ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

ফরমালিন আতঙ্ক কাটাতে

লাইফস্টাইল ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২২ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০১৪
ফরমালিন আতঙ্ক কাটাতে

রেহানা পারভীনের ছেলের বয়স পাঁচ। ছেলেকে নিয়েই নিয়মিত বাজারে যেতে হয় তাকে।

ছেলে মারুফের পছন্দের খাবার মাছ। কিš‘ রেহানা মাছ নিয়ে আতঙ্কে ভুগেন। কারণ ঢাকা শহরের মাছে ফরমালিন দেয়া। এ মাছ খেলে অসুখ নিশ্চিত। একই মত রাজধানীর শান্তিনগরে বাজার করতে আসা অন্যান্য গৃহিণীদের।

কেবল শান্তিনগর নয় হাতিরপুল, গুলশান, বনানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে ফরমালিন আতঙ্কের কথা জানা গেল। রাজধানীর ব্যস্ত কাঁচা বাজার হাতিরপুলে সন্ধ্যায় সবজি কিনছিলেন অফিস ফেরত আয়েশা খানম। তিনি বললেন, ‘সবজি বা ফল না যেন বিষ কিনছি। বেশ সন্দেহ নিয়ে এসব সবজি বা ফল কিনি। কী করবো ছেলে মেয়েরা খেতে চায়। ওদের শরীরের জন্যই দরকার। কিন্তু পুষ্টি নিশ্চিত করার নামে অসুখ দিচ্ছি না তো?

এখন এসব বাজারে কেনার আগে বা পরে বোঝার কোনো উপায় নেই ওই সবজি বা ফলে ফরমালিন আছে কিনা। ’ একই কথা বলেন মাছ কিনতে আসা রেহানা পারভীন। তিনি বলেন, ‘কেবল যে বড় বড় মাছে ফরমালিন থাকে তা না ছোট মাছগুলোও ফরমালিন মুক্ত নয়। আরও আতঙ্কের কারণ হচ্ছে, সম্প্রতি কারওয়ান বাজারে ফরমালিন বিরোধী অভিযানের মাধ্যমে বড় ড্রাম ভর্তি ফরমালিন মেশানো পানি জব্দ করা হয়েছে। যেখানে কাচকি মাছ সংরক্ষণ করা হয়েছিল।

বর্ণহীন ফরমালডিহাইড গ্যাসের দ্রবণকে ফরমালিন বলা হয়। ফরমালিন অতিমাত্রায় বিষাক্ত একটি জৈব যৌগ। যা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। জৈব পদার্থ সংরক্ষণে ফরমালিন ব্যবহার করা হয়। বিশেষ করে দ্রুত পচন রোধে ফরমালিন ব্যবহার করা হয়।

সরকারের মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট এর গবেষণায় দেখা গেছে বাজারে প্রাপ্ত মাছে ১% থেকে ৫% মাত্রায় ফরমালিন পাওয়া যায়। বাজারে প্রাপ্ত ফরমালিনের তীব্র ঝাঁঝালো গন্ধ কমাতে এ এ মাত্রায় ফরমালিন ব্যবহার করা হয়। ১% ব্যবহার করলে মাছের পচন রোধ হয়না বললেই ৫% পর্যন্ত ব্যবহার করা হয়।
সরকারের মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউট জানিয়েছে, ফরমালিন কেবল খেলেই নয় গন্ধেও মাথাব্যথা ও শ্বাসকষ্ট জনিত অসুখ হতে পারে। ফরমালিনজনিত শ্বাসকষ্টে মানুষের মৃত্যু হতে পারে। এটি একটি ক্যানসার সৃষ্টিকারী উপাদান। ফরমালিনযুক্ত মাছ খেলে পাকস্থলি, ফুসফুস ও শ্বাসনালীতে ক্যানসার হতে পারে।

বাজারের ক্রেতাদের মূল সমস্যা হচ্ছে কোনো মাছ, ফল এবং সবজিতে ফরমালিন আছে তা বুঝতে পারছে না। মৎস্য মন্ত্রনালয় ‘ফরমালডিহাইড মনিটর’ নামের একটি যন্ত্র ব্যবহার করে সীমিত স্তরে ফরমালিন পরীক্ষা করছে। তবে তা দিয়ে অন্তত রাজধানীর সমস্ত বাজার ফরমালিনমুক্ত করা কঠিন। তবে এ সমস্যা সমাধানে এগিয়ে এসেছে রাজধানীর সুপার শপগুলো।

সুপারশপেই এখন পাওয়া যাচ্ছে ‘ফরমালডিহাইড মনিটর’। দেশের অন্যতম রিটেইল চেইন স্বপ্ন তাদের আউটলেটগুলোতে এ যন্ত্র ব্যবহার করছে। সারি সারি সাজানো মাছ, ফল এবং সবজি কেনার আগে ক্রেতা নিজেই যন্ত্রটি দিয়ে এসব পণ্যে ফরমালিন আছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখতে পারছেন। এক্ষেত্রে ক্রেতাদের বাড়তি কোনো খরচ করতে হচ্ছে না। যার ফলে নিজেরা ফিরে পাচ্ছেন আত্মবিশ্বাস।

এ ফরমালডিহাইড মনিটর মিটারের মাধ্যমে নির্দিষ্ট মাছ, ফল বা সবজি পরীক্ষা করলে খুব সহজেই ফরমালিনের উপস্থিতি এবং মাত্রা সম্পর্কে জানা যাবে। খুবই সহজবোধ্য এ যন্ত্রটি কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ফরমালিন সম্পর্কে তথ্য দিচ্ছে। এ ব্যাপারে স্বপ্নের নির্বাহী পরিচালক সাব্বির হাসান নাসির বাংলানিউজকে বলেন, ‘স্বপ্ন সবসময়ই ফরমালিনের বিরুদ্ধে সোচ্চার।
 
ফরমালিনমুক্ত পণ্য সরবরাহে আমরা সব ধরনের প্রচেষ্টা নিয়ে থাকি। এ প্রচেষ্টার অংশ হিসেবেই নতুন সংযোজন ফরমালিন কিট দিয়ে মাছ, ফল এবং সবজি পরীক্ষা করা। যেন ক্রেতা পণ্য কিনে নিশ্চিত মনে তা খেতে পারেন। ’    

সালেহ জামান
অতিথি লেখক

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।