ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় আমাদের অর্জন ও করণীয়

ল ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১২১ ঘণ্টা, অক্টোবর ২, ২০১৫
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় আমাদের অর্জন ও করণীয়

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ’ প্রাপ্তি বাংলাদেশের জন্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঝুঁকিপূর্ণ রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম সারিতেই।

কাজেই আমাদের মতো ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রের জন্য প্রধানমন্ত্রীর এ পুরস্কার আগামী দিনের পরিবেশ মোকাবেলায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

শুধু বাংলাদেশই নয়, এ পুরস্কার বাংলাদেশের মতো আরো অন্যান্য জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ রাষ্ট্রগুলোর জন্য ইঙ্গিতপূর্ণ। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় রাষ্ট্র ও জনগণকে সম্পৃক্ত করে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার যে নজীর আমরা সৃষ্টি করেছি তা ক্ষুদ্র রাষ্ট্রগুলোর জন্য জলবায়ু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় পথ দেখাবে। পুরস্কার প্রাপ্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ ভবিষ্যতে এ কার্যক্রম আরো জোড়দার করবে বলেই বিশ্ব সম্প্রদায় প্রত্যাশা করছে।

ভৌগোলিক অবস্থান ও আর্থ-সামাজিক কারণে বাংলাদেশ জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। প্রতি বর্গকিলোমিটারে এখানে জনসংখ্যার হার অধিকাংশ দেশের চেয়ে বেশি। তাই জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলার চ্যালেঞ্জটাও এখানে বেশি।

অধিক জনসংখ্যা ও বিদ্যমান আর্থ-সামাজিক অবস্থা জলবায়ু ও পরিবেশ সমস্যাকে আরো প্রকট করে তুলছে।

‘জলবায়ু’ কোনো আঞ্চলিক বিষয় নয়। এর প্রভাব কোনো সুনির্দিষ্ট ভৌগোলিক সীমারেখা মেনে চলে না। ফলে, পরিবেশ সংরক্ষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলার পদক্ষেপগুলোও হতে হয় বৈশ্বিক। তবে আন্ত:রাষ্ট্রীয় বা ভৌগোলিক অবস্থানভেদে বিশেষ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়ে থাকে। আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচীর আওতায়ই সাধারণত এসব কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। এটি ‘সাধারণ ও বিশেষায়িত দায়’ বা ‘common but differentiated responsibility’-এর অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ পরিবেশ তথা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার জন্য রাষ্ট্রগুলোকে এক ধরনের সাধারণ দায়িত্ব পালন করতে হয়। আবার কোনো কোনো রাষ্ট্রকে বিশেষ দায়িত্ব গ্রহণ করতে হয়। এ বিশেষ দায়িত্ব গ্রহণের বিষয়টি নির্ভর করে ওই দেশের আর্থ-সামাজিক, শিল্প-প্রযুক্তি ও আরো নানা বিষয়ের ওপর। কার্বন নিঃসরণের বিষয়টি এখানে গুরুত্বপূর্ণ।    

জলবায়ু মোকাবেলায় উন্নত ও উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলোকে একইভাবে এগিয়ে আসতে হবে। এটি বিশ্ব সম্প্রদায়ের একটি সাধারণ বৈশ্বিক দায়।

উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলোই মূলত জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কারণ এ সমস্যা মোকাবেলা করার মতো তথ্য-প্রযুক্তি বা রসদ তার কাছে নেই। যদিও এ বিপর্যয়ের জন্য তারা দায়ী নয়। কিন্তু এর দায়ভার নিতে হচ্ছে তাদেরই। এখানেই শিল্পোন্নত রাষ্ট্রগুলোর বিশেষ ভূমিকা। শিল্পোন্নয়ন তথা কার্বন নিঃসরণের জন্যই আজকের এ বৈশ্বিক উষ্ণতা। তাই তাদেরকে এগিয়ে আসতে হবে এ সমস্যা মোকাবেলার জন্য।  

কাজেই উন্নত বিশ্বকে দরিদ্র ও উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলোর পাশে দাঁড়াতে হবে। জলবায়ু খাতে তাদের আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। কিন্তু এক্ষেত্রে আশানুরূপ বিনিয়োগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।

অর্থনৈতিক বিনিয়োগ বা সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি কার্বন নি:সরণের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ ও অর্জনে উন্নত বিশ্বকে সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে। কার্বন নি:সরণের মাত্রা হ্রাস করা না গেলে জলবায়ু মোকাবেলায় প্রত্যাশিত ফল পাওয়া যাবে না। তাই সময় এসেছে উন্নত-উন্নয়ন নির্বিশেষে সমন্বীত পদক্ষেপ গ্রহণের।  

কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে আমরা ব্যর্থ হলে আগামীতে এ সংকট আরো তীব্র হবে যা একসময় আর আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবেনা।

জলবায়ু উষ্ণতা মোকাবেলা ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করাই আজকের বড় চ্যালেঞ্জ। সেই সাথে খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন ও বজায় রাখতে হবে। উষ্ণতা ও লবণাক্ততা বৃদ্ধি, মরুকরণ ইত্যাদির ফলে খাদ্য উৎপাদনও ব্যাহত হতে পারে। প্রযুক্তির লাগসই ব্যবহার এ সংকট কিছুটা কমাতে পারলেও দীর্ঘস্থায়ী সমস্যার সমাধান করতে পারবেনা।

রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের নিজস্ব জলবায়ু পরিবর্তন কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা থাকা একান্ত প্রয়োজন। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় জনগণের সম্পৃক্ততা সবচেয়ে বেশি জরুরি। এ সমস্যা কেবল সরকার বা বেসরকারি সংস্থার পক্ষে সমাধান সম্ভব না। তবে রাষ্ট্রকে উদ্যোগী হয়ে সময়োচিত পদক্ষেপ নিতে হবে। জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০০৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০২, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।