যুদ্ধের প্রথম দিকের অবরোধের মতই ইসরায়েল গাজায় সব ধরনের খাদ্য ও অন্যান্য পণ্য প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছে। জাতিসংঘ এবং অন্যান্য মানবিক সহায়তা সংস্থাগুলো এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছে এবং এটিকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলে আখ্যায়িত করেছে।
রবিবার, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজা যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপে এগোনোর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন এবং স্বীকার করেন যে তিনি গাজার জনগণের ওপর ক্ষুধা চাপিয়ে দিয়ে হামাসের ওপর চাপ সৃষ্টি করছেন।
প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতি চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরেই ইসরায়েল গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশ বন্ধ করে দেয়।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
ইসরায়েলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কঠোর নিন্দা জানিয়েছে বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা। সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে ‘এটি অন্যায় দাবি আদায়ের অস্ত্র’। আন্তর্জাতিক সংস্থা অক্সফাম একে ‘একটি বেপরোয়া এবং নিষ্ঠুর গণদণ্ড হিসেবে’ অবিহিত করেছে। গাজা যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতাকারী মিশর বলছে, ইসরায়েল ক্ষুধাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে।
দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা
গাজার ২০ লাখেরও বেশি মানুষের জন্য খাদ্যাভাব যুদ্ধের পুরো সময় জুড়েই একটি বড় সংকট ছিল। সহায়তা সংস্থাগুলো আগে থেকেই দুর্ভিক্ষের সম্ভাবনা নিয়ে সতর্ক করেছিল। ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি কিছুটা স্বস্তি দিলেও, এখন সেই অগ্রগতি নস্যাৎ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
ইসরায়েল হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে, যদি আলোচনা সফল না হয়, তাহলে তারা যুদ্ধ পুনরায় শুরু করতে পারে।
যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎ ও মার্কিন অবস্থান
যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা এক মাস আগেই শুরু হওয়ার কথা ছিল, তবে তা এখনো অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। হামাস এই আলোচনার ত্বরান্বিত করার আহ্বান জানিয়েছে।
রবিবার সন্ধ্যায়, ইসরায়েল অবিলম্বে গাজায় সহায়তা প্রবেশ বন্ধের ঘোষণা দেয়। এখনো পর্যন্ত, ট্রাম্প প্রশাসন এই সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
আইনি দিক ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ
ইসরায়েলের সহায়তা বন্ধের বিরুদ্ধে দ্রুত নিন্দা জানানো হয়েছে, অনেকে এটিকে আইন লঙ্ঘন হিসেবে দেখছেন। জাতিসংঘের মানবিক প্রধান টম ফ্লেচার বলেন, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন স্পষ্ট: আমাদের জীবন রক্ষাকারী সহায়তা পৌঁছানোর অনুমতি দিতে হবে।
ইসরায়েলের এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন এবং যুদ্ধাপরাধের শামিল উল্লেখ করে পাঁচটি এনজিও দেশটির সুপ্রিম কোর্টে একটি আবেদন করেছে।
রমজানে গাজার মানবিক সংকট
গাজায় সব ধরনের খাদ্য ও অন্যান্য পণ্য প্রবেশ বন্ধ করার এই ঘোষণাটি আসে রমজান মাসের প্রথম ইফতারের কয়েক ঘণ্টা পর, যখন গাজার মুসলিম জনগোষ্ঠী তাদের সন্ধ্যার খাবারের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল।
মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, যুদ্ধবিরতি গাজায় অত্যন্ত প্রয়োজনীয় কিছু স্বস্তি এনেছিল, তবে এটি জনগণের চাহিদা পূরণ করার জন্য যথেষ্ট ছিল না। এই নিষেধাজ্ঞা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে, এবং বিশ্ব এখন একটি নতুন মানবিক সংকটের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে।
সূত্র: টিএরটি
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৭ ঘণ্টা, মার্চ ০৩, ২০২৫
এমএম