ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

ভোক্তা অধিকার রক্ষায় চাই অব্যাহত ভেজাল বিরোধী অভিযান

ল’ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৭ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০১৫
ভোক্তা অধিকার রক্ষায় চাই অব্যাহত ভেজাল বিরোধী অভিযান

প্রতিবছর রমজান মাস এলেই ভেজাল বিরোধী অভিযান জোড়ালো হয়। রাজধানীসহ সারাদেশে প্রায় প্রতিদিনই এ অভিযান পরিচালিত হয়।

এসব অভিযানে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্যপণ্য ও ইফতারি তৈরির অপরাধে কিছু প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়। অন্যান্য আইনগত ব্যবস্থাও নেওয়া হয় কোনো কোনো ক্ষেত্রে।

এসব অভিযান পরিচালনা করা হলেও বাজারে এর তেমন কোনো প্রভাব পড়েনা। যে সর্বগ্রাসী ভেজাল আমাদেরকে গ্রাস করেছ তার বিরুদ্ধে ব্যাপক ও কার্যকর অভিযান পরিচালনা করা জরুরি। আইনের বাস্তবায়ন, অপরাধীদের দৃষ্টামূলক শাস্তি, ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধসহ আরো কিছু কঠিন পদক্ষেপ নিলে ভোক্তাসমাজ আইনের সুফল পাওয়া যেতে পারে।

রমজান শেষ হলেই এ অভিযানে ভাটা পড়ে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় যেনো দেশ থেকে সব ভেজাল দূর হয়ে গেছে। এ ভেজাল বিরোধী অভিযান সবসময় অব্যাহত থাকলে তা আরো কার্যকর হবে বলে মনে হয়।

যেসব অভিযোগে জরিমানা ও আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয় তার মধ্যে রয়েছে, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্য উৎপাদন, পণ্যের মোড়কে এমআরপি লেখা না থাকা, মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বিক্রি, ওজনে কারচুপিসহ বিভিন্ন অপরাধ।

‘ভোক্তা অধিকার’ নতুন কোনো ধারনা নয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভোক্তা অধিকার বিষয়ক আইন আছে। তারা এ আইন প্রয়োগের মাধ্যমে সুফলও পেয়ে আসছে। কার্যকর ভোক্তা আইনের ফলে জনস্বার্থ তথা ভোক্তা অধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।

আমাদের দেশে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ প্রণয়নের আগে ভোক্তা অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য তেমন কোনো কার্যকরা ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়নি। তবে, এক্ষেত্রে আইন না থাকার চেয়েও বড় কারণ হচ্ছে সচেতনতার অভাব। সুনির্দিষ্ট বা পূর্ণাঙ্গ আইন না থাকলেও বিভিন্ন আইনের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া যেতো। কিন্তু মূল বিষয়টি ছিল সচেতনতার অভাব। ভোক্তা অধিকার আন্দোলন এখানে সফল হতে পারেনি। এখনো ‘ভোক্তা অধিকার’ ধারণাটি প্রতিষ্ঠা পায়নি।

২০০৯ সালের আইন প্রণয়নের আগে দণ্ডবিধির মাধ্যমে অপরাধীদের বিচার যেতো। ছিল অন্যান্য কয়েকটি আইন যেমন বিএসটিআই অধ্যাদেশ ১৯৮৫, অত্যাবশ্যক পণ্যসামগ্রী আইন ১৯৫৬, নিরাপদ খাদ্য আইন ১৯৫৯, পণ্য বিক্রয় আইন ১৯৩০, ওজন ও পরিমাপ আইন ১৯৮২ ও এক্রেডিটেশন বোর্ড আইন ২০০৬। সবগুলো আইনেই ভোক্তা অধিকারের কথা বলা আছে।

দণ্ডবিধির ত্রয়োদশ অধ্যায়ে ২৬৪-২৬৭ ধারায় ওজনে হেরফের বিষয়ক অপরাধের দণ্ড নিশ্চিত করা হয়েছে। দণ্ডবিধির চতুর্দশ অধ্যায়ে রয়েছে আরো কয়েকটি অপরাধের বিচার করার সুযোগ।

২৬৮ থেকে ২৯৪খ ধারায় জনস্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, নাগরিক সুযোগ-সুবিধা ইত্যাদি বিষয়ক অপরাধগুলোর বর্ণনা ও শাস্তির বিধান নিশ্চিত করা হয়েছে। ২৭২ ধারায় খাদ্য ও পানীয় দ্রব্যে ভেজাল দেয়া হলে অপরাধীদের ছয় মাসের কারাদণ্ড প্রদান ও ১০০০ টাকা জরিমানার বিধান আছে। তবে, দণ্ডবিধিতে যে শাস্তির বিধান আছে তা বর্তমান প্রেক্ষাপটে খুবই অপ্রতুল। ১০০০ টাকা জরিমানা ও ছয় মাসের জেল দিয়ে বর্তমানে দেশে যে ভেজাল বাণিজ্য বিস্তার করেছে তার পথ রুদ্ধ করা যাবেনা।
 
এ প্রেক্ষাপটেই ২০০৯ সালে সরকার একটি পূর্ণাঙ্গ আইন প্রণয়ন করে।

আইন প্রয়োগের ফলে ভোক্তা অধিকারের ক্ষেত্রে ন্যায্যতা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আইনটি প্রণয়নের ফলে ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও ভোক্তা তথা জনগণ এর সুফল পেতে শুরু করেছে।  

আইনের কিছু সীমাবদ্ধতা ছাড়া এটি যথেষ্ট কার্যকর একটি আইন। ৬০ ধারা অনুযায়ী কেবলমাত্র ক্ষমতাপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তারাই এ আইনের আওতায় মামলা করতে পারবে। একজন সাধারণ ভোক্তা সরাসরি অপরাধীদের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেনা। তাকে আইনানুযায়ী প্রতিষ্ঠিত ডিজি বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দপ্তরে আগে অভিযোগ দায়ের করতে হয়। আরেকটি সীমাবদ্ধতা হলো, অভিযোগ দায়েরের ৯০ দিনের মধ্যে চার্জশিট দাখিল করা না হলে অভিযোগ আমলে নেয়া হয়না।

তবে, যাই হোক, ভেজালের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকলে ও কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা থাকলে জনগণ ভোক্তা অধিকার আইনের সুফল পেতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ১২১৮ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০১৫
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।