্টিকসহ নানা রকম বর্জ্য।

কক্সবাজার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ান বলেন, এসব বর্জ্য ও জেলিফিস অপসারণে কাজ করছে জেলা প্রশাসন। কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। সকল বর্জ্য অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত এ কার্যক্রম চলবে।

বাংলাদেশ সময়: ২১০২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২, ২০২৩
এসবি/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।