পুরো গল্পটা আসবে ‘টাউন অ্যান্ড কান্ট্রি’ ম্যাগাজিনে এই সপ্তাহ শেষে। তাতে রানি এলিজাবেথ দ্য গ্রেট এর ৯০ বছর নিয়ে কাভার স্টোরি হচ্ছে।
রানির কুকুরেরা কীভাবে খায়, কিভাবে ঘুমায়, আর রানি সেগুলোর সঙ্গে কী সব করেন তা নিয়ে। জানিয়েছেন কুকুরগুলোকে নিয়মনীতির মধ্যে রাখতে বাকিংহাম প্যালেসে দায়িত্বরত ড. রজার মুগফোর্ড। বলেছেন, খাবারের সময় রানির প্রিয় করগিজ আর ডরগিজ খুব ভালো করেই জানে কোথায় বসতে হবে, বাধ্য কুকুরটি হয়ে ওরা বসে থাকে রানির আশেপাশে। আর ওদের একেকটির পছন্দ একেক খাবার। পছন্দমাফিক খাবারই দেওয়া হয়, আর জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে খাবার বিতরণ করা হয় কুকুরগুলোকে। অত্যন্ত আদব-লেহাজের সঙ্গে সেভাবেই খাবার খেয়ে নেয় কুকুরগুলো।

অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গেই তৈরি হয় সেসব খাবার, যার সঙ্গে হারবাল উপাদানও থাকে। ড. রজার মুগফোর্ড বলেন, ওদের খাবারগুলো রুপা আর চিনামাটির বাসন কোসনে পরিবেশিত হয়, আর তাতে নিযুক্ত রয়েছেন একজন বাটলার।
২০ বছর ধরে মুগফোর্ড এই রাজপ্রাসাদে কর্মরত। তিনি জানালেন, খাওয়ানোর দায়িত্ব রানি নিজেই পালন করেন। কুকুরগুলো যখন তার চারিদিকে আসন গেড়ে বসে তখন তিনি জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে একটি পর একটি কুকুরকে খাইয়ে দিতে থাকেন। একটির খাওয়া যখন চলে তখন অন্যগুলো চুপচাপ বাধ্য হয়ে বসে থাকে নিজ নিজ পালা আসার অপেক্ষায়।

রানির রয়েছে মোট ৪টি কুকুর। প্রচণ্ড তেজি জাতের হলেও তার করগিজ কিন্তু ভীষণ ‘বাধ্যগত’।
রানি তার প্রথম করগিটি উপহার পান ১৮তম জন্মদিনে। এরপর সেটি থেকে অসংখ্য কুকুরের জন্ম হয়েছে। কোনও কোনওটিকে ড্যাশহান্ডস জাতের সঙ্গে মিলন ঘটিয়ে তৈরি হয়েছে আরেকটি প্রজাতি, নাম ডরগিজ।
সেই থেকে এ পর্যন্ত রানির হাতে প্রতিপালিত হয়েছে মোট ৩০টি করগিজ। তার মধ্যে একসঙ্গে ছিলো সর্বোচ্চ ১৩টি। তবে এ মূহূর্তে সংখ্যা কমিয়ে করগিজের সংখ্যা দুটিতে নামিয়ে এনেছেন একটির নাম উইলো অন্যটি হোলি। দুটির বয়সই ১২ বছর। আর ডরগিজও রয়েছে দুটি। একটি ক্যান্ডি অপরটি ভালকান।

রানি অবশ্য ঠিক করেছেন, এ কুকুরগুলো মারা যাওয়ার পর আর কোনও কুকুর তিনি রাখতে চান না। কারণ নিজের মৃত্যুকালে একটিও প্রিয় পোষা প্রাণি রেখে যেতে চান না তিনি।
ড. মুগফোর্ড জানালেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে একসঙ্গে এতগুলো কুকুরের ওপর রানির নিয়ন্ত্রণ। ‘বিষ্ময়কর সে নিয়ন্ত্রণ! আর তা সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমি,’ বললেন তিনি।
ড. মুগফোর্ড বললেন, আমি অবশ্য কখনোই জানার সাহস করিনি করগিজ দুটি তার শয়নকক্ষেই ঘুমোয় কি না, কিন্তু সেটা যদি হয়েও থাকে তাকে বিষ্মিত হওয়ার কিছু থাকবে না।
কুকুরগুলোর যত্ন-আত্তি ঠিকঠাক হচ্ছে কি না, সে ব্যাপারে পুরো খেয়াল রাখেন রানি। সামান্য অবহেলাও সহ্য করেন না তিনি।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট লিনডন বি জনসন একবার তার কুকুরদের কানে ধরে ঝুলিয়েছিলেন, সে ঘটনায় ভীষণ ক্ষেপেছিলেন রানি।
পোষা কুকুরের কথা আর ঘোড়াগুলোর কথা বলতে গিয়ে রানির যে কি ভালো লাগে তা তার কথাগুলো শুনলেই বোঝা যায়।
কুকুর সবসময়ই সমতার পক্ষে, সামাজিক মান মর্যাদায় ওরা পাল্টে যায় না, এটাই রানির খুব ভালো লাগে। আর তিনি নিজেই ওগুলোর কাছাকাছি থাকতে পছন্দ করেন।
ড. মুগফোর্ড জানালেন, প্রায়শঃই রানি তাকে ডেকে পাঠান, বিশেষ করে করগিজরা নিজেদের মধ্যে মারামারি, কিংবা দুর্ব্যবহার করে বসে। তবে কুকুরগুলো যখন ঝগড়ায় জড়িয়ে যায় তখন রানি একটি বাঁশি বাজান। আর তাতেই ঝগড়া থেমে যায়।
রাজকীয় পাচক ড্যারেন ম্যাকগ্রাডি, ১১ বছর ধরে যিনি রানির বাড়ির রান্নাঘরের দায়িত্বে ছিলেন, জানালেন একদিন কুকুরগুলোকে সিদ্ধ স্টেক, বাধাকপি কুচি আর সাদা ভাত খেতে দেওয়া হয়। আর অন্যদিন মুরগির মাংস, সাথে কলিজা কিংবা খোরগোসের মাংস দেওয়া হয়।
প্রিন্স চার্লসের মতো রানিও হোমিওপ্যাথিক ওষুধের ভক্ত। সে কারণে করগিজগুলোর চামড়া একটু শুকিয়ে এলে দ্রুত হারবাল ওষুধ ব্যবহার করেন।
বাংলাদেশ সময় ১৬৩৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৬
এমএমকে