সম্প্রতি ওটিটি প্লাটফর্মে মুক্তি পাওয়া ওয়েব ফিল্ম ‘আমলনামা’ নিয়ে আলোচনার ঝড় চলছে। বলা হচ্ছে, ২০১৮ সালে র্যাবের কথিত ক্রসফায়ারে টেকনাফ পৌরসভার কাউন্সিলর একরামুল হকের নিহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে মুভিটি নির্মিত হয়েছে।
গত ১০ মার্চ প্রথম আলোর এন্টারটেইনমেন্টের ফেসবুক পেজ থেকে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনের একটি ফটোকার্ড পোস্ট করা হয়, যেখানে ‘আমলনামা’র পোস্টারের নিচে লেখা হয়, ‘অনেকে বলছেন কথিত বন্দুকযুদ্ধে টেকনাফের পৌর কাউন্সিলর একরামুল হক নিহত ওয়ার ঘটনা নিয়েই ‘আমলনামা’।
এরপর মুভিটি নিয়ে আরও অনেকে নানা অভিমত দেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে রিভিউ দেন, যেখানে কাউন্সিলর একরামুলের ঘটনাটির সঙ্গে মিল পাওয়ার কথা বলেন দর্শকরা।
প্রথম আলোর ফটোকার্ডটি নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট করে আয়েশা বেগম রায়হান রাফী ও প্রথম আলোর সমালোচনা করেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, সিনেমার এমন চিত্রায়ন হয়েছে, যেখানে একরামুল হককে অপরাধী এবং তার-স্ত্রী-সন্তানদের ইঙ্গিতে দোষারোপ করা হয়েছে।
আয়েশা লিখেছেন, ‘পরিচালক রায়হান রাফী একটি কাল্পনিক মুভি বানিয়েছে, “এই মুভিতে রায়হান রাফী নিজেই প্রথমে স্বীকার করেন যে, মুভিটির কোনো সত্যি ঘটনার সঙ্গে মিল নেই, তিনি তার মন মত করে কাল্পনিকভাবে এই মুভিটি বানিয়েছেন। আর আপনারা আজ এই মুভি দেখে আমাদের দোষারোপ ও লজ্জিত করছেন। আপনারা এই মুভিটা আমার স্বামীর ঘটনা বলে অপপ্রচার করছেন, আমার স্বামী কোনো প্রকার মাদকদ্রব্যের সঙ্গে জড়িত ছিল না। আমার স্বামীকে খুনিরা পরিকল্পিতভাবে এবং নির্মমভাবে হত্যা করেছে। আজ আপনারা এই মুভি দেখে আমার স্বামীর আসল ঘটনা বলে উল্লেখ করছেন। রায়হান রাফী যদি বলে যে এই মুভিটি একরামুল হকের সত্যি ঘটনার ওপর ভিত্তি করে বানানো হয়েছে, তাহলে তার বিরুদ্ধে মানহানি মামলা করতে বাধ্য হবো। আর আমি রায়হান রাফীকে বলবো ‘এই মুভিটি একরামুল হকের আসল ঘটনার সঙ্গে কোনো মিল নেই’—এই কথাটা সবার সামনে বলার জন্য অনুরোধ করছি। ”
প্রথম আলোর উদ্দেশে আয়েশা বেগম বলেন, “প্রথম আলো এই ঘটনাকে একরামুল হকের আসল ঘটনা বলে প্রচার করেছে, এই মুহূর্তে আমাকে ও আমার দুই মেয়েকে জাতির সামনে অপমান, লজ্জিত ও দোষারোপ করছে। আর পুরো জাতি জানে আমার স্বামী কোনোরকম মাদকদ্রব্য ও অন্যায় কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। তিনি মাদকের বিরোধিতা করেছিলেন, তাই খুনিরা আমার স্বামীকে অন্যায়ভাবে ও নাটকীয়ভাবে হত্যা করে। আমি প্রথম আলোকে বলব, তারা যা প্রচার করেছে তা ভুলবশত করেছে, যদি তারা তা স্বীকার না করে তাহলে আমি ও আমার দুই মেয়ে মিলে প্রথম আলোর বিরুদ্ধে মানহানি মামলা করতে বাধ্য হব। আমি প্রথম আলোকে অনুরোধ করছি যে, অতিশীঘ্রই এই ঘটনাটি ‘একরামুল হকের ঘটনার সঙ্গে কোনো মিল নেই’—এই কথাটি সবার সামনে বলার জন্য। ”
আয়েশার এই পোস্ট শেয়ার করে প্রবাসী অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের খান লিখেছেন, ‘আয়েশা বেগমের অভিযোগ গুরুতর, আশা করি রায়হান রাফী, এবং প্রথম আলো বিষয়টি স্পষ্টভাবে তুলে ধরবেন/সঠিক ব্যাখ্যা প্রদান করবেন’
সমালোচনা শুরু হলে রায়হান রাফী তার ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। এতে তিনি বলেন, “আমলনামা” কোনো নির্দিষ্ট ঘটনাকে কেন্দ্র করে নির্মাণ নয়, এটা সকল বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ডের প্রতিচ্ছবি। “আমলনামা” অনেকগুলো সত্য ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত একটি ফিকশন। প্রত্যেক বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ স্বরূপ এই সিনেমা।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৬ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০২৫
এইচএ/