ঢাকা, শুক্রবার, ২৪ মাঘ ১৪৩১, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭ শাবান ১৪৪৬

ভারত

পশ্চিমবঙ্গের রেজাউলকে বাংলাদেশি মনে করে মারধর 

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৫১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২৫
পশ্চিমবঙ্গের রেজাউলকে বাংলাদেশি মনে করে মারধর 

কলকাতা: মুসলিম বিদ্বেষ ভারতে বিক্ষিপ্তভাবে শোনা গেলেও পশ্চিমবঙ্গে তেমনটা ঘটেনা। এবার সেইরকই ঘটনা প্রকাশ্যে এল মুখ্যমন্ত্রী মমতার বাংলায়।

বাংলাদেশি বলে এক পশ্চিমবঙ্গবাসী শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়ছেন। সম্প্রতি এমনই ঘটনা ঘটেছে হুগলি জেলার এক বাসিন্দার সাথে। যিনি বিশ্ব ইজতেমায় যোগ দিতে বাংলাদেশ গিয়েছিলেন। ভারতে ফেরার পথে পশ্চিমবঙ্গের রানাঘাট স্টেশন তার সাথে ঘটে অপ্রীতিকর ঘটনা।

এমনটাই পুলিশে অভিযোগ করেছেন হুগলির বাসিন্দা রেজাউল ইসলাম (২৮)। তবে তিনি দমে থাকেননি। তিনি ট্রেনেই প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকী লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন রেল পুলিশের এবং স্থানীয় থানায়।

রেজাউলের অভিমত, আমাকে বাংলাদেশি বলে হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে। তার অভিযোগ, তাকে শারীরিক ভাবে আক্রান্ত করার চেষ্ট করে দুষ্কৃতকারীরা। কিন্তু ট্রেনের একাংশর জন্য প্রাণে বেঁচে ফেরেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশি হলেই তেড়ে যেতে হবে? এই পথ দিয়ে অনেক বাংলাদেশি ভারতে আসেন, তাহলে তাদের কি অবস্থা হবে? অবিলম্বে পুলিশকে এর ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছেন রেজাউল।

ঘটনার বিবরণে আক্রান্ত যুবক রেজাউল ইসলাম বাংলা নিউজকে জানিয়েছেন, তিনি বাংলাদেশের বিশ্ব-ইজতেমায় অংশ নিয়েছিলেন। মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) দর্শনা হয়ে গেদে দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন। সেখান থেকে সকালে প্রায় পৌনে ন'টার দিকে গেদে-শিয়ালদহ লোকাল ট্রেন ধরে বাড়ি ফিরছিলেন। আর সেই ট্রেনেই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার হন রেজাউল।

সেদিনের স্মৃতিচারণ করে বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রেজাউল বলেছেন, ওই ট্রেনে তারা চারজন ছিলেন। সকালের শুরুর দিকে ট্রেনের আসনগুলো ফাঁকা ছিল। সেই মোতাবেক তার সঙ্গে থাকা ট্রলি ব্যাগ এবং একটা ফ্লোডিং চেয়ার নিজের আসনের উপর বাঙ্কারে তুলে রাখেন। প্রথমদিকে ট্রেন ফাঁকা থাকলেও পরবর্তীতে রানাঘাট স্টেশন থেকে ট্রেনে প্রচুর যাত্রী উঠতে থাকেন। ফলে ভিড় জমতে শুরু করে। ওই ট্রেনের সকলেই ছিলেন নিত্যযাত্রী।

তারই মধ্যে কয়েকজন আমাকে দাড়ি টুপি পরা দেখে কটুক্তি করতে থাকে। অকথ্য ভাষায় সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক গালাগাল শুরু করে। তার কথায়, যাত্রী ভরতি ট্রেন থাকলেও উতক্ত্য করেন ১০-১২ জন যাত্রী। এবং তারা প্রত্যেকেই ডেলি প্যাসেঞ্জার। অভিযোগ, ঘুমন্ত রেজাউলকে দেখে তারা বাঙ্কার থেকে ট্রলি নামাতে বলে। তারই মধ্যে একজন বলে ওঠে, লোটা কম্বল থেকে বাংলাদেশ থেকে কেন এসেছিস? দখল করবি বলে? রেজাউল প্রতিবাদ গেলেই শুরু হয় বাকবিতণ্ডা।

এরপরই দাড়ি, টুপি, গলার রুমাল টেনে ছিঁড়ে দেওয়া হয়। একইসঙ্গে চলতে থাকে কিল, ঘুসি ও চড়। মাথার চুল, দাড়ির টেনে ছিঁড়ে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ রেজাউলের। সিট থেকে টেনে হিঁচড়ে তুলে নিয়ে ট্রেন থেকে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা হয়। তবে কিছু যাত্রীর বাধায় সেটা সম্ভব হয়নি। এই ঘটনায় রেজাউলের সাথে থাকা সদস্যরা ভয়ে হকচকিয়ে যায়। এরপর কিছু সহৃদয় যাত্রীর প্রতিবাদ ও বাধায় প্রাণে রক্ষা পায় হুগলির হরিপালের আক্রান্ত ওই যুবক রেজাউল ইসলাম।

রোজাউল জানান, ঘটনাটি ঘটেছিল প্রায় ২৫ মিনিট ঘরে। নদিয়ার পায়রাডাঙা থেকে মদনপুর এই চার স্টেশনের মধ্যে। এ নিয়েই পরদিন অর্থাৎ বুধবার আক্রান্ত রেজাউল যান শিয়ালদহ ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজারের (ডিআরএম) অফিস। সেখানে দোষীদের গ্রেপ্তার, কঠোর শাস্তি ও যাত্রীদের নিরাপত্তার দাবি জানানো হয়। পাশাপাশি রেল পুলিশ (আরপিএফ) এর অফিসেও একই দাবি নিয়ে যান তার সঙ্গে থাকা সমাজকর্মীরা। শিয়ালদহ জিআরপি থানায় একটি জিরো এফআইআর দায়ের করা হয়। রানাঘাট জিআরপিতে সেই সংক্রান্ত বিষয়টি জানানো ও তদন্ত করে দোষীদের খুঁজে বের করতে পুলিশ তৎপর হবে বলেও থানার পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

এ দিকে খোদ পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে চলন্ত ট্রেনের মধ্যে বাংলাদেশি তকমা, মারধর করা নিয়ে সরব হয়েছে বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তিত্ব। বিশ্বকোষ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নীলাদ্রি সেনগুপ্ত বলেছেন, রেজাউল ইসলাম শুধু আক্রান্ত হননি। পশ্চিমবঙ্গের প্রত্যেক শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ এই ঘটনায় কড়া ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

একইভাবে ভাঙড়ের বিধায়ক তথা আইএসএফ নেতা নওসাদ সিদ্দিকী সরব হয়েছেন। তিনি বলেছেন, রেজাউল ইসলামের দাড়ি আছে, মাথায় টুপি পরে আছেন, তাতেই তাকে বাংলাদেশি তকমা দিয়ে শারীরিকভাবে লাঞ্ছনার শিকার হতে হবে? দেশজুড়ে হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার যে চরম সাম্প্রদায়িক গরল উগরে চলেছে, যে ঘৃণার চাষ করে চলেছে, সেটা থেকে এই বাংলার মাটিও রেহাই পাচ্ছে না।

একইভাবে রেজাউলের পাশে দাড়িয়েছে বামমনস্ক, সমাজসেবী অরিন্দম চ্যাটার্জী।

তিনি বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গে এমনটা শোনা যায় না। তারউপর এই ঘটনা বাংলার লোকাল ট্রেনে। এই পথ ধরে বহু বাংলাদেশি আসা যাওয়া করে। তাহলে কি তারাও আগামীদিনে এই ঘটনার শিকার হবেন? ট্রেনে সাম্প্রদায়িক হামলা বিজেপির রাজনৈতিক বিদ্বেষ। এই ঘটনা নেতাদের সাম্প্রদায়িক ভাষণের ফল। এটি নিছক একটি ব্যক্তিগত আক্রমণ নয়, বরং সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়ানোর উদ্দেশ্যে পরিচালিত একটি ঘৃণ্য কার্যকলাপ। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই এবং প্রশাসনের কাছে অবিলম্বে এই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। তার অভিমত, পুলিশ চাইলেই দোষীদের সহজেই ধরতে পারে। কারণ তারা প্রত্যোেই নিত্যযাত্রী।

বাংলাদেশ সময়: ০২৪৬ ঘণ্টা, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
ভিএস/এমএম
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।