ঢাকা: মিশরের সিনাই উপদ্বীপের মধ্যাঞ্চলে বিধ্বস্ত রাশিয়ান উড়োজাহাজটির যাত্রীদের কেউ বেঁচে নেই। তবে, এখন পর্যন্ত পাঁচ শিশুসহ ১৫০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
রাশিয়ার কোলাভিয়া এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজটি শনিবার (৩১ অক্টোবর) বাংলাদেশ সময় দুপুর দেড়টার আগে সিনাইয়ের পার্বত্য এলাকায় বিধ্বস্ত হয়। এ৩২০ এয়ারবাসের ৭কে৯২৬৮ নং ফ্লাইটটিতে ২২৪ আরোহী ছিলেন। এদের মধ্যে ১৭ শিশুসহ ২১৭ জন যাত্রী ছিলেন। বাকি সাত জন ছিলেন ক্রু। যাত্রীদের মধ্যে দু’জন ইউক্রেনিয়ান, একজন বেলারুশিয়ান ও বাকিরা রাশিয়ান নাগরিক ছিলেন।
মিশরের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম জানায়, দুর্ঘটনার পরই ঘটনাস্থলে অর্ধশত অ্যাম্বুলেন্স পাঠানো হয়। ঘটনাস্থল থেকে পাঁচ শিশসহ দেড়শ জনের মরদেহ উদ্ধার করে জরুরি বাহিনী। কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল থেকে উড়োজাহাজটির ব্ল্যাকবক্সও উদ্ধার করেন। এখন আর কেউ বেঁচে নেই।
উদ্ধার তৎপরতা আরও জোরদার করা হয়েছে বলেও জানাচ্ছে মিশরের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। কায়রোয় নিযুক্ত রাশিয়ান দূতাবাসের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন।

এ বিষয়ে রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি মেদভেদেভ এক বিবৃতিতে বলেন, দুর্ঘটনাটি কীভাবে ঘটলো তা জানতে মস্কো পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করবে। দুর্ঘটনার কারণ খুঁজে বের করতে রুশ সরকার বদ্ধপরিকর।
রাতেই মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদুল ফাত্তাহ আল-সিসির সঙ্গে ফোনালাপ করেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি দুর্ঘটনার বিষয়ে সিসির কাছ থেকে নানা খোঁজ খবর নেন।
৭কে৯২৬৮ ফ্লাইটটি মিশরের লোহিত সাগর উপকূলের পর্যটন শহর শার্ম আল-শেইখ থেকে বাংলাদেশ সময় সকাল ৯টা ৫১ মিনিটে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গের উদ্দেশে উড়াল দেয়। উড্ডয়নের ২৩ মিনিট পর ১০টা ১৪ মিনিটে সিনাই উপদ্বীপে পৌঁছালে এটি সংশ্লিষ্ট এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে যোগাযোগ হারিয়ে ফেলে। পরে সিনাইয়ের প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, উড়োজাহাজটি সেখানকার পার্বত্য এলাকায় বিধ্বস্ত হয়েছে। বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টা ১০ মিনিটে গন্তব্যে পৌঁছানোর কথা ছিল ফ্লাইটটির।
দুর্ঘটনার বিষয়ে মিশরের বেসামরিক বিমান পরিবহন কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, উড্ডয়নের ২৩ মিনিট পর সাইপ্রাসের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করার কথা ছিল ফ্লাইটটির। কিন্তু এতে পাইলট ব্যর্থ হলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে উড়োজাহাজটি। শেষ পর্যন্ত সিনাইয়ে বিধ্বস্ত হয়।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাত দিয়ে রাশিয়ান একটি সংবাদ সংস্থা জানায়, উড্ডয়নের পরই যান্ত্রিক ত্রুটিতে পড়েছিল উড়োজাহাজটি। এজন্য এটি কায়রো বিমানবন্দরে অবতরণের জন্য এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে যোগাযোগও করে। তবে এরপরই উড়োজাহাজটি নিখোঁজ হয়ে যায়।
আরেকটি সূত্রের বরাত দিয়ে যুক্তরাজ্যের একটি সংবাদ সংস্থা জানায়, উড়োজাহাজটি ৩০ হাজার ফুট দিয়ে উড়ছিল। এক মিনিটের মধ্যে হঠাৎ এটি পাঁচ হাজার ফুট নিচে নেমে যায়। এরপরই উড়োজাহাজটির সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল রুমের।
দুর্ঘটনার পরই ঘটনাস্থলে ছুটে যাওয়া প্রশাসনিক কর্মকর্তারা সংবাদমাধ্যমকে জানান, উড়োজাহাজটি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে এবং আরোহীদের সবাই নিহত হয়েছেন।

উড়োজাহাজটি যোগাযোগ হারিয়ে ফেললে সংবাদমাধ্যমে এর ‘নিখোঁজ’ হওয়ার খবর ছড়ালেও কিছুক্ষণ পরই মিশরের বেসামরিক বিমান পরিবহন কর্তৃপক্ষের একজন কর্মকর্তা দাবি করেন, ‘উড়োজাহাজটি নিরাপদ রয়েছে। এটি অল্প সময়ের জন্য যোগাযোগ হারালেও পরে আবার পুনর্স্থাপন করতে সমর্থ হয় এবং তুরস্কের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে যোগাযোগ করে গন্তব্যের উদ্দেশে যাচ্ছে। ’ কিন্তু এরপরই মিশরীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পক্ষ থেকে উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হওয়ার খবর দেওয়া হয়। এ নিয়ে বিশ্ব সংবাদমাধ্যমে কিছু সময়ের জন্য ধোঁয়াশারও সৃষ্টি হয়।
এদিকে, জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) মিশর শাখা দাবি করেছে, সিনাই উপদ্বীপে রাশিয়ার উড়োজাহাজটি যান্ত্রিক ত্রুটিতে বিধ্বস্ত হয়নি, তারাই সেটিকে ভূপাতিত করেছে। রাত ৮টার দিকে আইএসের পক্ষ থেকে এ দাবি করা হয়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত এক বিবৃতিতে আইএসের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘খেলাফতের যোদ্ধারা সিনাইয়ে রাশিয়ার একটি উড়োজাহাজ সফলতার সঙ্গে ভূপাতিত করেছেন। ’
তবে, এ বিষয়ে তৎক্ষণাৎ রাশিয়ার কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। প্রতিক্রিয়া জানায়নি মিশরও। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতায় ধরে রাখতে তার বিরোধী ও আইএস নির্মূলে সম্প্রতি বিমান হামলা শুরু করে রাশিয়া। এ নিয়ে জঙ্গি গোষ্ঠী ও মস্কোর মুখোমুখি অবস্থানের প্রেক্ষিতে রুশ উড়োজাহাজটি ‘ভূপাতিত’ করার দাবি করলো আইএস।
অন্যদিকে, উদ্ধার তৎপরতায় মিশর সরকারকে সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছে ইসরায়েল সরকার। তবে এ বিষয়ে কায়রো বা মস্কোর তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। মিশরের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক সংহত হলেও সিরিয়া ইস্যু নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে টানাপোড়েন চলছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০১৫
এইচএ/