ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

বাঁশের তৈরি পণ্যের ‘সাপ্তাহিক মেলা’

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৫ ঘণ্টা, জুলাই ২, ২০২৪
বাঁশের তৈরি পণ্যের  ‘সাপ্তাহিক মেলা’ বাঁশের তৈরি পণ্যের পশরা সাজিয়ে বসে আছেন বিক্রেতা । ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: প্লাস্টিক আজ বাঁশের প্রতিদ্বন্দ্বী। কিছুতেই সে বাঁশকে অগ্রসর হতে দিচ্ছে না।

এসব ঠেলাঠেলিসূচক সময়ের প্রেক্ষাপটে বাঁশ যেন আজ পুরোপুরি পরাজিত। বাঁশের তৈরি নানা জিনিসপত্র আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। কিন্তু একটা সময় ছিল, যখন বাঁশের তৈরি নানা জিনিসপত্র আমাদের আবহমান বাংলার চির ঐতিহ্য ছিল। গ্রামীণ জীবনযাপনের সাথে ওতপ্রোতভাবে মিশে ছিল এসব তৈজসপত্র। সময়ের বিবর্তণে যা আজ অতীত।

জানা যায়, এক সময় দেশের জনপদে বাঁশ-বেত দিয়ে তৈরি হতো গৃহস্থালি ও সৌখিন পণ্যসামগ্রী। বাড়ির পাশের ঝাড় থেকে তরতাজা বাঁশ-বেত কেটে তৈরি করা হতো হরেক রকমের পণ্য। এসব নিজেদের ব্যবহারের পাশাপাশি, বাজারে বিক্রি করে চলতো তাদের জীবনযাপন। তবে এখনো গ্রামীণ উৎসব ও মেলাগুলোতে বাঁশ ও বেতের তৈরি খোল, চাটাই, খোলুই, ধামা, টোনা, মোড়া, দোলনা, বুক সেল্ফ কদাচিৎ চোখে পড়ে। তবে আশার কথা। এখনো দেশের কিছু কিছু স্থানে খুব স্বল্প সংখ্যায় এখনো টিকে আছে এই বাশের তৈরি নানান জিনিসপত্র।

‘টেংরাবাজার’ নামক গ্রামীণ এই বাজারটি আজও সেই ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছে। মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার এই বাজারটির যাত্রা শুরু হয়েছিল সেই বৃটিশ আমলে। সেই থেকে শতাধিক বছর ধরে প্রতিদিন লোকসমাগমে মুখর হয় টেংরাবাজার। নানা ধরনের নিত্য প্রয়োজনীয় আসবাব, তৈজসপত্রের সমাহার নিয়ে আজও আশেপাশের এলাকার সাধারণ মানুষের নিত্যদিনের অংশ হয়ে আছে এ বাজারটি।  

রাজনগরের ‘টেংরা’ ইউনিয়নে অবস্থিত ৪ দশমিক ৪৭৭ হেক্টর জায়গা নিয়ে বিস্তৃত এ বাজারটি। সপ্তাহের প্রতি রোববার টেংরাবাজারে এলে পাওয়া যায় পুরোনো সেই হাট বাজারের ছাপ। ছোট ছোট মুদির দোকান, তৈজসপত্রের দোকানকে ঘিরে দেখা মেলে গ্রামবাসীদের ব্যতিব্যস্ততা। এই বাজারে অনেকেই ছুটে আসেন বাঁশ, বেত, মাচা দিয়ে তৈরি কৃষি ও গৃহস্থালি কাজে তৈরি বিভিন্ন তৈজসপত্র। এসবের মধ্যে রয়েছে- টুকরি, মাছ ধরার চাঁই, সেঁওতি, বেতের মাচা, কাকরাইন, মাথার ছাতা, কোলা, ঝাকা, পাটি, মাছ ধরার ডরির মতো বিলুপ্তপ্রায় তৈজসপত্র অন্যতম।

সব মিলিয়ে বাঁশ-বেতের জিনিপত্রের চাহিদা কমে যাওয়ায় একদিকে যেমন সংকটে পড়েছেন কারিগররা অপরদিকে মানুষ হারাতে বসেছে প্রাচীন এই ঐতিহ্য। এভাবে প্রাচীন ঐতিহ্যগুলো হারিয়ে গেলে আগামী প্রজন্ম এগুলোর সম্পর্কে জানতে পারবে না। পর্যাপ্ত পরিমাণে বাঁশ-বেতের উৎপাদন বাড়িয়ে প্রাচীন ঐতিহ্যগুলো টিকিয়ে রাখা হোক এমনটাই দাবি সচেতন মহলের।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একসময় এ অঞ্চলের অনেক মানুষ বাঁশ-বেত দিয়ে বিভিন্ন ধরনের সামগ্রী তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু বর্তমানে বাঁশ-বেত ব্যাপকভাবে নেই বললেই চলে। এছাড়া তৈরি পণ্যের ন্যায্য মজুরিও পাওয়া যাচ্ছে না। উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণ ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাব এবং বাজারে প্লাস্টিক সামগ্রীর দাপটে চারুশিল্পের চাহিদা দিন-দিন কমে যাওয়ার কারণে হারিয়ে যেতে বসেছে বেত ও বাঁশের তৈরি চারুশিল্প।

রাজনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুপ্রভাত চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, সাপ্তাহিক বাজারের কথা আমি এই প্রথম শুনলাম আপনার কাছে থেকে। আমাদের এলাকায় এমন একটি বাঁশশিল্পের বাজার টিকে আছে সত্যি তা ভাবতে ভালো লাগছে। শিগগিরই আমি যাবো এবং এর সম্ভাবনা কিভাবে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলবো।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮২৫ ঘণ্টা, জুলাই ০২, ২০২৪ 
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।