ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধে নীতিমালা হচ্ছে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসে

মাজেদুল নয়ন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০১৬
স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধে নীতিমালা হচ্ছে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসে

ঢাকা: অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহারে নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।   অদক্ষ চালক এবং মাইক্রোবাসের লাইসেন্স দিয়ে যাতে অ্যাম্বুলেন্স চলতে না পারে, সে বিষয়গুলো নীতিমালায় থাকছে।

অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার নীতিমালা খসড়া যাচাই-বাছাই করে দ্রুত সময়ের মধ্যে মন্ত্রিসভায় ওঠানোই এখন স্বাস্থ্য খাতের নীতিনির্ধারকদের লক্ষ্য।
 
সম্প্রতি ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে অদক্ষ চালকের কারণে অ্যাম্বুলেন্সের চাপায় দুই শিশু মৃত্যুর হৃদয়বিদারক ঘটনা নাড়া দেয় সকলকেই। এরপরই প্রশ্ন ওঠে যত্রতত্র অনুমোদনহীনভাবে অ্যাম্বুলেন্স সাজিয়ে মাইক্রোবাস চালানোর বিষয়টি।
 
অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) লাইসেন্স নিয়ে সাধারণ মাইক্রোবাস বা জিপ হয়ে ওঠে অ্যাম্বুলেন্স। বিষয়টির সঙ্গে কোন যোগসূত্র থাকে না স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের। এমনকি কি ধরনের যন্ত্রপাতি থাকা দরকার সেটিও দেখার কেউ নেই। শুধুমাত্র সামনে অ্যাম্বুলেন্স লিখে ও সাইরেন লাগিয়েই রোগী থেকে শুরু করে সাধারণ যাত্রী পরিবহন করছে এ যানগুলো। এছাড়া অসুস্থতার সময় মানুষের অসহায়ত্বকে জিম্মি করে মোটা টাকার ব্যবসা করে যাচ্ছে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী ও চালকেরা।
 
অ্যাম্বুলেন্সে আইসিইউর প্রয়োজনীয় সব চিকিৎসা উপকরণ থাকা প্রয়োজন বলে মনে করেন চিকিৎসকেরা। প্রয়োজনে প্রশিক্ষিত ডাক্তার, নার্স ও জীবন রক্ষাকারী ওষুধও থাকতে হবে। আর এসব সুবিধা থাকলেই একজন মুমূর্ষু রোগীকে হাসপাতালে আনার সময় পর্যন্ত বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব। কিন্তু দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল, ক্লিনিকে ব্যবহৃত সরকারি বা বেসরকারি বেশির ভাগ অ্যাম্বুলেন্সেই এসব সুবিধা নেই। দেশে জরুরি চিকিৎসা ব্যবস্থার নীতিমালা না থাকায় অ্যাম্বুলেন্স পরিচালনায়ও কোন নীতিমালা হচ্ছে না।
 
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, সম্প্রতি ‘অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার নীতিমালা’ এর একটি খসড়া তৈরি করেছে সরকার। আর দেশের সকল সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে অ্যাম্বুলেন্সের তালিকা পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। সরকারি হাসপাতালের অনেক কর্মচারীর বিরুদ্ধেও অবৈধভাবে অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
 
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বাংলানিউজকে বলেন, অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস নিয়ে কাউকে অমানবিক ব্যবসা করতে দেয়া হবে না। অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার নীতিমালার একটি খসড়া তৈরি করা হয়েছে এবং অ্যাম্বুলেন্স মালিকদের নিয়ে বেশ কয়েকটি আলোচনাও হয়েছে।
 
তিনি জানান, অ্যাম্বুলেন্সের সংখ্যা, প্রতিষ্ঠানের নাম ও গাড়ির নম্বর জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়ে এ বছরের শুরুতেই একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ইতোমধ্যে প্রায় ১ হাজার অ্যাম্বুলেন্সের তালিকা জমা পড়েছে। অতি পরিচিত প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকা সম্পন্ন করার পর ব্যক্তিমালিকানায় চালিত অ্যাম্বুলেন্সগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালিত হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তালিকার বাইরে এবং মানহীন অ্যাম্বুলেন্স রাস্তায় নামতে দেয়া হবে না বলে জানান মহাপরিচালক।
 
সরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসে ঢাকার মধ্যে ৩০ কিলোমিটারের জন্য সর্বনিম্ন ভাড়া ৩০০ টাকা। এরপর প্রতি কিলোমিটারের জন্য ১০ টাকা হারে ভাড়া দিতে হয়।
 
মঙ্গলবার সকালে ধানমন্ডির আনোয়ার খান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের খোঁজ নিলে কর্তৃপক্ষ জানান, এটি চালকের ওপর নির্ভর করে। মোহাম্মদপুরের বসিলা পর্যন্ত একজন গর্ভবতী নারীকে পরিবহনের জন্যে ২ হাজার টাকা দাবি করেন চালক।
 
জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর কর্মকর্তারা অ্যাম্বুলেন্স নিজেদের ব্যক্তিগত কাজেও ব্যবহার করে বলে অভিযোগ রয়েছে।
 
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক বাংলানিউজকে বলেন, অভিযোগ রয়েছে ব্যক্তিগত বাজার করা, বিয়ের অনুষ্ঠানের কাজে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার হয়। এসব সহ্য করা হবে না। আবার টায়ার নষ্ট হলেই ৬ মাস ধরে মেরামতের অভাবে পড়ে থাকে অ্যম্বুলেন্স। অথচ জনপ্রতিণিধিরাই পারেন এডিবি’র বরাদ্দ থেকে এটি সারিয়ে তুলতে।
 
প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরকারি পর্যায়ে যেসব অ্যাম্বুলেন্স দেয়া হয় এগুলোর দাম ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা। এমনি এমনি নষ্ট হতে দেয়া যায় না। অ্যম্বুলেন্স ব্যবহার নীতিমালা নিয়ে সোমবার স্বাস্থ্য খাতের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। যে খসড়াটি করা আছে সেটি নিয়ে দ্রুত আলোচনা করে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হবে এবং মন্ত্রিসভায় ওঠানো হবে।
 
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ফয়েজ আহমেদ বলেন, সোমবার একটি বৈঠকে অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহারে নীতিমালা চূড়ান্তের বিষয়ে কথা হয়েছে। বৈঠকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকও উপস্থিত ছিলেন। অদক্ষ চালকের হাতে যেন অ্যাম্বুলেন্স না যায় এবং সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবহারের বিষয়েও আলোচনা হয় ওই বৈঠকে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০১৬
এমএন/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।