ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

শেষ হয়ে আসছে ম্যালেরিয়ার দিন!

স্বাস্থ্য ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫২৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৬, ২০১৭
শেষ হয়ে আসছে ম্যালেরিয়ার দিন! ম্যালেরিয়া আক্রান্ত শিশু ও পাশে মশার প্রতীকী ছবি

ম্যালেরিয়ার বাহক মশাকে দিয়েই রোগটির সম্পূর্ণ নির্মূলের চূড়ান্ত লক্ষ্যে সফলতা পেতে চলেছেন গবেষকরা। এক্ষেত্রে জেনেটিকালি মডিফাই বা জিএম মশা সৃষ্টি করে তাদের দিয়েই একটি নতুন ভ্যাকসিন বা টিকা তৈরি করেছেন তারা।

‘ট্রিপল নক-আউট গ্যাপ (GAP3KO)’ নামের নতুন এ টিকাটি ইতোমধ্যেই অত্যন্ত কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। মানুষের ওপর প্রথম প্রয়োগের পর ফলাফলের বিচারে সাফল্য দেখিয়েছে এটি।

গত সপ্তাহে ফেজ-১ এ ১০ জন সুস্থ স্বেচ্ছাসেবককে জিএম মশার কামড় খাওয়ানোর পর তাদের শরীরে টিকাটি প্রয়োগ করা হয়। গবেষণায় তাদের শরীরে শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ বা ইমিউন ক্ষমতা সঞ্চারিত হতে দেখেছেন চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা।  

GAP3KO টিকাটি মশার জেনেটিকালি ম্যালেরিয়া পরজীবী প্রকৌশলকে দুর্বল করতে তৈরি হয়েছে। বিজ্ঞানীরা মানুষের মধ্যে এ রোগ সৃষ্টির জন্য দায়ী তিনটি জিনে এটিকে সফলভাবে সংক্রমিত করে সেগুলোকে সরিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন। পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের কারো শরীরেই ম্যালেরিয়ার উপসর্গ উন্নত হতে পারেনি এবং সবাই শক্তিশালী প্রতিরক্ষামূলক অ্যান্টিবডি প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন।

বিজ্ঞান জার্নাল ও মেডিসিন সাময়িকীতে এ গবেষণার ফলাফল ঘোষণা করেছেন গবেষকরা। সেখানে তারা বলছেন, নতুন টিকা ম্যালেরিয়ার পরজীবী ধসার একটি সংস্করণ তৈরি করেছে, যা যকৃতে গুণকারকে অক্ষম। পরজীবী বাস্তব ম্যালেরিয়া জীবানুর মুখোমুখি হয়ে এটি থেকে রক্ষা করেছে। এর মানে হলো জিন স্থানান্তরের ফলে ম্যালেরিয়ার সংক্রমণ ব্লক হয়ে গেছে।

পরবর্তী ধাপে (ফেজ ১বি) অন্য প্রতিষেধক টিকা ব্যবহার করে ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে রাখা মানুষের ওপর এ টিকা প্রয়োগ করে পরীক্ষা চালানো হবে। আর মানুষের আগে পশুদের ওপর করা পূর্ববর্তী গবেষণায়ও দেখা গেছে যে, ম্যালেরিয়ার সম্পূর্ণ অনাক্রম্যতা জীবন্ত এ পরজীবী টিকা দ্বারা অর্জন করা যেতে পারে।

ম্যালেরিয়ার ঝুঁকিতে থাকা মানুষকে রক্ষায় বিপুল প্রচেষ্টা সত্ত্বেও এখনও বিশ্বের সবচেয়ে প্রাণঘাতী রোগ এটি। ২০১৫ সালে এক বছরেই ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হন ২১২ মিলিয়ন মানুষ, যার মধ্যে মারা যান ৪ লাখ ২৯ হাজার জন। তবে আশার কথা হচ্ছে,  ২০১০ সালের পর থেকে নেওয়া প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থাগুলো মৃত্যুর হার ২৯ শতাংশ হ্রাস করেছে।

কিন্তু চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা একমত হয়েছেন যে, কার্যকর ভ্যাকসিন ছাড়া এ রোগ সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করা যাবে না।

মশার প্রতীকী ছবি

বর্তমানে ম্যালেরিয়ার অনেকগুলো টিকা ব্যবহৃত হচ্ছে। কিন্তু সবচেয়ে উন্নত টিকাটিও (আরটিএস, এস /AS01) রোগের বিরুদ্ধে আংশিক সুরক্ষা প্রদান করে। এক্ষেত্রে ম্যালেরিয়া জিএম মশা থেকে সৃষ্ট টিকার শক্তিশালী কার্যকারিতার ফলাফল বিজ্ঞানীদের আশাবাদী করে তুলেছে যে, অচিরেই হয়তো আসবে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ যখন ম্যালেরিয়া ও এর উৎপাদক মশা প্রজাতিকে ঝেটিয়ে বিদায় করা সম্ভব হবে।

গবেষক দলের নেতা সেবাস্টিয়ান মিকোলাসজ্যাক বলেন, ‘আমরা প্রি-ক্লিনিক্যাল গবেষণায় ভালো ফলাফল পেয়েছি। এ নতুন ‘ট্রিপল নক-আউট  গ্যাপ (GAP3KO)’ ম্যালেরিয়ার প্রভাবক তিনটি জিনকে সম্পূর্ণরূপে ক্ষয়িত করতে সক্ষম হয়েছে। ক্লিনিক্যাল গবেষণাও দেখায় যে, GAP3KO টিকা ম্যালেরিয়া প্যারাসাইটের বিরুদ্ধে শক্ত সমর্থ লড়াই করে তাকে অনাক্রম্য করে ফেলতে পারবে’।

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের রবার্ট সেডের বলেন, ‘GAP3KO টিকায় শরীরে তৈরি জেনেটিকালি ক্ষয়িত এ প্লাজমোডিয়াম ফ্যালসিপেরাম পরজীবী নিরাপদ এবং মানুষের মধ্যে রোগ প্রতিরোধে ইমিউনোজেনিক ক্ষমতা তৈরি করবে। ফলে ভ্যাকসিনের উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় সেটি তুলনামূলক মাইলফলক বলে বিবেচিত হবে’।

বাংলাদেশ সময়: ১১১৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৬, ২০১৭
এএসআর/টিআই

 

 

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।