ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

‘বাড়ি খালি করতে ইসরায়েল আমাদের মাত্র ৫ মিনিট সময় দিয়েছিল’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩০ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০২৩
‘বাড়ি খালি করতে ইসরায়েল আমাদের মাত্র ৫ মিনিট সময় দিয়েছিল’ কামাল নাভানের আত্মীয় রাহমা নাভান ও তার মেয়ে জোরী

গাজার বাসিন্দা কামাল নাভান। অন্যান্য দিনের মতোই বিকেলে নামাজের জন্য বের হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।

হঠাৎ তার মোবাইলে একটি কল আসে। সেই কলেই চুপ হয়ে যান তিনি। পরে কামালের হাত থেকে মোবাইল নিয়ে নেন তার চাচাতো ভাই আতাফ।

আতাফকে কলের অন্য প্রান্ত থেকে বলা হয়, ‘ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে বলছি। বাড়িটি খালি করার জন্য আপনার কাছে পাঁচ মিনিট সময় আছে। ’

তারা ছুটে যেতে শুরু করে। আতাফ ওই ইসরায়েলি কলারকে বলে, ‘আপনি অবশ্যই ভুল করছেন। কারণ এই ভবনটিতে প্রতিবন্ধীরা থাকে। ’

তবে গোয়েন্দা কর্মকর্তা উত্তরে বলেছেন, ‘না, অবিলম্বে বাড়িটি খালি করুন। ’

নাভান ও তার পরিবার যে ভবনে থাকতেন সেখানে ইসরায়েল তার সতর্কবার্তা পাঠিয়েছিল। পরে মাত্র একটি ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে বাড়িটি ধ্বংস করে দেওয়া হয়।

ওইদিনটি ছিল নয় মাসের মধ্যে গাজায় ইসরায়েলের সবচেয়ে ভয়ংকর বিমান হামলার পঞ্চম দিন। ওইদিন ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের দ্বিতীয় শক্তিশালী জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক জিহাদের অন্তত ছয়জন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিকে হত্যা করে ইসরায়েল।

যদিও ইসরায়েল বলছে, তারা যে ভবনগুলোকে হামলা চালিয়েছে সেগুলো ইসলামিক জিহাদ সরাসরি রকেট উৎক্ষেপণের জন্য ‘কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টার’ হিসেবে ব্যবহার করেছিল। তবে ক্ষতি রোধ করতে বেসামরিক লোকদের সতর্ক করা হয়েছিল।

শনিবার যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মত হওয়ার ঠিক আগে, ইসরায়েল একইভাবে আরও কয়েকটি আবাসিক ভবন ধ্বংস করে। যদিও হামলার আগে ভবনগুলোর বাসিন্দাদের সরে যেতে সতর্কতা দিয়েছিল।

কামাল নাভান

এদিকে স্থানীয় সূত্রগুলো বিবিসিকে বলেছে, ভবনটিতে একজন জঙ্গি বাস করতেন। তবে এটি অপারেশনাল সেন্টার ছিল না।

জাবালিয়ায় কামাল নাভানের বাড়িটি নিজস্ব ভিত্তির ওপরই ধসে পড়েছে। সেখানে আটটি পরিবারের প্রায় ৫০ জন মানুষ থাকতেন। প্রতিবেশীরা সবাইকে বের করে আনতে পেরেছেন।

উদ্ধারকারী দলগুলো বলছে, ভবনটিতে পাঁচজন প্রতিবন্ধী ছিল। তাদের হুইলচেয়ার, বিশেষ বিছানা এবং ওষুধ বিমান হামলায় ধ্বংস হয়ে গেছে।

গাজা ভিত্তিক সোসাইটি ফর রিহ্যাবিলিটেশনের নির্বাহী পরিচালক জামাল আল-রোজি। তিনি পরিবারগুলোকে সাহায্য করতে এসেছিলেন। বলেছেন, তার দল খাদ্য ও চিকিৎসা সরঞ্জাম প্রদান করবে।

তিনি বলেছেন, ‘এটি অসহনীয়, আমি কষ্ট বোধ করি এবং ব্যথা অনুভব করি। কারণ এমন হওয়া উচিত নয়। অন্তত বেসামরিক ব্যক্তিদের জন্য নয়। বিশেষ করে অক্ষম ব্যক্তিদের জন্য নয়। ’

ভবনটির ধ্বংসস্তূপে আশ্রয় নিয়েছেন কামাল নাভানের আরেক আত্মীয় রাহমা নাভান এবং তার স্বামী ইয়াসের। একটি ভাঙা ছাদের স্ল্যাবের নিচে বসে আছেন তারা। তাদের শিশুকন্যা জোরীকে একে অপরের কাছে দিয়ে তার কান্না থামানোর চেষ্টা করছেন।

রাহমা নাভান বলেন, ‘আমার ফুফুরা প্রতিবন্ধী। তারা তাদের মাথা ঢাকতেও সক্ষম ছিলেন না। তাদের হুইলচেয়ারগুলো ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছিল। ’

তিনি বলেন, ‘প্রতিবন্ধী মানুষগুলোর কষ্ট সবাই দেখেছে। তারা বলছিল, কেন ভবনগুলো ধ্বংস করা হলো? এই প্রতিবন্ধীরা কি রকেট ছুড়েতে সক্ষম? এখন আমাদের কিছুই করার নেই। ’

ধ্বংসস্তূপের সামনে দাঁড়িয়ে রাহমা বলেন, ‘আমরা কোথাও যাবো না। আমরা এই সূর্যের নিচেই থাকব, এই সূর্যের নিচেই ঘুমাবো। আমরা এই বাড়ি ছাড়ছি না। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৬ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০২৩
এমএইচএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।