ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

নির্মাণ নীতিমালা মানা ছাড়া ভবন নয়

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২৩
নির্মাণ নীতিমালা মানা ছাড়া ভবন নয়

ঢাকা: ভবন নির্মাণে কেউ যেন বিল্ডিং কোড অগ্রাহ্য না করে, সে জন্য কঠোর হতে বলেছেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ। নির্মাণ নীতিমালা মানা ছাড়া কোনো ভবন উঠতে দেওয়া হবে না বলেও তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘ভূমিকম্প দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসের প্রস্তুতি ও করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। সেমিনারের আয়োজন করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব)।

শরীফ আহমেদ বলেন, তুরস্ক-সিরিয়ার ভূমিকম্পের হতাহত আমাদের সজাগ করে দিয়েছে। আমাদের যেসব উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে সেগুলো ভূমিকম্প সংবেদনশীল। ভূমিকম্প স্পর্শকাতর আরও কোনো বিষয় থাকলেও সেগুলো যুক্ত করা হবে।  

প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, যা পূর্বে হয়নি, তা করত হবে। এ জন্যই এই অনুষ্ঠানের আয়োজন। অঞ্চল ভেদে মাটি কতটুকু সক্ষমতা রাখে সেটা ভবন নির্মাণ সম্পর্কিত বিস্তারিত নির্দেশনা যুক্ত করতে হবে। তাহলে সাধারণ মানুষ তার কষ্টার্জিত একখণ্ড জমি কেনার আগে সে মোতাবেক সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এটি সাধারণ মানুষের সেবায় কাজে লাগবে।

তিনি বলেন, রাজধানীতে আজ থেকে বিল্ডিং কোড মানতে কঠোরভাবে তদারকি করতে হবে। রাজউকের টিম পরিদর্শন করতে যাবে। বিল্ডিং কোড মানা ছাড়া ঢাকার শহরে কোনো বিল্ডিং উঠতে দেওয়া হবে না। মার্কেট, বাজার, স্কুল বা অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল- রাজউকের পক্ষ থেকে সেগুলোকে চিহ্নিত করতে হবে। তারপর যে সকল প্রতিষ্ঠান বা ভবন মেরামত করা লাগলে মেরামত করতে হবে, সংশোধন করতে করা লাগলে সংশোধন করতে হবে। আর অবশিষ্ট ভবন যদি ভাঙতে হয়, সরকারের অনুমতি সাপেক্ষে মানুষের জীবনের স্বার্থে সেগুলো অবশ্যই ভেঙে দিতে হবে।

অনুষ্ঠানে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব মো. কামরুল ইসলাম বলেন, ভূমিকম্পের কোনো পূর্বাভাস নেই। ভূমিকম্পের ক্ষয় ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে হলে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে, সতর্ক থাকতে হবে। তার অংশ হিসেবে ভবন নির্মাণ সম্পর্কিত যা যা করনীয় আছে সেগুলো করতে হবে। রাজধানীর গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির ও সুয়ারেজ যে লাইন করা হয়েছে সেগুলো সব অপরিকল্পিত। ভূমিকম্প হলে সব বন্ধ হয়ে যাবে। এ থেকে আরেক ক্ষতি হবে। এ জন্য এগুলো নিরাপদ করতে হবে। দুর্যোগ পরবর্তী উদ্ধার কার্যক্রমে আমাদের অভিজ্ঞতা আছে। কিন্তু দুর্যোগের পূর্বের অভিজ্ঞতা নেই। আমাদের এই প্রস্তুতি নিতে হবে।

রিহাবের সহ-সভাপতি সোহেল রানা সেমিনারে বলেন, ১৯৯১ সালের আগে যেসব ভবন নির্মাণ করা হয়েছে তার অধিকাংশ বিল্ডিং কোড মেনে বানানো হয়নি, ভূমিকম্প হলে এ সব ভবনের অধিকাংশ বিপর্যস্ত হবে।

সেমিনারের মূল প্রবন্ধে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) প্রফেসর মেহেদী আহমেদ আনসারী ভূমিকম্পে ছয়টি নির্দেশনা তুলে ধরেন। যার মধ্যে রয়েছে- নিজ দেশের প্রকৌশলী, স্থপতি ও পরিকল্পনাবিদদের ভূমিকম্প বিষয়ে প্রশিক্ষণ; সদ্য পাস করা সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের বিএনবিসি’র ওপর কমপক্ষে তিন মাস প্রশিক্ষণ দান, প্রফেশনাল সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের ৩ সপ্তাহের ভূমিকম্প সহনশীল ডিজাইন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া; আরবান রেজিলিয়েন্স প্রজেক্টের মাধ্যমে প্রণয়নকৃত ইসিপিএস চালু করা; তৃতীয় পক্ষ দিয়ে ভেটিংয়ের মাধ্যমে নতুন ও পুরাতন ভবনের ডিটেল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাসেসমেন্ট করা; থার্ড পার্টি ভেটিংয়ের পর নতুন ও পুরাতন ভবনের অকুপেন্সি সার্টিফিকেট প্রদান।

বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় অপর ‘আরবান ঝুঁকি হ্রাসে আন্তর্জাতিক পরিকল্পনা’ প্রকল্পয় আওতায় র‌্যাপিড ভিজ্যুয়াল অ্যাসেসমেন্টে বলা হয়েছে, স্কুল, হাসপাতাল, ফায়ার স্টেশনের মতো প্রতিষ্ঠানের ১৮ শতাংশ ঝুঁকিপূর্ণ।   স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল ও পুলিশ স্টেশনের মতো ৩ হাজার ২৫২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫৭৯টিতে সমস্যা পাওয়া গেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হলো স্কুল ও কলেজ। এরপরে রয়েছে হাসপাতাল, ফায়ার স্টেশন ও অন্যান্য সরকারি স্থাপনা। দক্ষিণ ঢাকায় এ সব সমস্যা বেশি।

রাজউকের চেয়ারম্যান মো: আনিছুর রহমান মিঞার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন; স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সচিব (সুরক্ষা) মো. আব্দুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২৩
জেডএ/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।