ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সাঁওতাল শিশুদের জন্য নিজস্ব বর্ণমালার পাঠ্যপুস্তকের দাবি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৩
সাঁওতাল শিশুদের জন্য নিজস্ব বর্ণমালার পাঠ্যপুস্তকের দাবি

ঢাকা: নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় সাঁওতাল শিশুদের জন্য প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সাঁওতালি বর্ণমালার পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নসহ ৭ দফা দাবি জানিয়েছে এই ক্ষুদ্র নৃ-জনগোষ্ঠীর লোকেরা। শুক্রবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধনে তারা এসব দাবি জানান।

উত্তরবঙ্গ আদিবাসী ফোরাম, সাঁওতাল লেখক ফোরাম, আদিবাসী সাঁওতাল ফেলোশিপ সমিতি, সান্তাল রানাজোট সমিতি, সাঁওতাল সমন্বয় পরিষদ, দ্য সান্তালস টাইমস ডট কম, সান্তালি নিউজ২৪ ডট কম যৌথভাবে এ মানববন্ধনের আয়োজন করে।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিশুরা প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাতে নিজস্ব মাতৃভাষায় শিক্ষার সুযোগ পায়, সে লক্ষ্যে সরকার এগিয়ে এলেও সাঁওতালদের ক্ষেত্রে তা করা হয়নি। ফলে সাঁওতাল শিশুরা মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ২০১০ সালে প্রাথমিক পর্যায়ে ৬টি আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে নির্বাচন করে এবং ইতোমধ্যে ৫টি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর শিশুদের জন্য পাঠ্য পুস্তক প্রণয়নের কাজ শেষ করেছে। কিন্তু সাঁওতালদের মধ্যে লিপি বিতর্কের অজুহাতে এখনো তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি।

তারা আরও বলেন, একটি শিশুর স্বকীয়তা, সৃজনশীলতা, মননশীলতা ও মেধার বিকাশ হয় তার মাতৃভাষার মধ্য দিয়ে। এদিক দিয়ে সাঁওতাল শিশুদের নিজ মাতৃভাষায় অক্ষরজ্ঞান না থাকায় তাদের সংস্কৃতিও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই এদেশে প্রত্যেক সাঁওতাল শিশুর নিজস্ব ভাষা ও ভাষার বর্ণমালা শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম।

তারা আরও বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে উপজাতি ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ভাষা, সংস্কৃতি রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু তারা তাদের প্রতিশ্রুতি রাখেনি। উল্টো সংবিধানে উল্লেখিত ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ উন্নয়ন ও বিকাশে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। সরকার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মাতৃভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রক্ষায় দৃশ্যমান কোন কার্যক্রম দেখাতে পারেনি। দেশের ৫০টি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর প্রায় ২০ লাখ শিশু নিজস্ব মাতৃভাষার শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। আজকে তারা নিজস্ব মাতৃভাষায় কথা বলতে পারে না, লিখতে পারে না, ভুলে যেতে বসেছে তাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, লোকগাঁথা, প্রবাদ-প্রবচন ইত্যাদি।

তাই সাঁওতাল শিশুদের জন্য প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সাঁওতাল বর্ণমালার পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নসহ ৭ দফা দাবি জানান তারা।

তাদের দাবিগুলো হলো- সাঁওতালদের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় ২০২৩ সালের মধ্যে প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সাঁওতাল শিশুদের জন্য নিজস্ব বর্ণমালায় পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের কাজ শেষ করা; প্রতিটি জেলায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কালচারাল একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মধ্য থেকে প্রতিনিধি ও কর্মকর্তা নিয়োগ নিশ্চিত করা; ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রক্ষার সরকারি উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি পৃথক বরাদ্দের ব্যবস্থা করা; টিভি, বেতার ও বিভিন্ন মিডিয়ায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর  ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যর সঠিক তথ্য তুলে ধরা এবং তাদের অংশ নেওয়ার ব্যবস্থা করা; সরকারিভাবে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মধ্যে বিভিন্ন শিক্ষা, সাংস্কৃতিক ও খেলাধুলার প্রতিযোগিতা আয়োজন করা; ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী অধ্যুষিত অঞ্চলে পুকুর ও জলমহালগুলো ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীকে ইজারা দেওয়ার ব্যবস্থা করা; তাদের জমি-জায়গা, কবর-শ্মশান এবং পূজা-পার্বনের স্থান দখল বন্ধে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠন করা।

এ সময় উত্তরবঙ্গিআদিবাসী ফোরামের সিনিয়র সহ-সভাপতি বদন মুরমুর সভাপতিত্বে মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. প্রভাত টুডু, সাওতাল লেখক ফোরামের সভাপতি লেখক ও কলামিস্ট মিথুশিলাক মুরমু, মিল্কী সেদেক হাঁসদা, প্রফুল্ল টুডু, তমা মুরমু প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৩
এসসি/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।