ঢাকা: ‘আয়নাঘর’ পরিদর্শনের সময় সামনে আসা ইলেকট্রিক চেয়ারটি শক দেওয়ার জন্য নয়। ওই চেয়ারে বসিয়ে ভুক্তভোগী ব্যক্তিকে ঘোরানো হতো বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, একটা চেয়ারে বসিয়ে যখন হাত পা বেঁধে দিয়ে ঘোরানো হয়, কী পরিণতি হতে পারে, আপনারা সেই বীভৎসতা কল্পনা করতে পারেন!
বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ট্রাইব্যুনালে এক ব্রিফিংয়ে এমন মন্তব্য করেন তিনি। জুলাই গণহত্যা নিয়ে জাতিসংঘের দেওয়া প্রতিবেদন এবং আয়নাঘর পরিদর্শন নিয়ে এ ব্রিফিং করা হয়।
বুধবার রাজধানীর কচুক্ষেত, আগারগাঁও এবং উত্তরা এলাকার তিনটি গোপন বন্দিশালা পরিদর্শন করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
পরিদর্শনকালে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ছিলেন দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যম, গুম তদন্ত কমিশন ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরাসহ আয়নাঘরে গুম হওয়া ভুক্তভোগীরা। পরিদর্শনকালে প্রধান উপদেষ্টাসহ উপস্থিত প্রতিনিধিরা সেখানে নির্যাতনের জন্য ব্যবহৃত উপকরণ দেখতে পান। ভুক্তভোগীরা তাদের নির্যাতনের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন।
আয়নাঘর নিয়ে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, আয়নাঘর অর্থাৎ গোপন যে নির্যাতন কেন্দ্র, টর্চার সেল এবং বন্দিশালা; গত ১৫ বছর ধরে সাবেক সরকার সিস্টেমেটিকভাবে দেশের ভিন্নমতকে দমন করার জন্য নির্যাতন, গোপনে হত্যা এবং গোপনে বন্দি করা একটা সংস্কৃতিতে পরিণত করেছিল। সেটা উন্মোচিত হয়েছে।
‘প্রধান উপদেষ্টা গতকাল তিনটি প্রধান গোপন বন্দিশালা পরিদর্শনে গিয়েছেন। সেখানে আমরা গুম কমিশন, বিভিন্ন দেশের সাংবাদিক এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর, তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক ভিজিট করেছি। যে বীভৎসতার চিত্র আমরা দেখেছি... যে সমস্ত ইলেক্ট্রিক চেয়ারের কথা, যেটা ছবি এসেছে... অনেকে এটা ভুলে বলেছেন শক দেওয়ার জন্য। এটা শক দেওয়ার জন্য না। ওই চেয়ারে বসে আসলে ঘোরানো হতো। একটা চেয়ারে বসিয়ে যখন হাত পা বেঁধে দিয়ে ঘুরানো হয়, কী পরিণতি হতে পারে আপনারা সেই বীভৎসতা কল্পনা করতে পারেন!’
জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং কমিশনের প্রতিবেদন প্রসঙ্গে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, যেহেতু জাতিসংঘ বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও সর্বজন গ্রহণযোগ্য একটা সংস্থা, তাদের প্রতিবেদনটি সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ। কোনো দলের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে প্রতিবেদনটি করা হয়নি। তাদের (প্রসিকিউশন) সঙ্গেও কথা বলেননি জাতিসংঘের তদন্তকারীরা। তারা অপরাধীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। যেখানে কথা বলা দরকার, সেই জায়গায় কথা বলেছেন। সুতরাং এটা অকাট্য দলিল, প্রমাণ হিসেবে এই আদালতে ব্যবহার করা যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ২১০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৫
ইএস/এমজেএফ