ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আইন ও আদালত

এবার রিট মামলায় বিবাদী রাজারবাগের পীর

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০২১
এবার রিট মামলায় বিবাদী রাজারবাগের পীর

ঢাকা: ঢাকার শান্তিবাগের এক বাসিন্দার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন জেলায় নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, চুরি, ডাকাতি, মানবপাচারসহ বিভিন্ন অভিযোগে করা ৪৯টি মামলার বৈধতা নিয়ে রিট মামলায় রাজারবাগ দরবার শরিফের পীর দিল্লুর রহমানসহ ৪ জনকে বিবাদী হিসেবে অন্তর্ভুক্তির আবেদন মঞ্জুর করেছেন হাইকোর্ট।

একইসঙ্গে এ সংক্রান্ত সব রিটের শুনানির জন্য ৫ ডিসেম্বর দিন রেখেছেন বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ।

পীর ছাড়া অন্য তিনজন হলেন—নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের গোলাম কবিরের ছেলে সাকেরুল কবির, একই জেলার সুধারামের মোহাম্মদ হোসেনের ছেলে ফারুকুর রহমান এবং কুমিল্লার হোমনার লিয়াকত হোসেন প্রধানের ছেলে মফিজুল ইসলাম।

মঙ্গলবার (৩০ নভেম্বর) রিটকারীদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এমাদুল হক বশির ও শিশির মনির। অপরপক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম কে রহমান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।

আইনজীবী এমাদুল হক বশির বলেন, প্রথম রিটে আমরা কিন্তু রাজারবাগ পীরকে বিবাদী করিনি। কিন্ত সিআইডির তদন্ত রিপোর্টে নাম আসায় তিনিসহ চারজনকে বিবাদী করতে আবেদন করি। মঙ্গলবার সেই আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত। আর শুনানির জন্য ৫ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেছেন।

আইনজীবী এমাদুল হক বসির বলেন, ঢাকার শান্তিবাগ এলাকার বাসিন্দা একরামুল আহসান কাঞ্চনের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন জেলায় নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, চুরি ডাকাতি, মানবপাচারসহ বিভিন্ন অভিযোগে ৪৯টি মামলা দায়ের হয়। এসব মামলায় তিনি ১ হাজার ৪৬৫ দিন জেলে খেটেছেন। কিন্তু একটি মামলারও বাদীকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ বিবেচনায় তিনি অনেক মামলাতে খালাস পেয়েছেন। এর প্রতিকার চেয়ে তিনি হাইকোর্টে রিট করেন।

হাইকোর্ট গত ১৪ জুন এক আদেশে একরামুল আহসান কাঞ্চনের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন এলাকায় দাখিল করা ৪৯টি মামলার বাদীকে খুঁজে বের করতে সিআইডিকে নির্দেশ দেন। এছাড়া ওই ৪৯টি মামলার বৃত্তান্ত নিয়ে ৬০ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।

এরপর সিআইডি প্রতিবেদন দাখিল করে। সিআইডির প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘একরামুল আহসান কাঞ্চনের বিরুদ্ধে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় সর্বমোট ৪৯টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলাগুলো সম্পর্কে প্রকাশ্য ও গোপনে অনুসন্ধান করে জানা যায়, অধিকাংশ মামলার বাদী, সাক্ষী, ভুক্তভোগীরা কোনো না কোনোভাবে রাজারবাগ দরবার শরিফ এবং ওই দরবার শরিফের পীরের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ’

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের একটি তদন্ত প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে সিআইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘রাজারবাগের দরবার শরিফের পীর দিল্লুর রহমান এবং তার অনুসারীরা তাদের দরবার শরিফের স্বার্থ হাসিলের জন্য নিরীহ জনসাধারণের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করে আসছেন বলে তাদের তদন্ত প্রতিবেদনে প্রকাশ করেছে। ’

এদিকে মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ এনে রাজারবাগের পীর ও তার মুরিদদের বিরুদ্ধে অন্তত ৮ ভুক্তভোগী গত ১৬ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টে রিট আবদেন করেন। ওই রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে ১৯ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট রুলসহ এ আদেশ দেন।

রুলে আবেদনকারীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মিথ্যা ও হয়রানিমূলক ক্রমাগত ফৌজদারি মামলা দায়েরে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়েছেন। এ রুল বিবেচনাধীন থাকা অবস্থায় আবেদনকারীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন হয়রানিমূলক মামলা দায়েরের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত ও প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে সিআইডিকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

আদেশে রাজারবাগের কথিত পীর দিল্লুর রহমান ও তার প্রতিষ্ঠানগুলোর নামে দেশের বিভিন্ন স্থানে যেসব সম্পদ রয়েছে, তা নির্ণয় করে সম্পদের উৎস সম্পর্কে দুর্নীতি দমন কমিশন এবং পীর ও তার পৃষ্ঠপোষকতায় উলামা আঞ্জুমান বাইয়িন্যাত অথবা ভিন্ন কোনো নামে কোনো জঙ্গি সংগঠন আছে কিনা, সে বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দিতে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটকে নির্দেশ দেওয়া হয়। এসব বিষয়ে একইসঙ্গে ৫ ডিসেম্বর শুনানি হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩১ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০২১
ইএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।