ঢাকা: মিশরের সিনাই উপদ্বীপের মধ্যাঞ্চলে ২২৪ আরোহী নিয়ে রাশিয়ার কোলাভিয়া এয়ারলাইন্সের একটি উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়েছে। আরোহীদের মধ্যে ১৭ শিশুসহ ২১৭ জন যাত্রী ছিলেন, যাদের সবাই রাশিয়ান পর্যটক।
শনিবার (৩১ অক্টোবর) বাংলাদেশ সময় দুপুর দেড়টার আগে উড়োজাহাজটি সিনাইয়ের পার্বত্য এলাকায় বিধ্বস্ত হয়। এ৩২০ এয়ারবাসের ৭কে৯২৬৮ নং ফ্লাইটটি মিশরের লোহিত সাগর উপকূলের পর্যটন শহর শার্ম আল-শেইখ থেকে বাংলাদেশ সময় সকাল ৯টা ৫১ মিনিটে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গের উদ্দেশে উড়াল দেয়। উড্ডয়নের ২৩ মিনিট পর ১০টা ১৪ মিনিটে সিনাই উপদ্বীপে পৌঁছালে এটি সংশ্লিষ্ট এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে যোগাযোগ হারিয়ে ফেলে। পরে সিনাইয়ের প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, উড়োজাহাজটি সেখানকার পার্বত্য এলাকায় বিধ্বস্ত হয়েছে। বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টা ১০ মিনিটে গন্তব্যে পৌঁছানোর কথা ছিল ফ্লাইটটির।
এ বিষয়ে মিশরীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, রাশিয়ার একটি বেসামরিক উড়োজাহাজ সিনাই উপদ্বীপের মধ্যাঞ্চলে বিধ্বস্ত হয়েছে। দুর্ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী শরিফ ইসমাইল একটি জরুরি সংকট মোকাবেলা কমিটি গঠন করেছেন।
মিশরের বেসামরিক বিমান পরিবহন কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে দেওয়া বিবৃতিতেও বলা হয়, উড্ডয়নের ২৩ মিনিট পর যোগাযোগ হারানো রাশিয়ান উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়েছে। তবে কী কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটলো, তা জানা যায়নি।
মিশরীয় বেসামরিক বিমান পরিবহন কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, উড্ডয়নের ২৩ মিনিট পর সাইপ্রাসের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করার কথা ছিল ফ্লাইটটির। কিন্তু এতে পাইলট ব্যর্থ হলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে উড়োজাহাজটি।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাত দিয়ে রাশিয়ান একটি সংবাদ সংস্থা জানায়, উড্ডয়নের পরই যান্ত্রিক ত্রুটিতে পড়েছিল উড়োজাহাজটি। এজন্য এটি কায়রো বিমানবন্দরে অবতরণের জন্য এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে যোগাযোগও করে। তবে এরপরই উড়োজাহাজটি নিখোঁজ হয়ে যায়।

আরেকটি সূত্রের বরাত দিয়ে যুক্তরাজ্যের একটি সংবাদ সংস্থা জানায়, উড়োজাহাজটি ৩০ হাজার ফুট দিয়ে উড়ছিল। এক মিনিটের মধ্যে হঠাৎ এটি পাঁচ হাজার ফুট নিচে নেমে যায়। এরপরই উড়োজাহাজটির সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল রুমের।
দুর্ঘটনার পরই ঘটনাস্থলে ছুটে যাওয়া প্রশাসনিক কর্মকর্তারা সংবাদমাধ্যমকে জানান, উড়োজাহাজটি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে এবং আরোহীদের সবাই নিহত হয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
কায়রোয় নিযুক্ত রাশিয়ান দূতাবাসের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন। সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, ঘটনাস্থলে প্রায় অর্ধশত অ্যাম্বুলেন্স পাঠিয়েছে স্থানীয় সরকার।
উড়োজাহাজটি যোগাযোগ হারিয়ে ফেললে সংবাদমাধ্যমে এর ‘নিখোঁজ’ হওয়ার খবর ছড়ালেও কিছুক্ষণ পরই মিশরের বেসামরিক বিমান পরিবহন কর্তৃপক্ষের একজন কর্মকর্তা দাবি করেন, ‘উড়োজাহাজটি নিরাপদ রয়েছে। এটি অল্প সময়ের জন্য যোগাযোগ হারালেও পরে আবার পুনর্স্থাপন করতে সমর্থ হয় এবং তুরস্কের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে যোগাযোগ করে গন্তব্যের উদ্দেশে যাচ্ছে। ’ কিন্তু এরপরই মিশরীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পক্ষ থেকে উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হওয়ার খবর দেওয়া হয়। এ নিয়ে বিশ্বসংবাদমাধ্যমে কিছু সময়ের জন্য ধোঁয়াশারও সৃষ্টি হয়।
এদিকে, উড়োজাহাজটিকে গুলি করে বিধ্বস্ত করা হয়েছে কি না, সে ব্যাপারে মিশরীয় নিরাপত্তা বাহিনী কোনো আলামত পাওয়ার কথা না জানালেও পশ্চিমা একটি সংবাদমাধ্যম এ ব্যাপারে তাদের সন্দেহ প্রকাশ করেছে। সিনাই উপদ্বীপ ইসলামিক স্টেটসহ (আইএস) বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত। সম্প্রতি সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে ক্ষমতায় ধরে রাখতে আইএস নির্মূলে সিরিয়ায় বিমান হামলা শুরু করে রাশিয়া।
** বিধ্বস্ত যাত্রীবাহী প্লেনের সবাই রাশিয়ান
** যোগাযোগ হারানোর পর নিরাপদ রাশিয়ান যাত্রীবাহী প্লেন!
** রাশিয়ার যাত্রীবাহী প্লেন নিখোঁজ নিয়ে ধোঁয়াশা
বাংলাদেশ সময়: ১৪২৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০১৫/আপডেট ১৪৩৯ ঘণ্টা/আপডেট ১৫০৯ ঘণ্টা/আপডেট ১৫২৭ ঘণ্টা/আপডেট ১৬২৬ ঘণ্টা
আরএইচ/এইচএ/