ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

৩২ লক্ষ টাকা বিল!

যেদিন টাকা, সেদিন মরদেহ

মাজেদুল নয়ন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩২ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০১৪
যেদিন টাকা, সেদিন মরদেহ ইউনাইটেড হসপিটাল

ঢাকা: নিজ অবস্থানে অনড় রয়েছে বেসরকারি ইউনাইটেড হসপিটাল। বিল পরিশোধ না করলে মো. আসলামের মৃতদেহ হস্তান্তর করা হবে না।

মৃতদেহকে জিম্মি করে বিল আদায়ের অমানবিক কৌশলে অটল রয়েছে তারা।
 
আসলামের মেয়ে সাদিয়া ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, অনেক অনুরোধের পর কর্তৃপক্ষ এখন বলেছে আর ১৫ লাখ টাকা শোধ করলে লাশ দেওয়া হবে। এর আগে দিয়েছি ১২ লাখ টাকা। এতো টাকা এক দিনে কিভাবে জোগাড় করবো। শনিবার বিকেল পর্যন্ত আমাদের সময় বেধে দেওয়া হয়েছিল। এখন বলেছে, যেদিন টাকা দিতে পারবেন, সেদিন লাশ নিয়ে যাবেন।
 
মৃত মো. আসলামের চিকিৎসায় বেসরকারি ইউনাইটেড হসপিটালে মোট বিল হয়েছে ৩২ লাখ টাকা। লাইফসাপোর্টে থাকা অবস্থায় শুক্রবার বিকেল ৩টায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। এ পর্যন্ত বিল শোধ করা হয়েছে প্রায় ১৬ লাখ টাকা।

মৃতদেহ দাফন করতে বাড়িতে নিয়ে যেতে চায় পরিবার। তবে স্বজনদের বুকফাটা কান্নায়ও মন গলে না ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।
 
কর্তৃপক্ষের সাফ কথা, ‘বাকির নাম ফাঁকি।
 
তাই শনিবার বিকেলের মধ্যে ১৯ লাখ টাকা জোগাড় করে দিতে না পারলে লাশ দেওয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছিলো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। মৃত আসলামের মেয়ে সাদিয়াকে বলা হয়েছিলো, ‘যেখান থেকে পারুন টাকা নিয়ে আসুন। ’
 
কিন্তু ওই সময়ের মধ্যে টাকা জোগাড় করতে না পারায় মরদেও আর হস্তান্তর করা হয়নি।
 
মৃতের বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলা সদরেই। মেয়ে সাদিয়া শুক্রবার সন্ধ্যায় বাংলানিউজকে বলেন, লাংস ইনফেকশনের কারণে মো.আসলামকে দু’মাস আগে রাজধানীর ল্যাব-এইড হসপিটালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তাকে ভ্যান্টিলেশন দেয়া হয়।
 
ল্যাব এইড থেকে জুলাইয়ের ৩ তারিখে বারিধারার ইউনাইটেড হসপিটালে স্থানান্তর করা হয় আসলামকে। সেখানে তাকে করোনারিকেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) ভর্তি করা হয়। ডা. কায়সার নাসিরুল্লাহর তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নেন তিনি।
 
ভর্তির পর চিকিৎসক জানান, রোগীর অবস্থা ভাল নয়। তাই তাকে লাইফ সাপোর্টে ভ্যান্টিলেশনেই রাখতে হবে। তবে অবস্থার কোনউন্নতি হচ্ছিল না। মধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষে চিকিৎসাভার বহন দুঃসাধ্যের দিকে এগোতে থাকে। তারা রোগীকে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যেতে চান। তবে চিকিৎসক আশার বাণী শোনাতে থাকেন।
 
ভর্তির পর কয়েক ধাপে জুলাইয়ের ২৬ তারিখের মধ্যেই ১২ লাখ টাকা বিল পরিশোধ করে পরিবারটি। নিজেদের আর্থিক সামর্থ্য সহায় না হওয়ায় সেই সময়ই চিকিৎসককে আবারো রোগীকে রিলিজ করে দিতে অনুরোধ করেন তারা। তবে এবার চিকিৎসকে বলেন, আরো একটা সপ্তাহ দেখেন। এরপর থেকে বিলের ব্যাপারে আর নির্দিষ্ট করে কিছু বলেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। জানতে চাইলে, ‘খুব বেশি না’বলে এড়িয়ে গেছে। আশায় বুক বেধে স্বজনের সুস্থতার অপেক্ষা করতে থাকে পরিবার।
 
তবে ভেতরে ভেতরে হু হু করে বিল বাড়তে থাকে পাঁচ তারকা হাসপাতালটিতে। সবশেষ গত বৃহস্পতিবারও পরিবারটি চিকিৎসককে অনুরোধ করেন রোগীকে ছাড়তে। তবে এবার হাসপাতালের বিলিং সেকশন থেকে সাফ জানিয়ে দেয়া হয়, রোগীকে নিতে হলে ৩২ লাখ টাকা বিল পরিশোধ করে নিতে হবে। এছাড়া রোগীকে ছাড়া হবে না। মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে পরিবারের। ৩২ লাখ টাকা তাদের ভিটেমাটি বিক্রি করেও শোধ করা যাবে না।
 
দেহে প্রাণ থাকা অবস্থায় ইউনাইটেড হাসপাতাল থেকে ছাড় পাননি মো. আসলাম। মৃত্যুর পরেও বিল শোধ করতে না পারায় তার মৃতদেহ সৎকার করতে পারছে না পরিবার।
 
সাদিয়া বলেন, শেষ দিকে আমাদের আর বিলের ব্যাপারে কিছু জানানো হতো না। ওষুধের খরচগুলো আমরা নগদ অর্থেই শোধ করে দিতাম। আর রক্তের বিলও দিয়েছি ৩ লাখ টাকা। দুপুরে বাবা মারা যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই আমাদের হাতে ৩২ লাখ টাকার বিল ধরিয়ে দেওয়া হয়। বলা হয়, পুরো অর্থ পরিশোধ না করে এখান থেকে মৃতদেহ নেওয়া যাবে না। আমাদের অনেক অনুরোধের পর বাবার মৃতদেহকে গোসল করিয়েছে তারা। এবং কফিনে মুড়িয়ে রেখেছে। কান্না ধরে রাখতে পারেন না সাদিয়া।
 
সাদিয়া বাংলানিউজকে বলেন, অনেক অনুরোধের পর এখন মোট ২৭ লাখ টাকার কথা বলছে হাসপাতাল। আমাদের এখন আরো ১৫ লাখ টাকা জোগাড় করতে হবে। তা না হলে বাবার লাশ দেবে না বলে জানিয়েছে তারা।  
 
এ পর্যন্ত ১৫ লাখ টাকা বিল পরিশোধ করতে পারেনি পরিবারটি। আর তাই হাসপাতালের হিমাগারে রাখা হয়েছে আসলামের মৃতদেহ।
 
সাদিয়া অভিযোগ করে বলেন, বিলিং ম্যানেজার কাজী সেলিম জানিয়ে দিয়েছেন- এই অর্থও যদি পরিশোধ করতে না পারে পরিবার,তবে মৃতদেহ হস্তান্তর করা হবে না। যেখান থেকে পারুক, যেভাবে পারুক টাকা দিয়েই হাসপাতাল ছাড়তে হবে।
 
ইউনাইটেড হাসপাতালের জরুরি নম্বরে ফোন দিয়ে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ফোন কেটে দেওয়া হয়। হাসপাতালের জনংযোগ কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে বাংলানিউজকে অবহিত করেন। বিলিং ম্যানেজারের নম্বর চাইলে, তার কাছে নেই বলে জানান। তবে মোস্তাফিজুরের দেওয়া বিলিং সেকশনের মোবাইল নম্বরে বেশ কয়েকবার ফোন দিলেও রিসিভ করেননি কেউ।
 
মৃত্যুকালে আসলামের বয়স হয়েছিল ৫৪ বছর। তিনি এলাকাতেই ছোট ব্যাবসা করতেন।
 
** মরদেহ দিচ্ছে না ইউনাইটেড হসপিটাল

মরদেহ দিচ্ছে না ইউনাইটেড হসপিটাল


বাংলাদেশ সময়: ২০১৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০১৪/আপডেট:১১৩২ ঘণ্টা

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।