ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

‘মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি নিশ্চিহ্ন করতেই সমাবেশে হামলা’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২২২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০২০
‘মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি নিশ্চিহ্ন করতেই সমাবেশে হামলা’

ঢাকা:  ‘বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সমাবেশে হামলাকারীরা জঙ্গি সংগঠন হরকতুল জিহাদের সদস্য। দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলার মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র নস্যাৎ করতে এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করার জন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে সিরিজ বোমা হামলার মাধ্যমে নারকীয় হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তারা।’ 

এ ঘটনায় দায়ের মামলায় সোমবার (২০ জানুয়ারি) দেওয়া রায়ে আদালতের পর্যবেক্ষণে এমনটাই উঠে এসেছে। গত ১ ডিসেম্বর মামলার বিচার কার্যক্রম শেষে রায়ের জন্য সোমবার দিন ধার্য করা হয়েছিল।

 

সে অনুযায়ী রায়কে ঘিরে সকাল থেকেই ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের সামনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। এই মামলায় কারাগারে থাকা চার আসামিকে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে প্রিজন ভ্যানে করে আদালতে আনা হয়।  

প্রথমে তাদের রাখা হয় মহানগর দায়রা জজ আদালতের কোর্ট হাজতে। রায় ঘোষণার আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তাদের কাঠগড়ায় নিয়ে যাওয়া হয়।  

মহানগর দায়রা জজ আদালতের দোতলায় এজলাস কক্ষে ঢুকতে বসানো হয় স্ক্যানার মেশিন। কয়েকজন গণমাধ্যম কর্মী ও মামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত আইনজীবী ছাড়া কেউই ওই কক্ষে প্রবেশ করতে পারেননি। এমনকি যে আইনজীবীরা মামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত নন, তাদেরও ঢুকতে দেওয়া হয়নি।  

আসামিদের হাজির করার কিছুক্ষণ পর আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। বিচারক ১০৪ পৃষ্ঠার রায়ের হামলার ঘটনার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা তুলে ধরেন।  

এরপর সংক্ষিপ্ত আকারে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্যও বর্ণনা করেন। রায়ে বলা হয়, এই মামলায় ৬ জন তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হওয়ার পর সপ্তম তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে সিআইডি পুলিশের পরিদর্শক মৃণাল কান্তি সাহা অভিযোগপত্র জমা দেন।  

‘মূলত ভারতের দ্য হিন্দু পত্রিকার অনলাইনে হুজির দুই সদস্যের এই ঘটনার বিষয়ে বর্ণনা এবং আসামি মঈনুদ্দিনের ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দির সূত্রেই অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। বিচারেও এ দুটি বিষয়কে প্রধান্য দেওয়া হয়েছে। ’

এরপর সাক্ষীদের দেওয়া জবানবন্দিরও সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেন বিচারক। বিশেষ করে ১০৭ জন সাক্ষীর মধ্যে মাত্র ৩৮ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণের মাধ্যমেই এই দণ্ড দেওয়ার বিষয়ে মতামত তুলে ধরেন আদালত। এক্ষেত্রে অনেক সাক্ষী ইতোমধ্যে মারা গেছেন বলেও উল্লেখ করা হয়।  

বিচারের সংক্ষিপ্ত বিবরণ উল্লেখ করার পর রায়ে কার বিরুদ্ধে কী অভিযোগ, দণ্ড ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে রায় ঘোষণা শেষ করেন বিচারক।  

রায়ে বলা হয়, আসামি আরিফ হাসান ওরফে সুমন ওরফে আব্দুর রাজ্জাক ও মো. নূর ইসলাম সিপিবির সমাবেশে বোমা বিস্ফোরণ ঘটালে ঘটনাস্থলেই ২৩ জন ব্যক্তি গুরুতর আহত হন, যাদের মধ্যে অনেকেই শারীরিকভাবে অক্ষম হয়েছেন ও পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। বোমার আঘাতে সব আহত ভিক্টিমেরই নিহত হবার আশঙ্কা ছিল।

সাক্ষ্যপ্রমাণ পর্যালোচনায় আদালতের অভিমত, আসামিরা জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামীর (হুজি) সদস্য।  তাদের ধারণা বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির লোকেরা কাফের, বিধর্মী, নাস্তিক, ইসলাম ধর্মে তারা বিশ্বাসী নয়। ইসলাম ধমের শত্রু এবং আল্লাহ খোদা মানে না।  

সে কারণে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিকে নিশ্চিহ্ন করার উদ্দেশ্যে আসামিরা এই বোমা হামলা ঘটিয়েছে।  

২০০১ সালের ২০ জানুয়ারি এই হামলার সময় আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় ছিল। রায়ে বলা হয়, তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করতে এবং বিব্রত করার জন্য এই হামলা ঘটানো হয়ছে।  

সাক্ষ্য প্রমাণ পর্যালোচনায় দেখা যায়, দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। মুফতি হান্নানের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলেও সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের অপর মামলায় ২০১৭ সালের ১২ এপ্রিল মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়। তাই ২০১৭ সালের ১৩ জুন তাকে এই মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।  

এরপর দুই আসামির খালাসের বর্ণণা দিয়ে রায়ে বলা হয়, ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আসামি মুফতি মঈন উদ্দিনের জবানবন্দি পর্যালোচনায় দেখা যায়, মুফতি মঈন উদ্দিন জবানবন্দিতে মশিউর রহমান ও রফিকুল আলম মিরাজকে সম্পৃক্ত করে কোনো বক্তব্য দেননি। এমনকি ওই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতেও এই আসামিদের নাম নেই।  

এদিকে দণ্ডিত আসামিরা যে এই ঘটনা ছাড়া অন্য হামলায়ও জড়িত সেকথা উল্লেখ করে তাদের নামে থাকা মামলার বিবরণও রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে।

পড়ুন>>‘খালাস পাওয়া দু’জন সিপিবির কর্মী’
       >>সিপিবির সমাবেশে হামলার রায়ে যা বললেন আদালত 

আদালতের রায়ে বলা হয়, এই আসামিদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা মামলাসহ বিস্ফোরক আইনের মামলা রয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে সিরিজ বোমা হামলার মাধ্যমে নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছেন তারা।  

পল্টনে সিপিবির সমাবেশের হামলা যে এই আসামিরাই ঘটিয়েছেন তা রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে।  

রায়ে বলা হয়, এ ধরনের হামলা পবিত্র কোরআনও সমর্থন করে না। সবশেষ দণ্ডের ঘোষণা দিয়ে রায়ে বলা হয়, এ অবস্থায় এই আদালত মনে করে যে, মৃত্যুদণ্ড এই আসামিদের উপযুক্ত ও একমাত্র শাস্তি হওয়া উচিত। সেহেতু আদালত ১০ আসামিকে ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির ৩০২/১২০বি/৩৪ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড এবং প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হলো।  

পড়ুন>> সিপিবির সমাবেশে হামলা: ১০ জনের মৃত্যুদণ্ড

আর অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় এই মামলার পলাতক আসামি মশিউর রহমান এবং রফিকুল আলম মিরাজকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে।  

পড়ুন>>সিপিবি সমাবেশে হামলা মামলার রায়ের অপেক্ষা, আসামিরা আদালতে 

বাংলাদেশ সময়: ১৭১১ ঘণ্টা, জানয়ারি ২০, ২০২০
কেআই/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।