ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

বগুড়ার ৪০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী মেলা ‘পোড়াদহ’

কাওছার উল্লাহ আরিফ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৪
বগুড়ার ৪০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী মেলা ‘পোড়াদহ’ ফাইল ফটো

বগুড়া: প্রতি বছর মাঘের শেষ অথবা ফাল্গুনের প্রথম বুধবার পোড়াদহ মেলা হয়। এর পরদিন একই স্থানে বসবে বউমেলা।

 প্রায় ৪০০ বছরের গ্রামীণ ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে বগুড়ার গাবতলী উপজেলার ইছামতি নদীর তীরে পোড়াদহ এলাকায় এ মেলার আয়োজন করা হয়।  
এ বছর মেলা হবে ফাল্গুনের প্রথম বুধবার অর্থাৎ ১৪ ফেব্রুয়ারি।  

মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) উপজেলার মহিষাবান ও পোড়াদহ গ্রামের প্রবীণ ইসমাইল হোসেন, সুফিয়ানসহ বেশ কয়েকজন ঐতিহ্যবাহী এ মেলা সম্পর্কে এমন তথ্য দেন।

স্থানীয়রা জানান, মেলা মানেই আনন্দ উল্লাসে মেতে ওঠা। নতুন জামাই-বউ ও স্বজনদের নিমন্ত্রণ জানানো। জামাইদের নিমন্ত্রণ দেওয়ার ক্ষেত্রে নতুন-পুরনো বিবেচনা করা হয় না। মেলা বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্যের অংশ। সেই ঐতিহ্য ধারণ করে সবাই মেতে ওঠেন বাধভাঙা উৎসব-উচ্ছ্বাসে।

জেলা শহর থেকে প্রায় ১১ কিলোমিটার পূর্বে ইছামতির তীরে পোড়াদহ এলাকায় এ মেলা বসে। ফলে মেলাটি সবার কাছে ‘পোড়াদহ’ মেলা নামেই সর্বাধিক পরিচিত।  

জনশ্রুতি আছে, প্রায় ৪০০ বছর আগে মেলাস্থলে ছিল একটি বিশাল বটবৃক্ষ। সেখানে একদিন হঠাৎ এক সন্ন্যাসী আসেন। পরে সেখানে আশ্রম তৈরি করেন সন্ন্যাসীরা। একপর্যায়ে স্থানটি পূণ্যস্থানে পরিণত হয় হিন্দু সম্প্রদায়ের জনগণের কাছে।

জানা যায়, প্রতি বছর মাঘের শেষ বুধবার ওই স্থানে সন্ন্যাসী পূজার আয়োজন করেন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন। কালের আবর্তে স্থানটিতে লোকজনের উপস্থিতি বাড়তেই থাকে। এতো লোকের সমাগম হওয়ায় বসতে থাকে নানা রকম সৌখিন ও প্রয়োজনীয় পণ্যের পসরা। এভাবে শুরু হয় পোড়াদহ মেলা। দিন দিন ধর্মের গণ্ডি পেরিয়ে সব ধর্মের মানুষের মেলবন্ধনে পরিণত হয় এ মেলা। মেলাটি একদিনের। তবে উৎসবের আমেজ থাকে সপ্তাহব্যাপী। নতুন জামাই-বউ ও স্বজনরা মিলে এ উৎসব করেন।

রকমারি জাতের মাছ এ মেলার প্রধান আকর্ষণ। বুধবার ভোরের আগেই আড়তে আনা হয় বড় বড় মাছ। আর ভোর থেকেই আড়তে আড়তে ছুটে যান খুচরা ব্যবসায়ীরা। চাহিদা অনুযায়ী তারা মাছ কেনেন। পরে মাছের পসরা সাজিয়ে বসেন ব্যবসায়ীরা। দিনভর চলে ধুমছে বেচাকেনা।

বাঘাইড়, রুই, কাতলা, মৃগেল, বোয়াল, সিলভার কার্প, বিগহেড, কালিবাউস, পাঙ্গাসসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পাওয়া যায় এ মেলায়। মেলায় দুই থেকে আড়াই মণ ওজনের বাঘাইড়ও পাওয়া যায়। পাওয়া যায়, ১৫-২০ কেজি ওজনের রুই, কাতলা, পাঙ্গাস।

এ মেলার আরেক আকর্ষণ বাহারি মিষ্টান্ন। মাছ আকৃতির মিষ্টি, রসগোল্লা, সন্দেশ, জিলাপি, নিমকি, তিলের নাড়ু, খই, শুকনা মিষ্টি পাওয়া যায়। দেড় থেকে দুই কেজি ওজনের মিষ্টি পোড়াদহ মেলার অন্যতম আকর্ষণ।

পোড়াদহ মেলায় বাহারি ডিজাইনের কসমেটিকস, খেলনা, উপহার সামগ্রী, চুড়ি, কানের দুল, মালা, কাজল, মেকআপ বক্স, ব্যাট, বল, ভিডিও গেমসসহ নানা ধরনের প্রসাধনী ও খেলনা সামগ্রী পাওয়া যায়। এছাড়া এ মেলায় পাওয়া যায় কাঠ, স্টিল ও লোহার বিভিন্ন আসবাবপত্র। মেলায় বাঁশের নানান সামগ্রীও পাওয়া যায়।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৪
কেইউএ/এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।