ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

জাজিরা দুর্ঘটনা

মাকে নিয়ে আমেরিকা ফেরা হলো না লিমার

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩১৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০২৩
মাকে নিয়ে আমেরিকা ফেরা হলো না লিমার লিমা ও তার মা

শরীয়তপুর: মায়ের অসুস্থতার খবর পেয়ে আমেরিকা থেকে গত নভেম্বরে বাংলাদেশে আসেন ইঞ্জিনিয়ার শারমিন আক্তার লিমা। সোমবার (১৬ জানুয়ারি) দিবাগত রাতে অ্যাম্বুলেন্সে করে চিকিৎসার উদ্দেশে ঢাকায় যাচ্ছিলেন।

পথে ভোর রাতে পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের টোলপ্লাজা সংলগ্ন সড়কে দুর্ঘটনায় নিহত হন মা-মেয়েসহ অ্যাম্বুলেন্সে থাকা ছয়জন।

নিহত মা-মেয়ে হলেন- পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার আনারসিয়া গ্রামের লতিফ মল্লিকের স্ত্রী জাহানারা বেগম (৫৫) ও মেয়ে লুৎফুন্নাহার লিমা (৩০)। নিহত অন্য চারজন হলেন- লিমার চাচাতো ভাই ফজলে রাব্বি (২৮), বন্ধু বরিশালের আগৈলঝাড়ার মাসুদ রানা (৩০), অ্যাম্বুলেন্সের হেলপার মাদারীপুরের মোস্তফাপুরের বাসিন্দা জিলানি মৃধা (২৬) ও চালক খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার রবিউল ইসলাম (২৮)।

নিহত লিমার স্বজন সূত্রে জানা গেছে, পটুয়াখালীর বাউফলের লতিফ মল্লিক ২০০০ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় থাকেন। ২০১০ সাল থেকে তার মেয়ে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার লুৎফুন্নাহার লিমাও সেখানে চলে যান। এরপর থেকে ফ্লোরিডায় একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করছিলেন। আর লিমার মা জাহানারা বরিশাল শহরের বিএম কলেজ এলাকার এক স্বজনের বাড়িতে থাকতেন। হঠাৎ করে তিনি কিডনি রোগ ও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন। খবর পেয়ে গত নভেম্বর মাসে বাংলাদেশে মায়ের চিকিৎসা করাতে আসেন লিমা। কিছুটা সুস্থ করে মায়ের চিকিৎসা করিয়ে মাকে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল তার। গত দুই দিন আগে জাহানারা বেশি অসুস্থ হলে বরিশালের বেলবিউ ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে সোমবার তাকে ঢাকার বারডেম হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। ওই দিন রাতেই একটি অ্যাম্বুলেন্সে তাকে নিয়ে ঢাকায় রওনা হন লিমা ও তার স্বজনরা।

পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানান, পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের নাওডোবা সেতু এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পেছন থেকে গ্যাস সিলিন্ডারবোঝাই একটি ট্রাকে ধাক্কা দেয় অ্যাম্বুলেন্সটি। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন অ্যাম্বুলেন্সের ছয় আরোহী। খবর পেয়ে মরদেহ উদ্ধার করে জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায় হাইওয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। মঙ্গলবার সকালে মরদেহ শনাক্ত করে নিয়ে যান স্বজনরা।

লিমার বোন শিল্পী আক্তার বলেন, লিমা দীর্ঘদিন ফ্লোরিডায় একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করছিল। মায়ের অসুস্থতার খবর পেয়ে দেশে এসেছিল। মায়ের চিকিৎসা করিয়ে ফ্লোরিডায় নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনায় মা-বোন দুজনকেই হারালাম।

শিল্পী আক্তারের স্বামী কামাল উদ্দিন বলেন, সোমবার রাতে শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় শাশুড়িকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। কিন্তু এই যাওয়া যে শেষযাত্রা হবে, আমরা কখনও ভাবিনি।


হাইওয়ে পুলিশের ফরিদপুর সার্কেলের এএসপি মো. মারুফ হোসেন বলেন, ধারণা করা হচ্ছে অ্যাম্বুলেন্স চালক দীর্ঘ সময় গাড়ি চালানোর কারণে ক্লান্ত থাকতে পারেন। দ্রুতগতিতে অ্যাম্বুলেন্স চালিয়ে পেছন থেকে গ্যাস সিলিন্ডার বোঝাই ট্রাকে ধাক্কা দিলে দুমড়ে মুচড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই ছয় জন নিহত হন। দুর্ঘটনার পর ট্রাকচালক পালিয়ে যান। ট্রাক ও অ্যাম্বুলেন্স উদ্ধার করে শিবচর হাইওয়ে থানায় রাখা হয়েছে। দুর্ঘটনার বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি আমরা। তদন্ত শেষে ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।

এদিকে শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহত ব্যক্তিদের প্রত্যেকের পরিবারকে ১০ হাজার করে টাকা দেওয়া হয়েছে।  

 বাংলাদেশ সময়: ২৩১১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০২৩
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।