ঢাকা, বুধবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

নারিকেল আর কাঁঠালের মুচি’র গুডেগ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭০৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০১৭
নারিকেল আর কাঁঠালের মুচি’র গুডেগ যুগজাকার্তার জিভে-জল-আনা খাবার গুডেগ; ছবি: মাজেদুল নয়ন

যুগজাকার্তা, ইন্দোনেশিয়া থেকে ফিরে:  প্রামবানান মন্দির দেখা শেষে আমাদের হাতে আর খুব বেশি সময় নেই। বেলা একটার মধ্যে হোম সার্ভিসের রুম ছেড়ে দিতে হবে। রাত সাড়ে এগারোটায় জাকার্তা ফেরার ফ্লাইট। এর মধ্যে আবার বিকেলে ভারত মহাসাগর দেখার তাড়া। তাই রুম রাখার মানেও হয় না।

রুম থেকে বের হয়ে আবার গাড়িতে এসে বসলাম। আমার বন্ধু দামার বললেন, যুগজাকার্তায় এসে যদি গুডেগ না খাও তবে ১২ আনা বৃথা।

এই শহরকে ‘কোতা গুডেগ বা গুডেগের শহর’ও বলা হয়।

গত দুদিন ধরেই শুনে আসছি ‘গুডেগ, গুডেগ’।

দামার বললেন, এটা হবে শেষ আকর্ষণ। আমরা সবচেয়ে পুরনো আর সত্যিকারের গুডেগের রেস্টুরেন্টেই যাবো।

গুডেগ রান্নায় পটু বাবুর্চি নায়েম; ছবি: মাজেদুল নয়নযুগজাকার্তার এই বিশেষ ধরনের মুরগীর মাংস রান্নাকে দুনিয়াজোড়া খ্যাতি এনে দিয়েছেন এক নারী। নাম তার ইয়ু ডিজুম। মাস ছয়েক আগে প্রায় ৮৬ বছর বয়সে তিনি পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। সেসময় সারা ইন্দোনেশিয়ায় এই নারীর মৃত্যু একটি বড় খবর ছিল।

যুগজাকার্তা শহরে ঘুরলে বারে বারে রাজার প্রাসাদ চোখে পড়বে। বোঝা যায় প্রাসাদকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে শহর। প্রাসাদ পার হয়ে আমাদের গাড়ি ঢুকে গেল সরু এক গলিতে। এতো সরু গলিতে কেন?দামার বললেন, দ্যাখো, ভাল খাবার হলে মানুষ কত অলিগলি খুঁজে তবেই আসল জায়গায় যায়।

কারাংআসেমে জালান কালিউরাং কেএম ঠিকানায় ডিজুমের প্রথম গুডেগের রেস্টুরেন্ট। এখান থেকেই শুরু গুডেগের যাত্রা। এখন অনেকেই গুডেগ তৈরি করেন। আবার ডিজুমের অনেকেই তার নাম ব্যবহার করে বা ছবি দিয়ে গুডেগ তৈরি করছেন। তবে কেউই ডিজুমের রেস্টুরেন্টের মতো নাম কামাতে পারেননি।

থরে থরে সাজানো গুডেগ রান্নার হরেক উপকরণ; ছবি: মাজেদুল নয়নঅনেকেই দেখা গেলো পার্সেল নিচ্ছেন। দামার বললেন, অনেকেই প্যাকেটে করে জাকার্তা নিয়ে যান। জাকার্তাতেও দোকান রয়েছে। কিন্তু মানুষ এখান থেকে কিনে খেতেই পছন্দ করেন।

এদেশে বেলা ১২টা থেকে একটার মধ্যেই দুপুরের খাবার খাওয়া হয়ে যায়। সেখানে আমরা পৌঁছেছি গিয়ে বেলা ৩ টায়। তাই দোকান অনেকটাই ফাঁকা। বাইরে গিটার হাতে তিনজন ছেলে। বাজাচ্ছেন আর গান গাইছেন। এই সময়টায় রেস্টুরেন্টের টেবিলের চেয়ে কাউন্টারে পার্সেলের জন্য ভিড়ই বেশি।

লেমিনেটিং করা একটি কাগজে ২২ ধরনের খাবারের নাম। সবই গুডেগ আইটেম। মুরগীর বিভিন্ন অংশের ওপর নির্ভর করে বিভিন্ন ধরনের নাম।

গুডেগের মূল উপাদান কাঠালের মুচি (কচি কাঁঠাল) আর নারিকেল। এখানকার সব উপকরণই নারিকেলের শাঁস থেকে পাওয়া দুধে চুবানো। এরপর গুডেগে মুরগী, ডিম বা তেম্পে ও তাহো চুবিয়ে আঁচ দেয়া হয়।

এখানকার ঝাল, বিশেষ করে শুকনো মরিচের ঝাল আমার সহ্য হয়নি। তাই ঝালহীন খাবারের অর্ডার দিলাম। এখানে প্রায় সব আইটেমের সঙ্গেই দেশি মুরগীর ডিম রয়েছে। ‘নাসি গুডেগ তেলুর পাহা আতাস’ এর অর্ডার দিলাম। তেলুর মানে ডিম আর পাহা আতাস মানে মুরগীর পা।  

খাবার যখন এলো ঠিক যেন মিষ্টির রসে ভেজানো মুরগীর পায়া। উপরে নারিকেল দেয়া। মাংসটা অনেকক্ষণ ধরে সেদ্ধ করা হয়েছে বোঝা যায়।  

সত্যি বলতেই অসাধারণ স্বাদ। এখানে কিছু মরিচের চাটনি ছিল। তবে সেটা আমি ছুঁলাম না। দামার বেশ মজা করে নিল।

খাবার শেষে চলে গেলাম রান্নাঘরে। বাংলাদেশের সাংবাদিক পরিচয় দেয়াতে সেখানকার বাবুর্চি ঘুরে দেখালেন রান্নার কৌশল।  

প্রথমে নারিকেল থেকে দুধ বের করে ছাঁকা হয়। আরেকটি পাত্রে কাঠালের মুঁচি ছোট ছোট টুকরো করে কাটা। মুচি থেকে রস নেয়া হচ্ছে। নারিকেল থেকে পাওয়া তেল, দুধ আর কাঠালের মুঁচির রসেই এই মাংস রান্না করা হয়। এক পর্যায়ে দেয়া হয় নারিকেল।  

কাঠের লাকড়িতে রান্না হচ্ছে গুডেগ; ছবি: মাজেদুল নয়নবাবুর্চি নায়েম বলেন, এই রান্নায় অবশ্যই আগুনকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। এখানে কাঠের লাকড়ি দিয়ে রান্না করা হয়। কারণ গ্যাসের চুলায় এই স্বাদ পাওয়া যাবে না। ঘন্টার পর ঘন্টা আঁচ দিয়ে এই মাংস রান্না করা হয়।  

ডিম যেখানে রান্না করা হয় নিয়ে গেলেন সেখানেও। একইভাবে নারিকেলের রস আর কাঁঠালের মুচির রসে দীর্ঘক্ষণ ধরে আঁচ দিয়ে সেদ্ধ করা হয়। ভাতের সঙ্গেই গুডেগ পরিবেশন করা হয়। এর সঙ্গে গরুর চামড়া ক্রিস্পের মজাও সত্যিই অসাধারণ।

বিভিন্নভাবেই গুডেগ পরিবেশন করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে শুকনো, ভেজা, জুগজার্কাতা স্টাইল, সলো স্টাইল এবং পূর্ব জাভানিজ স্টাইল।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০১৭
এমএন/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।