বেহুলার বাসর ঘর থেকে ফিরে: ঢিপিটা সমতল থেকে ১৩ মিটার উঁচু। যার পুরোটা বহন করে চলছে কেবল ধ্বংসাবশেষের স্মৃতিচিহ্ন।
ঢিপির চারপাশ ও চূড়া মিলে রয়েছে ১৭২টি কক্ষ। যার সবগুলোই বন্ধ। শুধু চূড়ার ওপরে মাঝ বরাবর খোলা রয়েছে চারকোণা আকৃতির একটি কক্ষ। যার ভেতরে রয়েছে একটি গভীর কূপ। গোলাকার এ কূপের পরিধি ৩ দশমিক ৮৮মিটার।

বগুড়া শহর থেকে ১০ কিলোমিটার উত্তরে ও মহাস্থানগড় থেকে ২ কিলোমিটার দক্ষিণে গোকূল গ্রামের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে ঐতিহাসিক বেহুলা-লক্ষীন্দরের বাসর ঘর। যা বেহুলার বাসর ঘর নামেই সর্বাধিক পরিচিত।
বাসর ঘরের ধ্বংসাবশেষ জুড়ে গজিয়ে উঠেছে সবুজ সবুজ ঘাস। লাগানো হয়েছে সৌন্দর্য্যবর্ধক সবুজ গাছপালা। সেগুলো সুন্দরভাবে ছেটে আর্কষণীয় করে তোলা হয়েছে। মাঝে মধ্যে শোভা পাচ্ছে বাহারি জাতের ফুল গাছ। ঋতুর সঙ্গে মিলে যাওয়া গাছগুলোয় ফুটেছে নানা জাতের ফুল। এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন জাতের গাছপালা। যা ছায়াময় করে তুলেছে পুরো এলাকা।

প্রবেশ পথ থেকে শুরু করে তৈরি করা হয়েছে কংক্রিটের রাস্তা। রাস্তাটি সোজা বেহুলা-লক্ষীন্দরের বাসর ঘরের সামনে গিয়ে শেষ হয়েছে। সেখান থেকে বাসর ঘরের চারপাশ ঘিরে রয়েছে চারকোণা আকৃতির রাস্তা। প্রবেশ পথে প্রধান ফটকের পশ্চিম পাশে রয়েছে টিকিট কাউন্টার।
লোকগাথা থেকে জানা যায়, চাঁদ সওদাগরের সবক’টি সন্তানকে একে একে কেড়ে নেন মা মনসা। অবশিষ্ট থাকেন শুধু লক্ষীন্দর। মা মনসা তাকেও কেড়ে নেওয়ার সময় বেঁধে দেন। তাও বাসররাতই হবে লক্ষীন্দরের জীবনের শেষ রাত। ভেবে কূল-কিনারা করতে পারছিলেন না চাঁদ সওদাগর। লক্ষীন্দরের জন্য কী করবেন চাঁদ সওদাগর?
শেষেমেষ লক্ষীন্দরের জন্য নির্মাণ করলেন নিশ্ছিদ্র শয়নকক্ষ। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হলো না তার। কোনো এক ফুটোপথে ঢুকে পড়লেন সাপের দেবী। পরে সুযোগ বুঝে লক্ষীন্দরের পায়ে দিল ছোবল। ঘটনা দেখার পর দিশেহারা স্ত্রী বেহুলা। মৃত স্বামীকে কলার ভেলায় তুলে কালিদহ সাগরের দিকে রওনা দেন বেহুলা...। সেই বেহুলা-লক্ষীন্দরের বাসর ঘর আজো দাঁড়িয়ে রয়েছে স্বস্থানে।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, গোকূল মেড় বা মেধ অথবা বেহুলা লক্ষীন্দরের বাসর ঘর নামের প্রত্নস্থানটিতে ১৯৩৪-৩৬ সালে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন করা হয়। পাওয়া যায় ১৩ মিটার উঁচু মঞ্চের ধ্বংসাবশেষ।
এ মঞ্চের সমতলের শীর্ষদেশে খ্রিষ্টীয় ৬-৭ শতকে প্রথম নির্মাণ যুগে একটি বৌদ্ধ উপাসনালয় নির্মিত হয়েছিল। এরপর সেন আমলে এ ধ্বংসাবশেষে একটি বর্গাকৃতির শিব মন্দির নির্মিত হয়েছিল। পরবর্তীতে এ মন্দিরের মেঝের উচ্চতা আরো বাড়ানো হয়।
এ মন্দিরের কক্ষ থেকে পাওয়া তথ্য-নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে একটি করে নরকঙ্কাল, ইটের নির্মিত গোলাকার গর্ত, শিলাখণ্ড, ষাঁড়ের প্রতিকৃতি উৎকীর্ণ স্বর্ণপত্র ইত্যাদি। অলঙ্কার কাজে মন্দিরে জ্যামিতিক নকশা,ফুল, লতাপাতা, অলঙ্কৃত ইট ব্যবহৃত হয়েছিলো।
এ পুরাকীর্তি সংরক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর। দফতরের পক্ষ থেকে স্থাপনাটি দেখ-ভালের জন্য এখানে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। তবে ঈদের ছুটিতে থাকায় কর্মকর্তাদের দেখা মেলেনি।
টিকিট বিক্রেতা নিজাম উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ‘সবকিছু ঠিকঠাক মতোই চলছে। কোনো সমস্যা হচ্ছে না। সমস্যা হলে কর্মকর্তাদের জানিয়ে দেবো। তারাই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন’।
বাংলাদেশ সময়: ০৮২৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৬
এমবিএইচ/এএসআর